ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এনামুল হক

অভিবাসী বিরোধিতায় ট্রাম্প

প্রকাশিত: ০৯:২২, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯

অভিবাসী বিরোধিতায় ট্রাম্প

সম্প্রতি মিসিসিপির গ্রামীণ এলাকায় ৭টি পোল্ট্রি প্ল্যান্টে হানা দিয়ে ৬৮০ জন অভিবাসী শ্রমিককে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় যাদের অনেকেই নাকি অনিবন্ধিত এবং সে হিসেবে বেআইনী অভিবাসী, যেভাবে তাদের ধরা হয়েছে ও আটক রাখা হয়েছে তা ট্রাম্প প্রশাসনের বর্ণবাদ, মিথ্যাচার, ভ-ামি ও গবিবের প্রতি ঘৃণাবোধের নিখুঁত প্রতিচ্ছবি। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে এই অভিযানের পরিকল্পনা করা হয় এবং তাতে মার্কিন ইমিগ্রেশন এ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের কমপক্ষে ৬শ’ এজেন্ট ও হেলিকপ্টার অংশ নেয়। অস্ত্রধারী এজেন্টরা ৬৮০ জন অভিবাসী শ্রমিককে ধরে পিঠমোড়া করে বেঁধে অপেক্ষমাণ বাসগুলোতে নিয়ে তুলে। এদের প্রায় সবাই ছিল লাতিনো এবং অনেকেই মহিলা। বাবা-মাদের ধরে নিয়ে প্রাইভেট প্রিজনগুলোতে পাঠানোর সময় তাদের বাচ্চা ছেলেমেয়েরা পোল্ট্রি খামারগুলোর বাইরে জড়ো হয়। অন্যরা ডে কেয়ার সেন্টারগুলোর ক্লাসে বসে থাকে। তারা জানতে পারেনি কিভাবে তাদের পরিবারগুলো ছিন্নভিন্ন হয়ে যাচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মিসিসিপি অভিযানের জন্য দুঃখ প্রকাশ করা দূরে থাক বরং সন্তোষ প্রকাশ করেছেন এবং বলেছেন যে এতে করে অনিবন্ধিত অভিবাসীদের আমেরিকায় চাকরি নেয়া থেকে নিবৃত্ত করবে। পোল্ট্রি শ্রমিকদের গ্রেফতার করা হয়েছে বটে তবে এখনও পর্যন্ত তাদের কেউ দোষী সাব্যস্ত হয়নি। অন্যদিকে ট্রাম্প প্রশাসনের বক্তব্য হচ্ছে অনিবন্ধিত অভিবাসীরা বিপজ্জনক পরজীবী যাদের দেয়ালের ওপারে রেখে দেয়া উচিত। নির্বাচনী প্রচারের সময় ট্রাম্প বলেছিলেন, মেক্সিকো সরকার তাদের সবচেয়ে অবাঞ্ছিত লোকজনকে জোর করে যুক্তরাষ্ট্রে ঠেলে দিচ্ছে যারা অনেক ক্ষেত্রেই অপরাধী, মাদক ব্যবসায়ী, ধর্ষণকারী ইত্যাদি। কিন্তু ওয়াশিংটন পোস্টসহ অন্যরা বলেছে যে, স্বদেশজাত আমেরিকানদের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রে আগত অভিবাসীদের অপরাধ করার সম্ভাবনা কম। মার্কিন অর্থনীতির ক্ষতি তো তারা করছেই না বরং তারা এই অর্থনীতির অপরিহার্য অংশে পরিণত হয়েছে। অভিবাসী শ্রমিক না থাকলে যুক্তরাষ্ট্রের শিল্পকারখানায় এবং প্রাণীজ খাদ্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াকরণ ব্যবস্থায় ধস নেমে আসবে। মিসিসিপিতে গ্রেফতারকৃত অভিবাসী শ্রমিকরা ঘণ্টায় প্রায় সাড়ে ১২ডলার করে আয় করছিল। অথচ ১৯৭০-এর দশকে আইওয়া ও কলোরাডোতে মিটপ্যাকিং শ্রমিকদের মজুরি ছিল ঘণ্টায় প্রায় ৫০ ডলার। এদের কাজ ঝুঁকিপূর্ণ। জখম হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। ব্যাকটেরিয়া সংক্রমিত হওয়ার ব্যাপার তো আছেই। পোল্ট্রি শ্রমিকরা শ্বাসপ্রশ্বাসের রোগ, রাসায়নিক দহন, হাড়ভাঙ্গা, চোখের ক্ষতি, বিষাক্ত গ্যাসের শিকার প্রভৃতি সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকে। বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট থাকাকালে তার প্রশাসনও বিপুল সংখ্যক অনিবন্ধিত অভিবাসীকে আমেরিকা থেকে বের করে দিয়েছিলেন। তবে ইমিগ্রেশন এ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) এজেন্টদের প্রতি তার সুস্পষ্ট নির্দেশ ছিল তারা যেন ঢাকাওভাবে ধরপাকড় না করে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সেই ধারা থেকে সরে এসেছেন। গত ২১ আগস্ট তার প্রশাসন এমন পরিকল্পনা প্রকাশ করে যার ফলে অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আসা অনিবন্ধিত পরিবারগুলোকে শিশুসহ অনির্দিষ্টকাল ধরে আটক রাখা যাবে। অনিবন্ধিত অভিবাসীদের ধরার জন্য ট্রাম্প প্রশাসন কর্মস্থলকেই উপযুক্ত ক্ষেত্রে হিসেবে বেছে নিয়েছে। মিসিসিপিতে যে ধরপাকড় অভিযান চালানো হয় তা ছিল ২০১৮ সালের এপ্রিল থেকে কর্মস্থলে পরিচালিত সপ্তম অভিযান। এসব অভিযানের ফলে আমেরিকা থেকে বের করে দেয়া লোকজনের সংখ্যা বাড়ছে। অভিবাসনবিরোধী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আগামীতে যে আরও কঠোর ভূমিকা নিতে যাচ্ছেন এই অভিযান থেকে তারই একটা সঙ্কেত পাওয়া যায়। সূত্র : দ্য ইকোনমিস্ট ও অন্যান্য
×