ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বরিশালের ভাঙন কবলিত সন্ধ্যা নদীতে ফের বালু মহল ইজারা

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ২৫ আগস্ট ২০১৯

বরিশালের ভাঙন কবলিত সন্ধ্যা নদীতে ফের বালু মহল ইজারা

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ ভাঙন কবলিত জেলার বানারীপাড়া উপজেলার সন্ধ্যা নদীর আটটি পয়েন্টে বালু মহল ইজারা দেওয়ার নদীর তীরবর্তী কয়েক হাজার বাসিন্দা ও স্থানীয় সচেতন নাগরিকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বালু মহল ইজারা বন্ধ করা না হলে এনিয়ে নদীর তীরে যেকোন সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকা দেখা দিয়েছে। স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সন্ধ্যা নদী গর্ভে ইতোমধ্যে বিলীন হয়ে গেছে বানারীপাড়া উপজেলার বিস্তীর্ণ জনপদ। একমাত্র সম্বল ভিটে মাটি ও ফসলী জমি হারিয়ে নিঃম্ব হয়ে পরেছেন নদীর তীরবর্তী হাজারো পরিবার। অনিয়মতান্ত্রিক বালু উত্তোলনের ফলে গত কয়েক বছরে রাক্ষুসে সন্ধ্যা নদীর ভাঙন তীব্র রূপ ধারণ করে। বালু দস্যুদের কারনে ইতোমধ্যে সন্ধ্যা নদীর তীরবর্তী উপজেলার উত্তর ও দক্ষিণ নাজিরপুর, দান্ডয়াট, শিয়ালকাঠি, জম্বদ্বীপ, ব্রাক্ষ¥নকাঠী, কাজলাহার, ডুমুরিয়া, ইলুহার, ধারালিয়া, বাসার, নলশ্রী, মসজিদবাড়ি, গোয়াইলবাড়ি, খোদাবখসা, কালির বাজার, চাউলাকাঠি, মীরেরহাট ও খেজুরবাড়ি গ্রামের কয়েক হাজার একর ফসলি জমিসহ অসংখ্য বসতবাড়ি, রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভাট, স্কুল,কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদ ও মন্দিরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে চরম হুমকির মুখে রয়েছে-উপজেলার ইলুহার বিহারীলাল মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মীরেরহাট ও জম্বদ্বীপ সাইক্লোন শেল্টার। হুমকির মুখে রয়েছে খেজুরবাড়ি আবাসন ও উত্তর নাজিরপুর গুচ্ছগ্রাম। বালুউত্তোলনের কারনে ভেঙ্গেছে নদী, পুড়েছে কপাল, কাঁদছে হাজারো মানুষ। আর কপাল খুলে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন সুবিধাবাদী বালুখেকো ও স্বার্থান্বেষী মহল। বানারীপাড়া উপজেলায় সন্ধ্যা নদীতে মোট আটটি বালু মহল ইজারার পয়েন্ট রয়েছে। নদীর ভাঙনরোধে বালু উত্তোলণ বন্ধে উপজেলার ইলুহার গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য পরিমল জনস্বার্থে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে হাইকোর্টে (উচ্চ অদালতে) রিট পিটিশন দায়ের করেন। পরবর্তীতে বরিশালের জেলা প্রশাসক ও বানারীপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে নদীর ভাঙন রোধে কেন বালুমহল ইজারা দেওয়া বন্ধ করা হবেনা মর্মে জবাব চাওয়া হয়। হাইকোর্টের রিটের বিষয়ে নিষ্পত্তি না হওয়ায় গত দুই বছর ধরে বরিশালের অপর উপজেলাগুলোর সন্ধ্যাসহ অন্যান্য নদীতে বালুমহল ইজারা দেওয়া হলেও বানারীপাড়া উপজেলায় বালুমহাল ইজারা স্থগিত রাখা হয়। সম্প্রতি সময়ে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামিম বানারীপাড়ার সন্ধ্যা নদীর ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শণ করে ভাঙনরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন। এছাড়া স্থানীয় সংসদ সদস্য মোঃ শাহে আলমের নির্দেশে অবৈধভাবে বালুউত্তোলন বন্ধ থাকায় নদীর ভাঙন কিছুটা কমে আসে। এরইমধ্যে বালুদস্যুরা প্রশাসনের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে হাইকোর্টের রিট নিস্পত্তি করে পূনরায় বালুমহাল ইজারা নিয়েছে। সূত্রে আরও জানা গেছে, সন্ধ্যা নদীর ভাঙনরোধে জনস্বার্থে বরিশাল-২ আসনের সংসদ সদস্য মোঃ শাহে আলম বালু মহাল ইজারা না দেওয়ার জন্য ভূমি মন্ত্রী, পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও বরিশাল জেলা প্রশাসকের কাছে ডিও লেটার দিয়েছেন। ভূমি মন্ত্রী ওই ডিওলেটার পেয়ে জনস্বার্থে জরুরী ভিত্তিতে বানারীপাড়ার সন্ধ্যা নদীর বালু মহাল ইজারা দরপত্র বিজ্ঞপ্তি বাতিলের জন্য বরিশাল জেলা প্রশাসকের কাছে চিঠি পাছিয়েছেন। কিন্তু ভূমি মন্ত্রীর ওই চিঠি ও স্থানীয় সংসদ সদস্যর ডিও লেটার পাওয়ার পরেও গত ২০ আগস্ট সন্ধ্যা নদীর আটটি পয়েন্টে বালু মহাল ইজারা দেওয়া হয়েছে। স্থানীয়রা অবিলম্বে বালু মহাল ইজারা বন্ধের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এ প্রসঙ্গে বরিশালের জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান বলেন, ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে বালু মহল ইজারা বাতিল কিংবা বন্ধ করতে বলা হয়নি। এ সংক্রান্ত আইনানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। জনস্বার্থে প্রয়োজনে তদন্ত সাপেক্ষে বালু মহল ইজারা বাতিল করা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
×