ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কর্মচারী নির্ভর যশোর ইনস্টিটিউটে বিশৃঙ্খলা

প্রকাশিত: ০২:২৫, ২৮ আগস্ট ২০১৯

কর্মচারী নির্ভর যশোর ইনস্টিটিউটে বিশৃঙ্খলা

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ শিল্প সংস্কৃতি শিক্ষা ও ক্রীড়া বিকাশের কেন্দ্র হিসেবে ১৯২৮ সালে গড়ে ওঠে যশোর ইনস্টিটিউট। গঠনের পর দীর্ঘসময় ধরে এসব কিছুর উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখে প্রতিষ্ঠানটি। তবে প্রায় দেড় বছর ধরে নেতৃত্ব শূন্য থাকায় ভেঙে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটির প্রশাসনিক কাঠামো। ফলে যশোর ইনস্টিটিউটের কর্মকান্ডে স্থবিরতা বিরাজ করছে। বলতে গেলে একপ্রকার মুখ থুবড়ে পড়েছে গণোন্নয়নমূলক এ প্রতিষ্ঠানটি। শুধুমাত্র পাবলিক লাইব্রেরি ছাড়া ইনস্টিটিউটের অন্য চারটি বিভাগ নাট্যকলা, শিশু চিত্তবিনোদন কেন্দ্র ও ক্রীড়া বিভাগের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচন বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে কোনো ধরনের প্রশাসনিক তৎপরতা না থাকায় প্রতিষ্ঠানটিতে চলছে চরম বিশৃঙ্খলা। সেইসাথে চলছে অনিয়ম আর দুর্নীতি। দেখভালের অভাবে প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি দখল হয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি ইনস্টিটিউটের বিভিন্ন সম্পত্তি থেকে অর্জিত আয়ের টাকাও ঠিকমতো প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংক হিসাবে জমা পড়ছে না। এখানে কর্মরতদের অনেকেই নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত প্রধান কার্যসহকারী শওকত আহমেদ ইনস্টিটিউটের বিভিন্ন সম্পত্তি থেকে আয়ের অর্থ নিয়মমাফিক ব্যাংক তহবিলে জমা করছেন না। তবে বিভিন্ন খাত থেকে প্রতিষ্ঠানের আয়ের টাকা নিয়মমাফিক ব্যাংক হিসাবে জমা না দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছন শওকত আহমেদ। তিনি জানান, প্রতিষ্ঠানের অর্জিত আয় নিয়মানুযায়ী ব্যাংক হিসাবে জমা করা হচ্ছে। সেখান থেকে কর্মীদের বেতনসহ প্রতিষ্ঠানের আনুষঙ্গিক ব্যয়নির্বাহ করা হচ্ছে। ‘আমার পেছনে কিছু লোক লেগে গেছে। তারাই এসব কথা বলছে’- এমনটাই দাবি করেন তিনি। জানা যায়, ২০১৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ছিল যশোর ইনস্টিটিউট পরিচালনা পর্ষদের ত্রিবার্ষিক নির্বাচন। কিন্তু নির্বাচনের কিছুদিন আগে যশোর ইনস্টিটিউটের সংবিধানে সদস্য পদ, সদস্য চাঁদা, কোরাম, নির্বাচনে অংশগ্রহণে সদস্যদের যোগ্যতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আনা সংশোধনী নিয়ে আদালতে একটি মামলা দায়ের হয়। এরপর মামলার একটি শুনানিতে সংবিধানে আনা সংশোধনীর উপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করেন আদালত। যার কারণে নির্বাচনের ঠিক আগের রাতে ভোট বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়। এক গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে নির্বাচন স্থগিত করে জেলা প্রশাসন। পরবর্তীতে ইনস্টিটিউটের দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি দুই মাসের মধ্যে পুনরায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য একজন প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হয়। ওই বছরে মার্চের ৮ তারিখে যশোরের তৎকালীন জেলা প্রশাসক ও পদাধিকারবলে ইনস্টিটিউটের সভাপতি আশরাফ উদ্দিন এক অফিস আদেশের মাধ্যমে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (সার্বিক) এ কাজের দায়িত্ব দেন। কিন্তু এরপর এক বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। ফলে দীর্ঘদিন ধরে নেতৃত্ব শূন্যতার কারণে প্রতিষ্ঠানটির সাংগঠনিক কাঠামো পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। একমাত্র পাবলিক লাইব্রেরি ছাড়া এর অন্য চারটি বিভাগ বন্ধ হয়ে গেছে। কারণ এসব বিভাগ পরিচালনার জন্য বর্তমানে কোন কমিটি না থাকায় সেখানে কোন ধরণের কর্মকান্ডও নেই। যশোর ইনস্টিটিউট সূত্র জানায়, বিভিন্ন বিভাগ পরিচালনার জন্য নির্বাচিতদের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের সদস্যদের নিয়ে বিভাগীয় কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সদস্যরা সংশ্লিষ্ট বিভাগের কার্যক্রম পরিচালনা করেন। কিন্তু ভোট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পরিচালনা পর্ষদসহ বিভিন্ন বিভাগীয় কমিটি বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ায় কার্যত নেতৃত্ব শূন্য হয়ে পড়েছে যশোর ইনস্টিটিউট। ফলে এসব বিভাগগুলোতে বর্তমানে আর কোন কর্মকান্ড নেই। জানা গেছে, কারো কাছে জবাবদিহি করার কোন ব্যাপার না থাকায় প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয়ে কর্মরতরা এখন আর ঠিক মতন অফিস করছেন না। কাজে গাফিলতি করছেন। সঠিক সময়ে অফিসে আসছেন না। এখানে কর্মরতদের অধিকাংশই বেশিরভাগ সময় ব্যক্তিগত কাজে বাইরে সময় কাটান বলে কর্মীদের অনেকের অভিযোগ রয়েছে। ফলে কার্যালয়টি বেশির ভাগ সময় শূন্য পড়ে থাকছে। যশোর ইনস্টিটিউটের সংস্কার ও উন্নয়ন প্যানেলের নেতা ডা. আবুল কালাম আজাদ লিটু জানিয়েছেন, ইনস্টিটিউটের বিভিন্ন সমস্যা ও সংকট নিয়ে আজ-কালই জেলা প্রশাসকের সাথে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। বৈঠকে আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য জোর দাবি জানাবো। যোগাযোগ করা হলে যশোরের জেলা প্রশাসক ও পদাধিকার বলে যশোর ইনস্টিটিউটের সভাপতি মোহাম্মদ শফিউল আরিফ জানান, প্রতিষ্ঠানটির সংবিধান সংশোধন নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা নিরসনের জন্য দ্রুতই সব ধরণের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইনস্টিটিউটে বিরাজমান সব সংকট নিরসনের জন্য ইতিমধ্যে কাজও শুরু করেছেন। শিগগিরই ইনস্টিটিউট সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের সাথে বৈঠকে মিলিত হবেন তিনি।
×