জুয়ার দান মারতে গিয়ে উল্টো নিজেই বেকায়দায় পড়ে গেলেন ইতালির কোয়ালিশন সরকারের অন্যতম শরিক দল নর্দার্ন লীগের নেতা মাত্তিও সালভিনি। গত আগস্ট মাসের গোড়ার দিকে তিনি কোয়ালিশনের অপর শরিক ফাইভ স্টার মুভমেন্টের সঙ্গে মতবিরোধের কারণে সরকারের ওপর সমর্থন প্রত্যাহার করেন এবং অনাস্থা প্রস্তাব আনেন। ফলে কোয়ালিশন সরকারের পতন ঘটে। প্রধানমন্ত্রী গিউসেপ কন্তে পদত্যাগ করেন। সালভিনি ধরেই নিয়েছিলেন সরকার পতনের ফলে নতুন নির্বাচন হবে এবং তাতে বিজয়ী হয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদ অলঙ্কৃত করবেন। কিন্তু সে গুড়েবালি প্রমাণ হতে দেরি হয়নি। পদত্যাগ করলেও কন্তে প্রেসিডেন্টের অনুরোধে কেয়ারটেকার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কাজ করছিলেন। এদিকে বেশ ক’দিন ধরে ঘোর রাজনৈতিক সঙ্কট চলার পর ফাইভ স্টার মুভমেন্ট ও ডেমোক্রেটিক পার্টি নতুন কোয়ালিশন সরকার গঠনে সমঝোতায় পৌঁছে কন্তে প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে নতুন সরকার গঠনের ম্যান্ডেট লাভ করেন গত বছরের নির্বাচনে সালভিনির নর্দার্ন লীগ মধ্য দক্ষিণ কোয়ালিশনের প্রধান শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়। এই জোট পার্লামেন্টের নিম্ন পরিষদের ২৬০ আসন ও সিনেটের ১৩৫ আসনে বিজয়ী হয়। অন্যদিকে এস্টাবলিসমেন্টবিরোধী পপুলিস্ট দল ফাইভ স্টার মুভমেন্ট যথাক্রমে ২২১ ও ১১২ আসন লাভ করে। অন্যদিকে ডেমোক্রেটিক পার্টিসহ মধ্যবাম কোয়ালিশন যথাক্রমে ১২২ ও ৫৭ আসন নিয়ে তৃতীয় স্থানে থাকে। দীর্ঘ দরকষাকষির পর নির্দলীয় ও অনির্বাচিত ব্যক্তি গিউসেফ কন্তেকে প্রধানমন্ত্রী করে কোয়ালিশন সরকার গঠিত হয় এবং এক জটিল ভারসাম্যের ওপর ভর করে সরকার চলতে থাকে। এভাবে ১৪ মাস চলার পর সালভিনি সরকারের ওপর অনাস্থা ঘোষণা করলে সরকারের পতন ঘটে। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে চরম বিশৃঙ্খলা ও তা থেকে সঙ্কট দেখা দেয়। সালভিনি নতুন নির্বাচনের দাবি জানান এবং নিজে প্রধানমন্ত্রী হবার স্বপ্ন দেখতে থাকেন।
বিরাজমান সঙ্কট অবসানের চেষ্টায় প্রেসিডেন্ট সার্জিও মান্তারেলা দেশের প্রধান সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনায় মিলিত হন। সালভিনির চাল বুমেরাং হয়ে দেখা দেয় যখন ডেমোক্রেটিক পার্টি ও ফাইভ স্টার নয়া কোয়ালিশন সরকার গঠনে মতৈক্যে পৌঁছে। বলাবাহুল্য এই দুই দলের অবস্থান দুই বিপরীত মেরুতে। সালভিনি তখন বলেন, তার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে যে গত মে মাসে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট নির্বাচনে এবং দেশের অন্যান্য আঞ্চলিক নির্বাচনে যারা এত শোচনীয় ফল করেছিল সেই ডেমোক্রেটিক পার্টি এখন পিছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় যেতে উদ্যত হয়েছে। তিনি বলেন, এস্টাবলিশমেন্টবিরোধী ফাইভ স্টার মুভমেন্ট পুরনো ধারার এস্টাবলিশমেন্ট পন্থীদের সঙ্গে শয্যাসঙ্গী হবার জন্য এমন এক কোয়ালিশনে মিলিত হতে যাচ্ছে যা মার্কেল ও ম্যাঁক্রোর রিমোট কন্ট্রোল দ্বারা চালিত হবে। যাই হোক, সর্বশেষ অবস্থা বিচারে বলা যায় সে ইতালিতে নতুন সরকার আবির্ভূত হতে যাচ্ছে এবং এর মধ্য দিয়ে ফের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠান পরিহার করা সম্ভব হবে। নিজের সরকার পতনের এক সপ্তাহের পর নয়া কোয়ালিশন গঠনের ম্যান্ডেট গ্রহণ করে কেয়ারটেকার প্রধানমন্ত্রী গিউসেপ কন্তে আরও ঐক্যবদ্ধ ও প্রতিনিধিত্বমূলক ইতালিতে নেতৃত্ব দেয়ার অঙ্গীকার করেন। দক্ষিণপন্থী লীগের নীতি থেকে লক্ষণীয়ভাবে সরে এসে তিনি বলেন, ইতালির ইউরোপে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করা উচিত।
কন্তে ব্যক্তিগত ও দলীয় রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির লক্ষ্যে সঙ্কট সৃষ্টির জন্য সালভিনির শাণিত সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ইতালি আজ এক জটিল পর্যায়ে থাকায় ইতোমধ্যে যে সময়টি হারিয়ে গেছে তা পুষিয়ে নিতে কঠোর চেষ্টা চালাতে হবে। তিনি আরও বলেন, নতুন সরকারের লক্ষ্য হবে নাগরিকদের কল্যাণ সাধন, দেশের আধুনিকায়ন এবং আন্তর্জাতিকভাবে দেশকে আরও প্রতিনিধি প্রতিযোগিতামূলক করে তোলা। সালভিনির জন্য এই নতুন কোয়ালিশন এক বড় ধরনের আঘাত। গত ১৪ মাস তিনি ইতালির রাজনীতিতে প্রধান ব্যক্তি ছিলেন। কিন্তু ক্ষমতার শরিক হওয়া তাঁর জন্য যথেষ্ট ছিল না। তিনি সরাসরি ক্ষমতা করায়ত্ত করতে চেয়েছিলেন। তার জন্য তিনি যে চাল দিয়েছিলেন তার মধ্যে মন্তে গলদ ছিল। যেটুকু ক্ষমতা ছিল সেটাও এখন হাতছাড়া।
চলমান ডেস্ক
সূত্র : দ্য ইকোনমিস্ট
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: