শাহাব উদ্দিন মাহমুদ ॥ ১৯৭১ সালের ২৬ আগস্ট দিনটি ছিল বৃহস্পতিবার। এইদন নোয়াখালীর সোনাইছড়ি এলাকায় একটি ব্রিজে মুক্তিবাহিনী অভিযান চালিয়ে এক পাকসেনা ও ২ রাজাকার হত্যা করে। শিরনহাটে ৪টি পাকসৈন্যবাহী দেশী নৌকায় মুক্তিবাহিনী অতর্কিত আক্রমণ করে এবং ২টি নৌকা ক্ষতিগ্রস্ত করে। এতে ১০ জন আহত হয়। ফুলতলা-ভবানীপুর রাস্তা আক্রমণে ধ্বংস হয় এবং এর ফলে উত্তরবঙ্গের মধ্যে সড়ক যোগাযোগ ব্যাহত হয়। একই দিনে দঙ্গরহাট এলাকায় পাক অবস্থানে মুক্তিবাহিনী অভিযান চালিয়ে ২ পাকসেনা হত্যা এবং ৪ জনকে আহত হয়। ৭নং সেক্টরের ক্যাপ্টেন ইদ্রিস ও সুবেদার মজিদের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনীর দুটি দল পাকবাহিনীর শিবগঞ্জের কানসাট অবস্থানের ওপর আক্রমণ চালায়। ক্যাপ্টেন ইদ্রিস এবং সুবেদার মেজর মজিদ প্রায় দুই কোম্পানি মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে নদী পেরিয়ে মরিয়া হয়ে কানসাটে পাকসেনাদের ওপর আঘাত হানেন। মুক্তিবাহিনীর তীব্র আক্রমণে পাকসেনারা কানসাট ছেড়ে চলে যায়। মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানী বাহিনীকে ধাওয়া করে প্রায় শিবগঞ্জ পর্যন্ত অগ্রসর হয়। কিন্তু অল্প সময়ের ব্যবধানে পাকসেনারা পাল্টা আঘাত শুরু করে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকেও পাকসেনারা আর্টিলারি সাহায্য নিয়ে অগ্রসর হতে থাকে। ব্যাপক গোলাবর্ষণের মুখে মুক্তিবাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়। এক সময় পাকসেনাদের আক্রমণের মাত্রা এতই তীব্র হয় যে, মুক্তিবাহিনী প্রায় ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে। পাকসেনারা কানসাটের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। এ সংঘর্ষে সুবেদার মেজর মজিদসহ ১৪ জন মুক্তিযোদ্ধা গুরুতরভাবে আহত হয় এবং প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র ও হারাতে হয়। রাজশাহী জেলার দুর্গাপুরে হাবিলদার শফিকের দল অতর্কিতভাবে পাকসেনা কর্তৃক আক্রান্ত হয়। মুক্তিযোদ্ধারা মর্টার ও হাল্কা মেশিনগানের সাহায্যে পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে নিরাপদে নিজ অবস্থানে ফিরে আসে। আইয়ুব আলীর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধা দল ভালুকা থানায় পাকসেনাদের মল্লিকবাড়ি ঘাঁটির ওপর অতর্কিত আক্রমণ চালায়। এই আক্রমণে ৮ জন পাকসেনা নিহত ও অনেকে আহত হয়। মিলিশিয়া ও রাজাকার বাহিনীর একটি বিরাট দল আমিনবাজার থেকে আমিশাবাজারের দিকে অগ্রসর হচ্ছে এ খবর পাবার পর মুক্তিফৌজ তাদের চতুর্দিক দিয়ে ঘেরাও করার পরিকল্পনা করে। সুবেদার ওয়ালী উল্লাহকে ত্রিমুখী আক্রমণ করার নির্দেশ দেয়া হলে শত্রুরা আমিনবাজারের দিকে অগ্রসর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সুবেদার ওয়ালী উল্লাহ ত্রিমুখী আক্রমণ শুরু করে। ফলে শত্রুরা পেছনে হটতে থাকলে, মুক্তিফৌজের অপর একটিদল পেছন থেকে আক্রমণ শুরু করে। চারদিকে থেকে আক্রমণ চলতে থাকলে