অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য বিশ্বব্যাংক ‘ব্ল্যাংক চেক’ লিখে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক বলেছে তোমাদের প্রয়োজন মতো টাকা লিখে নাও। বাংলাদেশের অর্থায়নের ক্ষেত্রে আর কোন লুকোচুরি নয়। এছাড়া জাপান ডেল্টাপ্ল্যান বাস্তবায়নে আসতে চায় বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এর ফলে বাংলাদেশের নদী ব্যবস্থাপনা আরও সুদৃঢ় হবে। রাইন নদীর মতো পাঁড় বেঁধে দেয়া হবে। নদীর এক পাড়ে ট্রেন অন্যপাড়ে গাড়ি চলবে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর শেরে বাংলানগরে অর্থমন্ত্রীর নিজ কার্যালয়ে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর(বাংলাদেশ-ভুটান) মার্সি টেম্বনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত শেষে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এরপরই অর্থমন্ত্রীর নিজ কার্যালয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত হিরোইয়াসু ইজুমি সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করেন। পরে এ প্রসঙ্গেও কথা বলেন অর্থমন্ত্রী।
আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, এক সময় পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন থেকে সরে দাঁড়ালেও বর্তমানে বিশ্বব্যাংকের আচরনে আমুল পরিবর্তন এসেছে। শুধু তাই নয়, ঋণদানকারী এই সংস্থাটি ব্ল্যাংক চেক দিয়ে বলছে যা খুশি লিখে নাও। বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশে প্রকল্প তৈরি ও অর্থায়নে প্রস্তুত রয়েছে। যতো অর্থের প্রয়োজন হোক না কেন তা দিতে প্রস্তুত বিশ্বব্যাংক। এ কারণে সম্ভাবনাময় খাতগুলোকে কাজে লাগানোর জন্য বিশ্বব্যাংকের পরামর্শ গ্রহণ করা হবে। দেশের ৮৮ শতাংশ ব্লু-ইকোনোমি কাজে লাগানোর লাগানোর সুযোগ রয়েছে। এখাতে কাজ করতে ইচ্ছা প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক।
ডেল্টা প্ল্যান প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, নেদারল্যান্ডের পাশাপাশি ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়নে বিশ্বব্যাংক এগিয়ে আসবে। এখাতে অর্থ ও প্রকল্প বাস্তবায়নে সহায়তা দেবে। ডেল্টাপ্ল্যানে যদি ভারতও আসতে চায়, তবে স্বাগত জানাবো। সড়ক ব্যবস্থাপনা প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের সড়ক ব্যবস্থাপনায় সব ধরণের কারিগরি ও আর্থিক সহায়তা দেবে। বাংলাদেশের সড়ক উন্নয়নে যতো টাকার প্রয়োজন ততো দেবে সংস্থাটি। সড়কের পাশে চালকদের জন্য বিশ্রামাগারসহ নানা উন্নয়নে সরকার কাজ করছে। এসব দেখে ইতোমধ্যে প্রশংসা করেছেন বিশ্বব্যাংক। নতুন আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, চলতি বছরের ১৪ অক্টোবর ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক সভা অনুষ্ঠিত হবে। এই সভায় নতুন প্যাকেজ ঘোষণা করবে সংস্থাটি। বাংলাদেশের বিষয়ে সংস্থাটির ইতিবাচক ধারণা হয়েছে। আমাদের প্রয়োজন অনুযায়ী সংস্থাটি অর্থায়ন করতে উন্মুখ হয়ে রয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর (বাংলাদেশ-ভুটান) মার্সি টেম্বন বলেন, আমি বাংলাদেশ নিজেই চিনে নিয়েছে। সুন্দরবন ছাড়া বাংলাদেশের সকল স্থানে ঘুরেছি। বাংলাদেশের অবকাঠামোগত সুবিধাসহ আর্থিক বিষয়ে ব্যাপক উন্নত হয়েছে। নদী, পানি ও ব্লু-ইকোনোমিতে বাংলাদেশকে আর্থিক সহায়তা দেয়া হবে। বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে ব্র্যান্ডিং করতে এসেছি। এ সময় অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব মনোয়ার আহমেদসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
