ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভয়ে প্রজাতন্ত্রের অনেক কর্মচারী সম্পদের হিসাব জমা দেননি

প্রকাশিত: ১২:১৯, ২৫ আগস্ট ২০১৯

ভয়ে প্রজাতন্ত্রের অনেক কর্মচারী সম্পদের হিসাব জমা দেননি

তপন বিশ্বাস ॥ ভয়ে প্রজাতন্ত্রের অনেক কর্মচারী সম্পদের হিসাব জমা দিচ্ছেন না। দেশের ৪২ জেলার ভূমি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব পায়নি মন্ত্রণালয়। বাকি ১৯ জেলা ও বিভিন্ন অধিদফতরের কর্মচারীরা হিসাব জমা দিয়েছেন। তাদের সম্পদের হ্রাস-বৃদ্ধির হিসাব আপাতত বিশ্লেষণ করা হচ্ছে না। সংরক্ষণ করা হচ্ছে। সব হিসাব জমা হওয়ার পর তাদের সম্পদের চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হবে বলে জানালেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের কয়েক কর্মকর্তা। এদিকে সম্পদের হিসাব জমা দেয়ার ভয়ে চাকরি ছাড়ারও নজির সৃষ্টি হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ জেলার ভূমি অডিটর আসমা বেগম সম্পদের হিসাব বিবরণী জমা দেয়ার ভয়ে চাকরি থেকে স্বেচ্ছা-অবসর নিয়েছেন। এ সম্পর্কে ভূমি সচিব মোখলেছুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, আমরা ভূমি মন্ত্রণালয় ও এর অধীন বিভিন্ন অধিদফতরের কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব সময়মতো পেয়েছি। এ পর্যন্ত ১৯ জেলার হিসাবও চলে এসেছে। অবশিষ্ট জেলাগুলোর হিসাব হয়তো ডিসি অফিসে জমা হয়ে গেছে, শীঘ্রই পেয়ে যাব। আর সবার হিসাব বিবরণী জমা হওয়ার পর সম্পদের হ্রাসবৃদ্ধি বিশ্লেষণ করা হবে। কারও অর্জিত সম্পদ অবিশ^াস্য রকম বেশি হলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি ভূমি মন্ত্রণালয় ও এর অধীন সব দফতরের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীর সম্পদ বিবরণী জমা দেয়ার নির্দেশ জারি করে ভূমি মন্ত্রণালয়। গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত অর্জিত সম্পদ নির্ধারিত ছকে নিজ নিজ নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে জমা দেয়ার কথা ছিল। এই সময়ের মধ্যে দফতর-অধিদফতরের কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব বিবরণী জমা হলেও মাত্র ১৯ জেলার হিসাব বিবরণী জমা পড়েছে। তিন পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে ভূমি অফিস নেই। এই অবস্থায় পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য জরুরী বৈঠকেও বসেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। ভূমি সচিবের সভাপতিত্বে বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের একটি কল সেন্টার পরিচালনার নীতিমালা তৈরির জন্য কমিটি গঠন, ভূমি সেবা সপ্তাহ, অনলাইনে ভূমি খতিয়ান প্রকাশ, ভূমি তথ্যসংবলিত একটি বুকলেট প্রকাশের বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়। বৈঠকে যেসব জেলার হিসাব বিবরণী জমা হয়নি সেসব জেলা থেকে জরুরী ভিত্তিতে হিসাব বিবরণী সংগ্রহের জন্য মন্ত্রণালয়ের আইন অনুবিভাগকে দায়িত্ব দেয়া হয়। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব চাওয়ায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের জেলার ভূমি অডিটর আসমা বেগম সম্পদের হিসাব বিবরণী জমা দেয়ার ভয়ে চাকরি থেকে স্বেচ্ছায়-অবসর নিয়েছেন। চাকরি ছাড়ার আবেদনপত্রে ব্যক্তিগত কারণের কথা বলা হলেও তিনি অতিরিক্ত সম্পদ অর্জনের কারণে চাকরি ছাড়ার আবেদন করেছেন। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ভূমি সচিব বলেন, এ ধরনের ঘটনা ঘটলে তার বিরুদ্ধে তদন্ত করা হবে প্রয়োজনে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। কর্মকর্তারা আরও জানান, যেসব সংস্থার কর্মচারীদের কাছ থেকে সম্পদের হিসাব নেয়া হয়েছে সেগুলো হচ্ছে ভূমি সংস্কার বোর্ড, ভূমি আপীলবোর্ড, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদফতর, ভূমি প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, হিসাব নিয়ন্ত্রক (রাজস্ব) ও জোনাল সেটেলমেন্ট অফিস। এ ছাড়া ডিসি অফিসের এলএ এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের রাজস্ব দফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, মহানগর ভূমি অফিস কিংবা উপজেলা ভূমি অফিসে কর্মরত কানুনগো, সার্ভেয়ার, নামজারি সহকারী, অফিস সহকারী ও এমএলএসএসরা এই সম্পদের হিসাবের আওতায় আসছেন। সংশ্লিষ্টদের নির্ধারিত ছকে সম্পদের হিসাব জমা দিয়েছেন। ছকে কী আছে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, স্থাবর ও অস্থাবর দুই ধরনের সম্পদের তথ্য চাওয়া হয়েছে। স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে কৃষি ও অকৃষি জমি, ইমারত, বসতবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। অস্থাবর সম্পত্তির মধ্যে আছে অলঙ্কার, শেয়ার, বীমা, ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ, মোটরগাড়ি, কম্পিউটার, টেলিভিশন, এয়ারকুলার, রেফ্রিজারেটর ও ওভেন। এদিকে শুধু কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব চাওয়ায় সমালোচনার মুখে পড়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়। প্রশ্নের মুখে পড়েছে অন্যান্য মন্ত্রণালয়ও। বিশেষ করে, ক্যাডার নিয়ন্ত্রণকারী মন্ত্রণালয় হিসেবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে। প্রজাতন্ত্রের গণকর্মচারীদের বিষয়ে অভিন্ন আদেশ জারি করার দায়িত্ব এই মন্ত্রণালয়ের। সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, যেসব জেলা থেকে সংশ্লিষ্টদের সম্পদের হিসাব জমা হয়নি, দ্রুত সেসব জেলার সম্পদের হিসাব নেয়া উচিত। একই সঙ্গে এসব হিসাববিবরণী পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা নেয়া দরকার। আর শুধু কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব নেয়া হচ্ছে কেনÑ কর্মকর্তাদের সম্পদের হিসাব নেয়ার বিধানও রয়েছে। আইন সমানভাবেই প্রয়োগ করা দরকার। ১৯৭৯ সালের সরকারী কর্মচারী আচরণ বিধিমালা অনুয়ায়ী প্রত্যেক কর্মকর্তা-কর্মচারী চাকরিতে প্রবেশের সময় তার ও তার পরিবারের সদস্যদের দখলে থাকা স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির ঘোষণা দেয়া বাধ্যতামূলক। বিধিমালা অনুযায়ী প্রত্যেক সরকারী কর্মচারীকে প্রতি পাঁচ বছর পরপর সম্পদের হ্রাস ও বৃদ্ধি উল্লেখ করে সরকারের কাছে দাখিল করাও বাধ্যতামূলক।
×