শত্রুরা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে। এদিকে জনসাধারণও ছত্রভঙ্গ হয়ে চারদিকে দৌড়াদৌড়ি করতে থাকে। ফলে মুক্তিফৌজের পক্ষে গুলি করা বিরাট প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়। এ সুযোগে শত্রুরা হাতের অস্ত্র ফেলে জনসাধারণের মধ্যে মিশে যায় এবং অনেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। ছয়জন রাজাকার নিহত হয় ও কয়েকজন আহত হয়। মুক্তিফৌজ উক্ত ছয়জন রাজাকারের লাশ কাচিহাটিতে দাফন করে। রাজাকার মাওলানা মিজানুর রহমান অক্ষত অবস্থায় অস্ত্রসহ মুক্তিফৌজের হাতে ধরা পড়ে। তার নিকট থেকে পাক বাহিনীর অনেক গোপন তথ্য সংগ্রহ করা হয়। পরে তাকে হত্যা করে তারও দাফনের ব্যবস্থা করা হয়। এখানে কয়েকটি চীনা রাইফেলও মুক্তিফৌজের হস্তগত হয়। মুক্তিবাহিনী ছাগলনাইয়া থানায় পাকবাহিনীর আমজাদহাট প্রতিরক্ষাব্যূহের ওপর মর্টার আক্রমণ চালায়। মুক্তিযোদ্ধাদের চাপের মুখে পাকসেনারা মুহুরী নদী পার হয়ে খাদ্যদ্রব্য ও অস্ত্রশস্ত্র ফেলে পিছু হটতে বাধ্য হয়। ফেনীতে মুক্তিবাহিনী পাকসেনাদের ৬টি নৌকাকে ব্রাহ্মণপাড়ার কাছে তীব্র আক্রমণ চালায়। এতে কয়েক পাকসেনা নিহত হয়। বাকি সৈন্যরা কয়েকটি নৌকায় পালাতে গেলে নাগাইশে সুবেদার নজরুলের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনী তাদের ওপর আক্রমণ রচনা করে। এতে ১৮ জন পাকসেনা নিহত হয়। এই যুদ্ধে গেরিলাযোদ্ধা আবদুল মতিন শহীদ হন। সকালে পাকসৈন্য বহন করা এক নৌকা কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া থেকে ধান্দাইলয়ের দিকে রেকি করার জন্য আসছিলো। তখন মুক্তিফৌজ তাদের ওপর অতর্কিত হামলা করলে একজন অধিনায়কসহ দশ জন পাকিস্তানী সৈন্য নিহত হয়। একই দিনে মুক্তিফৌজ আরও প্রাণশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। মুক্তিফৌজ শত্রুপক্ষের কাছে খাবার এবং গোলাবারুদ সরবরাহ প্রায় অসম্ভব করে দিয়েছিল। মন্দভাগ থেকে দুটি নৌকায় করে অস্ত্র এবং গোলাবারুদ নিয়ে আসার সময় অতর্কিত হামলা করে ১২ জন পাকিস্তানী সৈন্য হত্যা করা হয়। সকালে নয়নপুর থেকে মন্দভাগে রেশন এবং গোলাবারুদ সরবরাহ করার জন্য চেষ্টা করলে তাদের দুটি নৌকা ডুবিয়ে দেয় মুক্তিফৌজ এবং সেখানে ১৪ জন পাকিস্তানী সৈন্য নিহত হয়। একই দিন সকাল প্রায় ১১টার দিকে মৃতদেহ উদ্ধার করার জন্য আরও দুটি নৌকায় করে পাকিস্তানী সৈন্য এলে আগে থেকে এ্যামবুশ করে থাকা মুক্তিফৌজ তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তাতে পেছনের নৌকাটি পালিয়ে যেতে পারলেও সামনের নৌকাটিকে ডুবিয়ে দেয়া হয় এবং এতে ৫ জন পাকিস্তানী সৈন্য নিহত হয়। মুক্তিফৌজ পাকসেনাদের আরও একটি রেশন ও গোলাবারুদ সরবরাহ বানচাল করে দেয়। শত্রুপক্ষ ৪টি নৌকায় করে রেশন এবং গোলাবারুদ নিয়ে এবং একটি নৌকা তাদের পাহারা দিয়ে ব্রাহ্মপাড়া থেকে নয়নপুরের দিকে আসার চেষ্টা করলে আগে থেকেই ওঁৎপেতে থাকা নাগাইশ মুক্তিফৌজ তাদের ওপর হামলা করে। এতে শত্রু পক্ষের ৩টি নৌকা ডুবে যায় এবং বিশজন শত্রুসৈন্য নিহত হয়। সর্বশেষে