ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যে নামে বিখ্যাত তিনি

প্রকাশিত: ১৩:০১, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯

যে নামে বিখ্যাত তিনি

কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হিসেবে নামটি রেখেছিলেন কমরেড মনি সিংহ। তাই ‘জহির রায়হান’ নামটি রাজনৈতিক। আর এ নামেই তিনি বিখ্যাত হয়েছিলেন। তার প্রকৃত নাম আবু আবদার মোহাম্মদ জহিরুল্লাহ। ডাক নাম ছিল জাফর। জহির রায়হানের ৮৫তম জন্মদিন আজ। ১৯৩৫ সালের ১৯ আগস্ট ফেনী জেলার মজুপুর গ্রামে তার জন্ম। কিন্তু তার মৃত্যুর দিনটি রহস্যই রয়ে গেছে আজও। ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি ঢাকার মিরপুরে তার ভাই শহীদুল্লাহ কায়সারকে খুঁজতে গিয়ে আর ফিরে আসেননি। ধারণা করা হয় মিরপুরে বিহারী এলাকায় ছদ্মবেশী পাকিস্তানী সৈন্যদের গুলির আঘাতে তিনি মারা যান। জহির রায়হান ছাত্র জীবনে রাজনৈতিক কারণে একাধিকবার জেলে গিয়েছেন। প্রথমে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময়ে জেলে যান। ২০ ফেব্রুয়ারি ঢাকা শহরে মিছিল করতে গিয়ে তিনি গ্রেফতার হন। তিনি ১৯৫৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। বাংলা চলচ্চিত্রে অল্প কিছু মেধাবী মানুষের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় যারা এখনও আমাদের মাঝে মরে গিয়েও বেঁচে আছেন, আর তেমনই একজন হলেন জহির রায়হান। তার চলচ্চিত্রগুলো এখনও বিশাল একটা জায়গাজুড়ে আছে বাঙালীর মনে। আর কিছু লেখা অমর হয়ে আছে। তার একটি কালজয়ী উপন্যাস ‘হাজার বছর ধরে।’ পরে এই উপন্যাসটির চলচ্চিত্রায়ন করেন তারই সহধর্মিণী অভিনেত্রী কোহিনূর আকতার সুচন্দা। তার প্রথম স্ত্রী অভিনেত্রী সুমিতা দেবী। এই প্রয়াত অভিনেত্রীর দুই ছেলে বিপুল রায়হান ও অনল রায়হান। দু’জনেই নাট্য নির্মাতা। স্ত্রী সুচন্দার ছেলে তপু রায়হানও অভিনেতা। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ও জীবনমুখী সাহিত্যে জহির রায়হানের অবদান অনেক। তার খ্যাতি চলচ্চিত্রের জন্য হলেও শুরুটা কথাসাহিত্যিক হিসেবে। ‘কখনো আসেনি’ জহির রায়হান নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র। এই ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৬১ সালে। এ ছাড়াও ‘বাহানা’, ‘বেহুলা’, ‘আনোয়ারা’, ‘জীবন থেকে নেয়া’ জহির রায়হান নির্মিত কয়েকটি আলোচিত চলচ্চিত্র। মুক্তিযুদ্ধের ওপর নির্মিত ২০ মিনিট দৈর্ঘ্যরে প্রামাণ্য চলচ্চিত্র ‘স্টপ জেনোসাইড’ নানা কারণে আজও ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ। তার সাংবাদিক জীবন শুরু হয় ১৯৫০ সালে। তিনি ‘যুগের আলো’ পত্রিকায় সাংবাদিকতা শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি খাপছাড়া, যান্ত্রিক, সিনেমা ইত্যাদি পত্রিকাতেও কাজ করেন। ১৯৫৬ সালে তিনি সম্পাদক হিসেবে ‘প্রবাহ’ নামের একটি পত্রিকায় যোগ দেন। ১৯৫৫ সালে তার প্রথম গল্প ‘সূর্যগ্রহণ’ প্রকাশিত হয়। তিনি উপন্যাসও লেখেন। ‘হাজার বছর ধরে’ উপন্যাসটি তার অন্যতম জনপ্রিয় উপন্যাস। অসাধারণ মুন্সিয়ানা দিয়ে জহির রায়হান ‘হাজার বছর ধরে’ উপন্যাসের মধ্যে যেভাবে আবহমান বাংলার স্বকীয়তা ও ধারাবাহিকতাকে বেঁধেছেন, এক কথায় তা অসামান্য। এ ছাড়াও রয়েছে- শেষ বিকেলের মেয়ে, আরেক ফাল্গুন, বরফ গলা নদী, আর কতদিন, তৃষ্ণা নামে আরও কয়েকটি উপন্যাস। তিনি তার সাহিত্য জীবনে অনেক পুরস্কার পান। ১৯৬৪ সালে আদমজী পুরস্কার পান। ১৯৭২ সালে বাংলা উপন্যাসে অবদানের জন্য তাকে বাংলা একাডেমি পুরস্কার (মরণোত্তর) দেয়া হয়। এ ছাড়াও তিনি মরণোত্তর একুশে পদক, স্বাধীনতা পুরস্কার ও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।
×