ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

লঘুমাত্রার পরমাণু অস্ত্রের দিকে ঝুঁকছে আমেরিকা

প্রকাশিত: ০৯:২৩, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯

লঘুমাত্রার পরমাণু অস্ত্রের দিকে ঝুঁকছে আমেরিকা

পারমাণবিক যুদ্ধের ঝুঁকি সংক্রান্ত বিতর্কে নতুন করে ইন্ধন লেগেছে। এর পেছনে আছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পারমাণবিক নীতি। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলে পরমাণু অস্ত্রের ভূমিকা হ্রাস করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তাঁর উত্তরসূরি করেছেন ঠিক উল্টোটি। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রকাশিত পারমাণবিক নীতির পর্যালোচনায় ট্রাম্প যে প্রেক্ষাপটে আমেরিকা প্রথম পরমাণু অস্ত্র প্রয়োগ করতে পারে সেটাকে প্রসারিত করে তার মধ্যে শত্রুপক্ষের সাইবার হামলাকেও অন্তর্ভুক্ত করেছেন। তিনি নতুন স্বল্পশক্তির পরমাণু বোমা তৈরিরও নির্দেশ দিয়েছেন যা হবে হিরোশিমা বোমার অর্ধেক শক্তিসম্পন্ন। সমালোচকদের আশঙ্কা এসব বোমা ব্যবহৃত হওয়ার সমধিক সম্ভাবনা আছে। উত্তর কোরিয়াকে তিনি এমন সব হুমকি দিয়েছেন যা কিনা রীতিমতো লোমহর্ষক। ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী মিজ এলিজাবেথ ওয়ারেন গত জানুয়ারি মাসে সিনেটে একটি বিল উত্থাপন করেন যার উদ্দেশ্য হচ্ছে আমেরিকা প্রথম পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করবে না এমন এক বাধ্যবাধকতার ব্যবস্থা রাখা। এ ধরনের অঙ্গীকার কয়েক দশক আগে ভারত ও চীন করেছে। সোভিয়েত ইউনিয়নও করেছিল। কিন্তু আমেরিকা ৭ দশক ধরে করেনি। ‘প্রথম পরমাণু অস্ত্রের ব্যবহার নয়’ এমন বক্তব্যের যারা প্রবক্তা তাদের যুক্তি হলো কোন সংঘর্ষে আমেরিকার প্রথম পরমাণু অস্ত্রের আঘাত হানা প্রয়োজনও নয়, বিচক্ষণতারও পরিচয় নয়। প্রয়োজন নয় এই কারণে যে মার্কিন সশস্ত্র বাহিনী এতই শক্তিশালী যে পরমাণু অস্ত্রের ব্যবহার ছাড়াই তারা শত্রুদের পরাজিত করতে সক্ষম। বিচক্ষন নয় এই কারণে যে আমেরিকার যেসব প্রতিপক্ষ আশঙ্কা করে যে যুক্তরাষ্ট্রে তারা তাদের পরমাণু অস্ত্র যে কোন মুহূর্তে ছোড়ার মতো চরম সতর্কাবস্থায় রাখবে এমন সম্ভাবনাই বেশি এবং তাতে করে অননুমোদিতভাবে বা দুর্ঘটনাক্রমে কেউ পরমাণু বোমা ছুড়ে বসতে পারে। প্রতিপক্ষ আরও দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে আমেরিকার কিছু বুঝে ওঠার আগেই আগেভাগে তার ওপর এই বোমা ছুড়তে প্রলুব্ধবোধ করে। আমেরিকার অবস্থা চীন বা ভারতের মতো নয়। বরং তাদের থেকে ভিন্ন। আমেরিকা শুধু নিজেকে রক্ষা করতেই সক্ষম নয়, উপরন্তু সারা বিশ্বে তার মিত্রদের ওপর সুরক্ষামূলক পারমাণবিক ছত্রছায়া বিস্তার করতেও সক্ষম। উত্তর কোরিয়া যদি তার বিশাল বাহিনী নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় হামলা চালায় তাহলে দেশটিকে এই সম্ভাবনার কথাও মাথায় রাখতে হবে যে আমেরিকা তখন তার ওপর পারমাণবিক হামলা চালাতে পারে। প্রেসিডেন্ট ওবামা তার শাসনামলে আমেরিকা প্রথম পরমাণু অস্ত্র প্রয়োগ করবে না এমন এক অঙ্গীকার ঘোষণার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তখন ব্রিটেন, জাপান, ফ্রান্স ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো মার্কিন মিত্ররা যারা অধিকতর শক্তিশালী ও জনবহুল শত্রুর সম্মুখীন তারা লবিং করে সাফল্যের সঙ্গে এই উদ্যোগ ব্যর্থ করে দেয়। ‘প্রথম পরমাণু অস্ত্র নয়।’ এই কৌশলের সমালোচকরা অপারমাণবিক অস্ত্রের ক্রমবর্ধমান শক্তিক্ষমতার কথাও উল্লেখ করে থাকেন। আমেরিকার মতো চীন ও রাশিয়াও হাইপারসোনিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করছে যেগুলো শব্দের গতির চেয়ে ৫ গুণ বেশি গতিতে মহাসাগরগুলো অতিক্রম করতে সক্ষম। এগুলোর কোন কোনটি তাদের কাইনেটিক এনার্জি বা গতিবিষয়ক শক্তির চেয়ে অতিরিক্ত আর কিছু ছাড়াই টার্গেট ধ্বংস করতে সক্ষম। এটমকে বিভাজন না করেও রাসায়নিক ও জীবাণু অস্ত্র ব্যাপক প্রাণহানি ঘটিয়ে দিতে পারে। এত কিছুর পরও ওয়ারেনের প্রস্তাবের পরিণতি কি হতে পারে তা অনুমান করা যায়। এ নিয়ে জোর আলোচনা হবে, হৈচৈ হবে। কিন্তু মার্কিন সরকারকে দিয়ে এমন ঘোষণা কিছুতেই দেয়ানো যাবে না। যে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করবে না। ভোটারদের কাছ থেকেও রাজনীতিকরা সুস্পষ্ট কোন নির্দেশনা পাবেন তাও আশা করা যায় না। ২০১০ সালের এক জরিপে দেখা গিয়েছিল যে ৫৭ শতাংশ আমেরিকান এই বক্তব্যের সঙ্গে একতম। অন্য কোন রাষ্ট্রের পারমাণবিক হামলার জবাবেই শুধু যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করা উচিত। তার পরও বলতে হয় আমেরিকানরা যুদ্ধ ও উন্মাদনাও বেশ পছন্দ করে। ২০১৭ সালে প্রকাশিত স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কট স্যাগানের এক নিবন্ধে বলা হয়েছে সুস্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠ আমেরিকান যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে প্রথম পরমাণু অস্ত্রের ব্যবহার সমর্থন করে যদি তা করার জন্য ২০ হাজার মার্কিন সৈন্যের জীবন রক্ষা পায় এবং যদি তার জন্য ২০ লাখ ইরানী সিভিলিয়ানকে জীবন দিতে হয় তবুও। সূত্র : দ্য ইকোনমিস্ট
×