পশ্চিম দিক থেকে ২টি নৌকা মৃতদেহ সংগ্রহ করতে এলে, তারা মুক্তিফৌজের ফায়ারিং রেঞ্জের ভেতরে থাকায় আরও ৬ জন পাকিস্তানী সৈন্য ঘটনাস্থলে মারা যায়। আগরতলা যুব ক্যাম্প থেকে ৬০ জন তরুণ প্লেসি ক্যাম্পে কমান্ডো ট্রেনিংয়ে যোগদান করেছিল। পশ্চিমবঙ্গের ১২০ জন তরুণ যুব ক্যাম্প থেকে প্লেসি ক্যাম্পে যোগদান করে। এইদিন চার থেকে বিশ জনের ছোট ছোট গ্রুপ করে নাশকতা ও ধ্বংসাত্মক অপারেশন পরিচালনার জন্য বাংলাদেশের রণাঙ্গনে প্রেরণ করা হয়। স্থানগুলো হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর, বরিশাল, মংলা, আরিচা, সিলেট, নগরবাড়ী, মাদারীপুর, নারায়ণগঞ্জ, চাঁদপুর, মাগুরা, দাউদকান্দি, ফুলছরিঘাট, খুলনা, রাজশাহী, ভোলা, নরসিংদী, নবীনগর, রাজবাড়ী, অষ্টগ্রাম ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নদীবন্দর। তারা তাদের নির্ধারিত স্থানে অপারেশন পরিচালনা করে সময়মতো প্লেসি ক্যাম্পে ফেরত আসে। পাকশীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ধ্বংসের পদক্ষেপও নেয়া হয়। একটি অপারেশনে ৪ জনের একটি কমান্ডো গ্রুপ রাজাকারদের হাতে ধরা পরে এবং তাদের নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়। অমানুষিক অত্যাচারেও নতুন ট্রেনিংপ্রাপ্ত কমান্ডোরা তাদের পরিচয় প্রকাশ করেনি। পরে তারা মুক্তি পায়। ফরিদপুর অপারেশনে শহীদ কবির উজ্জামান পাঞ্জাবীদের হাতে নিহত হন। চট্টগ্রাম বন্দরে একজন সদস্য নিখোঁজ হন। তখন তিনি বহির্নোঙ্গর এলাকায় অপারেশনে নিয়োজিত ছিলেন। ফুলছরিঘাট অপারেশনে একটি চলন্ত গানবোটে মাইন স্থাপন করতে গিয়ে এ আর মিয়ানসহ ৩ জন নিহত হন। টাঙ্গাইল শহরের তিন মাইল দূরে জলপাই গ্রামে কাদেরিয়া বাহিনীর সঙ্গে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে একজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং একজনকে পাকহানাদাররা ধরে নিয়ে যায়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি আবদুস সাত্তার রাওয়ালপিন্ডিতে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সঙ্গে সাক্ষাত করেন। পাকহানাদাররা ‘শিল্পরক্ষী বাহিনী’ নামে একটি বাহিনী গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়। এ বাহিনী গঠনের উদ্দেশ্য হচ্ছে- পূর্ববাংলায় ক্ষীণ হলেও যেটুকু শিল্প বিকশিত হয়েছে তা ধ্বংস করা। এই দিন পাকিস্তানকে দেয়া সব ধরনের সাহায্য বন্ধের জোর দাবি জানালেন ইউএস সিনেটররা। ভারত ও বাংলাদেশের সীমান্তের রিফিউজি ক্যাম্পে সপ্তাহব্যাপী পরিদর্শন শেষে সিনেটর এ্যাডওয়ার্ড কেনেডি পাকিস্তানের প্রতি ইউএস পলিসির তীব্র সমালোচনা করে বলেন, ‘পশ্চিম পাকিস্তানে সরবরাহ করার জন্য আর কোন ইউএস অস্ত্রের চালান থাকলে তা এখনই আমাদের বন্ধ করতে হবে। মনুষ্যত্বের মৌলিক নীতিকে যে সরকার নিয়মিত লঙ্ঘন করছে সে সরকারকে দেয়া সব ধরনের অর্থনৈতিক সাহায্য আমাদের বন্ধ করতে হবে।’ ‘সিনেটর কেনেডি যিনি জুডিসিয়ারি সাব-কমিটি অন রিফিউজিসের চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট আমেরিকানদের জন্য বিশেষভাবে বেদনাদায়ক হবে কারণ ‘আমাদের মিলিটারি হার্ডওয়্যার, আমাদের অস্ত্র, আমাদের ট্যাঙ্ক, আমাদের বিমানগুলো যেগুলো বেশ কয়েক যুগ ধরে তাদের দেয়া হয়েছে সেগুলোই এই দুর্দশা বৃদ্ধির জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী।’ তিনি আমেরিকানদের প্রতি জোড় দাবি জানান যে, এমন কোন শাসকদের সাহায্য না করতে যারা নীতি বিবর্জিত এবং যাদের কারণে তার নিজ দেশের মানুষদের সারা পৃথিবীজুড়ে প্রাণ দিতে হচ্ছে। ম্যাসাচুসেটস সিনেটর এটিকে ‘বতর্মান সময়ের মানুষের দুর্দশার সবচেয়ে বেদনাদায়ক নিদর্শন’ আখ্যায়িত করে তিনি আমেরিকানদের বুঝতে বলেছিলেন যে, কোন ব্যাপারটি বাংলাদেশে এমন ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের মূলে জড়িত। দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্ক্সবাদী কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি ভারত-সোভিয়েত মৈত্রী চুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে চীনের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি সাধনের জন্য অনুরূপ চুক্তি সম্পাদনের আহ্বান জানিয়েছেন। অপর এক প্রস্তাবে সব রকম দ্বিধা-দ্বন্দ্ব পরিহার করে অবিলম্বে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতেও আহ্বান জানিয়েছেন। স্বাধীন বাংলা বেতারের খবরে জানা যায়, রেডিও পাকিস্তান মারফত সরকারী মহল কথিত গণপ্রতিনিধিদের সর্বপ্রকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। অথচ নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে এই দেশবাসীর প্রতি দায়িত্ব পালনের জন্যই ১৯৭০ সালের নির্বাচনে তারা বাংলাদেশের গণপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছিলেন। আর এ জন্যই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে বাংলার মানুষ নিঃশব্দ ব্যালট বিপ্লবের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের শিরদেশে পড়িয়ে দিয়েছিল ইতিহাসের নজিরবিহীন নির্বাচনী বিজয়ের গৌরবময় শিরোপা। দিনটি ছিল ৩ জানুয়ারি ১৯৭১ সাল। বাংলার উন্মুক্ত আকাশের নিচে শীতার্ত দিনের শেষ প্রহরে স্নিগ্ধ সূর্যালোক-স্নাত সুবিশাল রেসকোর্সের জনারণ্য আর ওপরে জাগ্রত বিধতাকে সাক্ষী রেখে সেদিন বাংলাদেশের গণপ্রতিনিধিরা শপথ নিয়েছিলেন। এক হাত বুকের ওপর রেখে আরেক হাত উর্ধে তুলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে গণপ্রতিনিধিরা বিবেকের নামেই ওয়াদা করেছিলেন : ‘জীবনের বিনিময়ে হলেও আমরা আমাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে যাব।’ শেখ মুজিব সেদিন বাংলার মানুষকে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় নির্দেশ দিয়েছিলেন; যদি কেউ এই শপথ ভঙ্গ করে, যদি কোন গণপ্রতিনিধি তোমাদের বিশ্বাস ও আস্থার অমর্যাদা করে, দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়- তাকে জ্যান্ত কবর দিও। এমনকি এ রকম যদি আমি করি- আমাকেও তোমরা রেহাই দিও না।
লেখক : শিক্ষাবিদ ও গবেষক
[email protected]