ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

গোপন চুক্তি ॥ প্যারাগুয়েতে রাজনৈতিক সঙ্কট

প্রকাশিত: ০৯:২৪, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯

গোপন চুক্তি ॥ প্যারাগুয়েতে রাজনৈতিক সঙ্কট

প্যারাগুয়েতে রাজনৈতিক সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে যার পরিণতিতে সে দেশের প্রেসিডেন্ট মারিও আবদো বেনিটেজের ইমপিচমেন্ট বা অভিশংসন হতে পারে। দেশটির বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কটের মূলে রয়েছে ব্রাজিলের সঙ্গে সম্পাদিক একটি গোপন পানি বিদ্যুত চুক্তি। চুক্তিটি গোড়া থেকেই অসম ছিল। গত মে মাসে সম্পাদিত গোপন চুক্তিতে প্যারাগুয়েরে সস্তায় বিদ্যুত পাওয়ার সুযোগ আরও খর্ব করা হয়। একে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী সৃষ্টি হয় গণঅসন্তোষ ও তা থেকে রাজনৈতিক সঙ্কট। ১৯৬৫ সালে ব্রৃাজিল প্যারাগুয়ের সঙ্গে বিরোধীয় একটি সীমান্সত অঞ্চলে সৈন্য পাঠায় এবং সেখানে বিশ্বের দীর্ঘতম জলবিদ্যুত বাঁধ নির্মাণে দুদেশের মধ্যে মতৈক্য হওয়ার সৈন্য ফিরিয়ে আনে। ইটাইপু নামে সেই বাঁধটি আজও প্যারাগুয়ের দুঃখ ও বেদনার উৎস। বর্তমান গোপন চুক্তিটি হওয়ার আগে ১৯৭৩ সালে দুদেশের মধ্যে সম্পাদিক চুক্তিতে প্রত্যেক দেশকে এই বাঁধ থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের অর্ধেকের ওপর অধিকার দেয়া হয়েছিল। ৭০ লাখ লোকের দেশ প্যারাগুয়েতে সামান্য কিছু শিল্প আছে। দেশটি তার হিস্যার মাত্র প্রায় এক-চতুর্থাংশ বিদ্যুত ব্যবহার করে এবং ঐটুকু বিদ্যুত দিয়ে তার বিদ্যুত চাহিদার ৯০ শতাংশ পূরণ হয়ে যায়। বাকি তিন-চতুর্থাংশ বিদ্যুত দেশটি বিক্রি করে ব্রাজিলের কাছে। ব্রাজিল আবার তার ব্যবহৃত বিদ্যুতের ১৫ শতাংশের এই বাঁধের বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল। ব্রাজিল প্যারাগুয়ের হিস্যার তিন-চতুর্থাংশ বিদ্যুত কিনে নিলেও এতদিন সেই বিদ্যুতের বাজারদর অনুযায়ী দাম দেয়নিÑ দিয়েছে শুধু উৎপাদন খরচ যার মধ্যে বাঁধ নির্মাণের ঋণ পরিশোধেও অন্তর্ভুক্ত। ব্রাজিলকে বিদ্যুতের পুরো দাম পরিশোধ করতে হলে ১৯৮৫ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে দেশটিকে আরও ৭৫৪০ কোটি ডলার দিতে হতো যা প্যারাগুয়ের বর্তমান বার্ষিক জিডিপির প্রায় দ্বিগুণ। ২০০৯ সালে ব্রাজিলের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট লুলা ডি সিলভা ব্রাজিলের বার্ষিক মূল্য পরিশোধ তিনগুণ করতে এবং প্যারাগুয়ের রাষ্ট্রীয় বিদ্যুত কোম্পানি এ্যান্ডিকে ব্রাজিলের প্রাইভেট কোম্পানিগুলির কাছে সরাসরি বিদ্যুত বিক্রি করার সুযোগ দিতে রাজি হন। কিন্তু গত মে মাসে সম্পাদিত গোপন চুক্তিতে ব্রাজিলীয় কোম্পানির কাছে বিদ্যুত বিক্রির অনুচ্ছেদটি বাদ দেয়া হয় এবং আগামী তিন বছর প্যারাগুয়ে প্রায় ১৮ শতাংশ কম অর্থ গ্রহণ করতে রাজি হয়। কিন্তু গত জুলাই মাসে এ্যান্ডির প্রধান পেড্রো ফেরেইরা চুক্তিতে স্বাক্ষর দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে পদত্যাগ করলে এবং প্রেসিডেন্ট আবদো বেনিটেজের বিরুদ্ধে চরম দেশদ্রোহিতার অভিযোগ আনলে গোপন চুক্তিটি ফাঁস হয়ে যায়। প্যারাগুয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও পদত্যাগ করেন। এই দু’জন ও অপর তিন কর্মকর্তা প্রসিকিউটরের কাছে বলেন যে ব্রাজিলের একটি জ্বালানি কোম্পানি লেরোসের কাছে এককভাবে বিদ্যুত বিক্রির ব্যাপারে সমান্তরাল আলোচনা চলছে। ফেরেইরা প্যারাগুয়ের প্রেসের কাছে টেক্সড বার্তায় জানিয়ে দেন যে, প্রেসিডেন্ট বেনিটেজের জ্ঞাতসারে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিউগো ভেলাজক্রুয়েজ লেবোসের পক্ষে লবিং করছেন। গোপন চুক্তিটি ফাঁস হয়ে গেলে বিক্ষুব্ধ হাজার হাজার মানুষ রাজপথে নেমে আসে এবং প্রেসিডেন্ট বেনিটেজকে ইমপিচ করার দাবি জানায়। গত ১ আগস্ট ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট বোলসোনারো চুক্তিটি বাতিল ঘোষণা করলে প্যারাগুয়ের কংগ্রেসে প্রেসিডেন্ট বেনিটেজের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ বাদ দেয়া হয়। কিন্তু ততদিনে অনেক দেরি হয়ে গেছে। জ্বালানি নীতি নিয়ে জনগণের বিক্ষোভ থামানো যায়নি। বাঁধ তৈরির জন্য প্যারাগুয়ের নেয়া ২শ’ কোটি ডলারের ঋণ ২০২৩ সালে পুরোপুরি শোধ হয়ে যাবে। প্রশ্ন হচ্ছে প্যারাগুয়ের চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত বিদ্যুত তখন কি করা হবে। রাজপথে বিক্ষোভরত জনতা চুক্তি নিয়ে নতুন করে আলোচনা করবে কথা বলছে। অনেকে বলছে যে বাড়তি বিদ্যুত শিল্পায়নের কাজে ব্যবহার করা উচিত। করের নিম্নহার ও সস্তায় বিদ্যুত লাভের সুযোগে গাড়ি কোম্পানিগুলো ব্রাজিলে রফতানির জন্য প্যারাগুয়েতে কেবল তৈরি শুরু করে দিয়েছে। বাড়িঘর ও অফিসে বিদ্যুতের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। ইটাইপু বাঁধ থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের যে অধিকাংশ প্যারাগুয়ে পায় কয়েক দশকের মধ্যে তার পুরোটাই এয়ার কন্ডিশনিংয়ে ব্যবহৃত হবে বলে মন্তব্য করেছেন এক বিশেষজ্ঞ। এনামুল হক সূত্র : দ্য ইকোনমিস্ট
×