ডেল্টা প্ল্যান ও নদী ও ব্যবস্থাপনায় জাপান অংশগ্রহণ করবে ॥ ডেল্টা প্ল্যান ও নদী ব্যবস্থাপনায় জাপান সহযোগীতা করতে চায় বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, জার্মানির বন শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ‘রাইন’ নদীর মতো বাংলাদেশের নদীগুলোর পাড় বেঁধে দিয়ে এক পাশে ট্রেন এবং অন্যপাশে গাড়ি চালানোর ব্যবস্থা করা হবে। এলক্ষ্যে ডেল্টাপ্ল্যান বাস্তবায়ন করবে সরকার। তবে বড় এই প্রকল্পে জাপান আসতে চায়। ফলে বাংলাদেশের নদী ব্যবস্থাপনা আরও মজবুত হবে। নদীগুলোকে পদ্ধতিগতভাবে কাজে লাগানো হবে। রাইন নদীর মতো পাঁড় বেঁধে দেয়া হবে। নদীর এক পাড়ে ট্রেন অন্যপাড়ে গাড়ি চলবে। নদীর পলিগুলোকে কাজে লাগানো হবে। নদীর ক্যাপিটাল ড্রেজিং করে যোগাযোগ ব্যবস্থায় আরও অবদান রাখবে। ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়নে জোর দিয়েছে জাপান। নদীর মধ্যে যে সব সম্পদ আছে তা কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে এগিয়ে আসবে জাপান।
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, মাতারবাড়ী প্রকল্প নিয়ে তাদের ব্যাপক আশা রয়েছে। মাতারবাড়ীর গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মানের পরবর্তী ধাপে এটিকে কেন্দ্র করে ব্যাপক অগ্রগতি সাধিত হবে। নেদারল্যান্ডের পাশাপাশি ডেল্টাপ্ল্যান বাস্তবায়নে কাজ করবে জাপান। আমাদের আরও অনাবিষ্কৃত সম্ভানাময়ী খাতগুলোসহ, বিশাল সমুদ্রের বিপুল সম্পদের সম্ভাবনা রয়েছে সে বিষয়েও তারা খুবই আগ্রহী। আমাদের যে ডেল্টা প্ল্যান জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকী থেকে আমাদেরকে রক্ষা করবে। এই প্ল্যানের সঙ্গে জাপান-জাইকা সম্পৃক্ত হবে বলে জানান অর্থমন্ত্রী।
এছাড়া লবণের উন্নয়নে জাপান এগিয়ে আসবে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, মাতারবাড়ীতে অত্যাধুনিক লবন উৎপাদন কারখানা স্থাপন করবে জাপান। ফল লবণ প্রক্রিয়াজাতকরণ থেকে শুরু করে রফতানিতে অবদান রাখবে। জাপানে জনশক্তি রফতানি প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে মুস্তফা কামাল বলেন, সম্প্রতি জাপান সফরে এই বিষয়ে আমাদের প্রধানমন্ত্রী ও জাপানের অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। জাপানে জনবল পাঠানোর বিষয়ে আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি। জাপানিরা খুবই শান্তি প্রিয় জাতি। তারা খুব জোরে কথা বলা পছন্দ করে না। এ কারণে এই সব বিষয়ে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিয়ে জাপানে লোক পাঠানো হবে। জাপানে লোক পাঠানোর জন্য ভাষা ও সংস্কৃতির বিষেয়ে বেশি বেশি প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, আর্থিক ব্যবস্থাপনায় সকল ধরণের সহায়তা দিতে প্রস্তুত জাইকা। আমাদের অর্থনৈতিক খাতের অটোমেশন ও ব্যবস্থাপনায় সহযোগীতা করবে জাপান। যার মাধ্যমে আমাদের এনবিআর সম্পূর্ণরূটে অটোমেটেড হবে। পাশাপাশি ব্যাংক খাত, ইন্সুরেন্স, পুজিবাজারো অটোমেশনে চলে আসবে।