ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকা

প্রকাশিত: ১২:১২, ২৫ আগস্ট ২০১৯

পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ভারতে পেঁয়াজের দাম বাড়ার প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের বাজারে। মাসখানেকেরও কম ব্যবধানে দেশীয় বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজের দাম বেড়েছে অন্তত ১০ টাকা। আর ভারতীয় পেঁয়াজের দাম বাড়ায় তার সরাসরি প্রভাব পড়েছে দেশী পেঁয়াজেও। পাইকারি বাজারে কেজিতে দেশী পেঁয়াজের দাম অন্তত ৫ টাকা বেড়েছে। বিক্রেতারা বলছেন, আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি ও মৌসুমের শেষদিকে এসে সরবরাহ কমায় সামগ্রিকভাবে এর বাজার বেড়েছে। রাজধানীর কাওরান বাজারের পাইকারি বাজার ও কয়েকটি খুচরা বাজার ঘুরে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে। কাওরান বাজারের পাইকারি বাজারে দেশী পেঁয়াজ ৪৮ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। ঈদের আগে তা ৩৬ থেকে ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। আর খুচরা বাজারে এখন দেশী পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়। আর ভারতীয় পেঁয়াজ পাইকারি বাজারে ৪৬ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে, ঈদের আগে যা ২৮ থেকে ৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হতে দেখা গেছে। পেঁয়াজের পাইকারি বিক্রেতা শরীফুর রহমান বলেন, দেশী পেঁয়াজের মৌসুম শেষ। তাই সরবরাহ কম। মোকামেই দাম বেশি। মোকামে বেশি থাকায় আমাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। আরেক বিক্রেতা বলেন, এখন ১৬শ’ থেকে ১৭শ’ টাকা মণে আমাদের পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে, ঈদের আগে এখন এর দাম ছিল ১২শ’ থেকে ১৩শ’ টাকা। এছাড়া, আগে এক বস্তা পেঁয়াজ আনাতে ৮০ টাকা খরচ হতো এখন ১শ’ টাকা খরচ হচ্ছে। এসব কারণেই দাম বেড়েছে। আরেক বিক্রেতা সেলিম বলেন, হঠাৎ করেই আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজের দাম কেজিতে অন্তত ১০ থেকে ১২ টাকা বেড়েছে। আর এর প্রভাবেই দেশী পেঁয়াজ কেজিতে বেড়েছে ৫ থেকে ৬ টাকা। পাইকারি বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ ঈদের আগে ৩২ টাকা কেজিতে বিক্রি হলেও এখন ৪৬ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে বলে জানান বিক্রেতা রাজা আলী। তিনি বলেন, ভারতীয় পেঁয়াজের আমদানি কম। তাই দাম বেশি। ভারতেই নাকি এখন পেঁয়াজের দাম বেশি। ঈদের আগে ২৮ থেকে ২৯ টাকা কেজিতে কিনে আনতাম। এখন কিনতে হচ্ছে ৪৩ থেকে ৪৪ টাকায়। ফলে আগের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। ভারতে বন্যায় হিলিতে বেড়েছে পেঁয়াজের দাম ॥ ভারতের কয়েকটি অঞ্চলে সৃষ্ট বন্যার কারণে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি কমে গেছে। ফলে প্রতিদিনই হু-হু করে দাম বাড়ায় অস্থির হয়ে উঠেছে ভারতীয় পেঁয়াজের বাজার। গত ৩-৪ দিনে দাম বেড়ে বন্দরের আড়তে নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যটি পাইকারি বেচাকেনা হচ্ছে ৩৩-৩৫ টাকায়। যা গত ১০-১২ দিনের ব্যবধানে কেজিতে বেড়ে গেছে ১৪-১৫ টাকা করে। ২১ আগস্ট বিকেল সোয়া ৪টা পর্যন্ত ভারত থেকে কোন পেঁয়াজ বোঝাই ভারতীয় ট্রাক বন্দর দিয়ে দেশে প্রবেশ করতে দেখা যায়নি। তবে অন্যান্য পণ্যবাহী ট্রাক আসা স্বাভাবিক ছিল। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারতের পেঁয়াজ উৎপাদন অঞ্চলগুলোতে সাম্প্রতিক বন্যায় পেঁয়াজের মাঠ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একারণে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় দেশে পেঁয়াজ আমদানি কমে যাচ্ছে। আবার ঈদ-উল-আজহার কারণে হিলি বন্দর ৮ দিন ধরে বন্ধ থাকায় দেশে একটুকুও পেঁয়াজ আমদানি হয়নি। সবমিলে দেশে ভারতীয় পেঁয়াজের সঙ্কট দেখা দেয়ায় দাম বাড়তে শুরু করেছে। বন্দরের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী মোর্শেদুর রহমান জানান, ভারতের মহারাষ্ট্র ও উত্তর প্রদেশসহ বিভিন্ন প্রদেশে বন্যা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে মহারাষ্ট্র ও উত্তর প্রদেশে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। কিন্তু চলতি মৌসুমে বন্যার কারণে ফসলের মাঠ ডুবে যাওয়ায় পেঁয়াজের আবাদ নষ্ট হয়ে গেছে। এজন্য সেখানে পেঁয়াজের সঙ্কট চলছে। দামও বেড়ে গেছে। মোর্শেদুর রহমান আরও জানান, গত মঙ্গলবার মহারাষ্ট্রের রফতানিকারক জমির খান আমাকে জানিয়েছেন পেঁয়াজ উৎপাদন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই বাংলাদেশে কম পরিমাণে পেঁয়াজ রফতানি করা যাবে, এজন্য দাম বেশি লাগবে। তিনি প্রতি কেজি ২৫ রুপী করে চেয়েছেন। এরপর ভারতীয় ট্রাকে করে সেখান থেকে আনতে প্রতি কেজিতে পড়বে ৬ রুপী। তাতে বাংলাদেশে আনতে (বাংলাদেশী টাকায়) ৩৮-৪০ টাকা খরচ হবে। বাধ্য হয়ে ওই দামে কিনতে হচ্ছে। তবে বেশি দামের পেঁয়াজ বাংলাদেশে আসতে এখনও ৩-৪ দিন সময় লাগবে। এদিকে হিলিতে পেঁয়াজ কিনতে আসা রংপুরের ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম জানান, গত রবিবার ৩১-৩২ টাকা দরে কিনেছি। মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) আবার ৩৫ টাকায় দাম উঠে। বেশি দামে কেনার কারণে বেশি দামে বিক্রি করতে হবে। এতে করে ভোক্তাদের সঙ্গে বচসা হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। আবার দেশীয় পেঁয়াজের সরবরাহও কমে আসছে। হিলি স্থল শুল্ক স্টেশনের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত রবিবার ২৩টি ট্রাকে ৫২১ টন, গত সোমবার ২০টি ট্রাকে ৪৭২ টন এবং মঙ্গলবার ১৭টি ট্রাকে ৩২৪ টন পেঁয়াজ এই বন্দরের মাধ্যমে আমদানি হয়ে দেশে আসে। বন্দরের আরেক ব্যবসায়ী আইয়ুব আলী জানান, অন্যান্য দিনের তুলনায় খুবই কম সংখ্যার পেঁয়াজ বোঝাই ট্রাক হিলি বন্দর দিয়ে দেশে আসছে। ঈদের পর থেকে এবং ভারতে বন্যার কারণে এ অবস্থা চলছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, বগুড়া, রংপুরসহ বিভিন্ন স্থানের ব্যবসায়ীরা এখান থেকে পেঁয়াজ কিনে নিয়ে যাচ্ছে। এ কারণে ধারণা করা হচ্ছে ভারতীয় পেঁয়াজের চাহিদা অনুযায়ী আমদানি হচ্ছে না। তাই বাজারে সরবরাহ কমে আসায় দাম বাড়ছে। ঈদের আগে এ মানের পেঁয়াজ ২০-২২ টাকায় বেচাকেনা হয়েছে।
×