ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

স্টোকস বীরত্বে ইংল্যান্ডের ইতিহাস গড়া জয়

প্রকাশিত: ১০:৪৪, ২৬ আগস্ট ২০১৯

স্টোকস বীরত্বে ইংল্যান্ডের ইতিহাস গড়া জয়

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ ক্রিকেট গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা। এ জন্য যুগে যুগে এর আবেদন এত বেশি। ক্রিকেট মাঝে মাঝে এমন সব ম্যাচের জন্ম দেয় যার বর্ণনায় অবিশ্বাস্য, রুদ্ধশ্বাস, নাটকীয়তা শব্দগুলোকেও বড্ড ম্লান বলে মনে হয়। তেমনি এক অবিস্মরণীয় ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে ১ উইকেটে হারাল ইংল্যান্ড। পরিসংখ্যানের পাতায় তো তাই লেখা থাকবে। তবে হেডিংলি টেস্টে ইংলিশদের জয়ের নায়ক স্টোকস। বলতে গেলে এক হাতেই কাজটা করেছেন তিনি। জয়ের জন্য দ্বিতীয় ইনিংসে প্রয়োজন ছিল ৩৫৯ রান। রবিবার চতুর্থদিন চা-বিরতির পর ৯ উইকেট হারিয়ে ইংল্যান্ড করে ৩৬২। নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে এটিই তাদের সবচেয়ে বেশি রান চেজ করে জয়ের রেকর্ড। তাও আবার প্রথম ইনিংসে ৬৭ রানে অলআউট হওয়ার পর। টেস্টে ১৩১ বছরে ৭০ রানের নিচে গুটিয়ে গিয়ে ম্যাচ জয়ের মাত্র দ্বিতীয় উদাহরণ এটি। ২৮৬ রানে নবম উইকেট পড়ার পর শেষ জুটিতে জ্যাক লিচকে নিয়ে অবিচ্ছিন্ন ৭৬ রানের জুটি গড়েন স্টোকস। যেখানে লিচের অবদান মাত্র ১। ৩৩০ বলে ১১ চার ও ৮ ছক্কায় ১৩৫ রানে অপরাজিত ইংলিশদের জয়ের নায়ক স্টোকস। অথচ প্রথম ইনিংসে মাত্র ৬৭ রানে অলআউটের লজ্জায় পড়েছিল ইংল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ ছিল ১৭৯ ও ২৪৬। টেস্ট ইতিহাসে চতুর্থ ইনিংসে সাড়ে তিন শ’ বা তার বেশি রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড মাত্র ১০টি। সেই তালিকায় ইংল্যান্ডের নাম ছিল না। আর যদি শুধু এ্যাশেজের কথা হিসেব করা হয় তাহলে সাড়ে তিন শ’ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড সাকুল্যে একটি। সেটি প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়ার। কিন্তু এত সহজেই ছেড়ে দেয়ার পক্ষপাতী নয় ওয়ানডের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। ম্যাচের চতুর্থদিনের প্রথম সেশনে অন্তত সে কথারই জানান দিচ্ছিলেন দুই ব্যাটসম্যান জনি বেয়ারস্টো এবং বেন স্টোকস। এ দুই মারকুটে ব্যাটসম্যানের কাঁধে চড়ে অবিশ্বাস্য এক জয়ের পথে এগোয় ইংল্যান্ড। তৃতীয়দিন শেষে ৩ উইকেটে ১৫৬ রান করে ফেলে স্বাগতিকরা। শেষ দুইদিনে তাদের বাকি থাকে ২০৩ রান, হাতে ছিল ৭ উইকেট। অধিনায়ক জো রুট ৭৫ রানে অপরাজিত থাকায় স্বস্তিতেই ছিল ইংলিশরা। কিন্তু রবিবার চতুর্থদিন সকালে ষষ্ঠ ওভারেই অধিনায়ক ৭৭ রানে আউট হলে চাপে পড়ে স্বাগতিকরা। তবে এরপরও ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নিয়ে নিয়েছিলেন বেয়ারস্টো এবং স্টোকস। লাঞ্চের আগে ৪ উইকেটে ২৩৮ রান তুলে ফেলে ইংল্যান্ড। ইতিহাস গড়া জয়ের জন্য ৬ উইকেট হাতে নিয়ে তখন প্রয়োজন ছিল মাত্র ১২১ রান। ৩৬ রান করা বেয়ারস্টোর পর বাটলার (১) ওকস (১) সহসা ফিরলে ফের চাপে পড়ে ইংল্যান্ড। আর্চার করেন ১৫ রান। তবে ঠিকই ইতিহাসটা গড়েন স্টোকস। যে ইতিহাসে ১৭ বল খেলে ১ রানে অপরাজিত থাক লিচের অবদানও কম নয়। উল্লেখ্য, এজবাস্টনের প্রথম টেস্টে ওয়ানডের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের ২৫১ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল সফরকারী টিম পেইনের অস্ট্রেলিয়া। লর্ডসের দ্বিতীয় ম্যাচ ড্র হয়। দুর্দান্ত এ জয়ে পাঁচ টেস্টের এ্যাশেজে ১-১এ সমতায় ফিরল জো রুটের ইংল্যান্ড। ওল্ডট্র্যাফোর্ডে ৪ সেপ্টেম্বর শুরু চতুর্থ টেস্ট। স্কোর ॥ অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংস ॥ ১৭৯/১০ (৫২.১ ওভার; ওয়ার্নার ৬১, হ্যারিস ৮, খাজা ৮, লাবুশানে ৭৪, হেড ০, ওয়েড ০, পেইন ১১, প্যাটিনসন ২, কামিন্স ০, লেয়ন ১, হ্যাজলউড ১*; ব্রড ২/৩২, আর্চার ৬/৪৫, স্টোকস ১/৪৫) ও দ্বিতীয় ইনিংস ॥ ২৪৬/১০ (৭৫.২ ওভার; হ্যারিস ১৯, ওয়ার্নার ০, খাজা ২৩, লাবুশানে ৮০, হেড ২৫, ওয়েড ৩৩, পেইন ০, প্যাটিনসন ২০, কামিন্স ৬, লেয়ন ৯, হ্যাজলউড ৪*; আর্চার ২/৪০, ব্রড ২/৫২, স্টোকস ৩/৫৬)। ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংস ॥ ৬৭/১০ (২৭.৫ ওভার; বার্নস ৯, রয় ৯, রুট ০, ডিনলে ১২, স্টোকস ৮, বেয়ারস্টো ৪, বাটলার ৫, ওকস ৫, আর্চার ৭, ব্রড ৪*, লিচ ১; কামিন্স ৩/৩৩, হ্যাজলউড ৫/৩৩, প্যাটিনসন ২/৯) ও দ্বিতীয় ইনিংস ॥ ৩৬২/৯ (১২৫.৪ ওভার; বার্নস ৭, রয় ৮, রুট ৭৭, ডিনলে ৫০, স্টোকস ১৩৫*, বেয়ারস্টো ৩৬, বাটলার ১, ওকস ১, আর্চার ১৫, ব্রড ০, লিচ ১*; হ্যাজলউড ৪/৮৫, লেয়ন ২/১১৪)। ফল ॥ ইংল্যান্ড ১ উইকেটে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ বেন স্টোকস ( ইংল্যন্ড)। সিরিজ ॥ পাঁচ টেস্টের এ্যাশেজ ১-১এ চলমান।
×