ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সোনালী ব্যাংক ঘুরে দাঁড়ানোর নায়ক ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ

প্রকাশিত: ০৭:০৬, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯

সোনালী ব্যাংক ঘুরে দাঁড়ানোর নায়ক ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন কালে বড় অংকের মুনাফার পাশাপাশি বিপুল খেলাপী ঋণ আদায়ের মাধ্যমে সোনালী ব্যাংককে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ। তিনি ৫শ কোটি টাকার লোকসানী সোনালী ব্যাংককে ২ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত মুনাফা অর্জন করিয়ে দিয়েছেন। খেলাপী থেকে আদায় করেছেন সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকার বেশি। রাত দিন পরিশ্রম করে ব্যাংকটিকে একটি মজবুত অবস্থায় নিয়ে গিয়েছেন ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ। সম্প্রতি সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের কনফারেন্স রুমে ‘সিইও এন্ড এমডি বিদায় ও বরণ সভায়’ বক্তরা এমন বক্তব্য তুলে ধরে ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদকে ‘সোনালী ব্যাংক ঘুরে দাঁড়ানোর সত্যিকার নায়ক’ হিসেবে অভিহিত করেন। সোনালী ব্যাংকের প্রায় সকল কর্মকর্তাই তাদের বক্তব্যে বলেছেন, ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদের ‘জাদুকরী হাতের স্পর্শে’ ব্যাংকটি তলানী থেকে শীর্ষে চলে এসেছে। বক্তারা আরো বলেন ওবায়েদ উল্লাহ মাসুদ শুধু সোনালী ব্যাংকেই নয় কর্মসংস্থান ব্যাংকেও একটি শক্ত অবস্থানে রেখে এসেছেন। সেখানেও তিনি মাত্র এক কোটি টাকা মুনাফা থেকে ১৮ কোটি টাকা মুনাফা অর্জন করেন। সভায় সোনালী ব্যাংকের লোকাল অফিসের জিএম নিজাম চৌধুরী বলেন, লোকাল শাখায় খেলাপীর হার ছিল প্রায় ৪৭ শতাংশ, কিন্তু এক জাদুকর ব্যাংকারের হাতের স্পর্শে তা মাত্র ১৫ শতাংশে নেমে এসেছে। কর্মকর্তাদের উজ্জীবিত করতে ওবায়দুল্লাহ মাসুদের ভূমিকা অত্যন্ত ইতিবাছক। জিএম নুরুল ইসলাম বলেন, সদ্য বিদায়ী এমডি ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ ব্যাংকটিকে একটি শক্ত অবস্থানে দাড় করিয়ে দিয়েছেন। বক্তারা গত তিন বছরে দায়িত্ব পালনকালে ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদের অর্জণ তুলে ধরেন। তারা জানান, ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সোনালী ব্যাংক ৩৪৬ কোটি টাকা লোকসান করেছিল। সেখানে গত তিন বছরে ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ সরকারকে মুনাফা দিয়েছেন ৪ হাজার ১০১ কোটি টাকা। বক্তারা ব্যাংকের ব্যালেন্সশিটের তথ্য তুলে ধরে জানান, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে সোনালী ব্যাংক পরিচালন মুনাফ করেছে ৪৫৫ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে মুনাফা করেছিল ২ হাজার ২৬ কোটি টাকা। ২০১৭ সালে ১ হাজার ১৯৫ কোটি মুনাফা করেছিল সোনালী এবং ২০১৬ সালের শেষ ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) পরিচালন মুনাফা হয়েছিল ৪২৫ কোটি টাকা। অথচ ওই বছরের প্রথম ছয় মাসে লোকসান হয়েছিল ৩৪৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ দায়িত্ব নেওয়ার আগমুহূর্তেও যে ব্যাংকটি ছয় মাসে ৩৪৬ কোটি টাকা লোকসান করেছিল, দায়িত্ব নেওয়ার পরেই সেই ব্যাংকটিকে ৪ হাজার ১০১ কোটি টাকা মুনাফা এনে দিয়েছেন ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ। বক্তারা আরও জানান, গত তিন বছরে সোনালী ব্যাংক রেকর্ড পরিমাণ খেলাপি ঋণ আদায় করেছে। ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত ব্যাংকটি ৬ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা শ্রেণীকৃত ঋণ আদায় করেছে। কোন এমডির মেয়াদে সোনালী ব্যাংকের ইতিহাসে এটা সর্বোচ্চ আদায় বলে জানান আলোচকরা। ২০১৬ সালে ব্যাংকটি আদায় করেছে ১ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা। ২০১৭ সালে ১ হাজার ৯১ কোটি টাকা, ২০১৮ সালে রেকর্ড ৩ হাজার ৬৭৬ কোটি টাকা এবং ২০১৯ সালের প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) আদায় করেছে ৬০১ কোটি টাকা। ব্যাংকটির লোকসানী শাখা কমার কাথাও জানিয়েছেন বক্তারা। তারা বলেছেন, গত তিন বছরে ব্যাংকটির লোকসানী শাখা কমে এক পঞ্চমাংশে দাঁড়িয়েছে। ২০১৬ সালের জুনে সোনালীর লোকসানী শাখা ছিল ২৭৪টি। ২০১৯ সালের জুনে লোকসানি শাখার কমে দাঁড়িয়েছে ৬১টিতে। অর্থাৎ, তিন বছরে ২১৩টি লোকসানী শাখা কমাতে পেরেছেন ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ। এসবের পাশাপাশি গত তিন বছরে ব্যংকটির আমানত ও ঋণ-অগ্রিমের পরিমাণও বেড়েছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদেও নেতৃত্বে ব্যাংকটির আমানত বেড়েছে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। ঋণ ও অগ্রিম বেড়েছে প্রায় সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা। সভায় সদ্য বিদায়ী ও রূপালী ব্যাংকে যোগদানকৃত এমডি এন্ড সিইও মো. ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ সোনালীর কর্মকর্তাদের তাকে সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানান। সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মো. আতাউর রহমান প্রধান, ব্যাংকটির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম সাজেদুর রহমান, মো. এবনুজ জাহান সহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
×