ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

৪৫ বছরের পুরনো কবরস্থান দখলে মরিয়া ভূমিদস্যুরা

প্রকাশিত: ০৯:৩০, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯

৪৫ বছরের পুরনো কবরস্থান দখলে মরিয়া ভূমিদস্যুরা

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে ৪৫ বছরের পুরনো কবরস্থানের একটি অংশ দখলে নিতে মরিয়া ভূমিদস্যুরা। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন ফতেয়াবাদের ১নং দক্ষিণ পাহাড়তলীর সন্দ্বীপ কলোনিতে এই কবরস্থানের অবস্থান। প্রায় ৮০ শতাংশ টিলা শ্রেণীতে এই কবরস্থান। স্থানীয় অজিউল্লাহ গংয়ের পক্ষে প্রায় ২০ শতাংশ জায়গা সিমেন্টের পিলার ও বেড়া দিয়ে দখলে নিতে চায়। রাতের আঁধারে এই বেড়া দিলেও গত ৭ জুন মুসল্লিরা এই বেড়া উপড়ে ফেলে দিয়েছেন। এদিকে এ বিষয়ে গত ১৯ জুন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং ১০ জুন স্থানীয় কাউন্সিলর বরাবর সাড়ে চার শ’ মুসল্লি গণস্বাক্ষরসহ লিখিত আবেদন জানিয়েছেন। এরই প্রেক্ষিতে গত ১ জুলাই জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর মুহাম্মদ মাহমুদ উল্লাহ মারুফ এ কবরস্থানের জায়গা অবৈধ দখলমুক্ত করতে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি চিঠি লিখেছেন। জানা গেছে, কবরস্থানটি টিলা শ্রেণীর প্রায় ৮০ শতাংশ জায়গার ওপর প্রায় ৪৫ বছর। হাজারেরও বেশি মানুষের দাফন সম্পন্ন হয়েছে এই কবরস্থানে। সন্দ্বীপ কলোনির অজিউল্লাহ গংয়ের তত্ত্বাবধানে একটি চক্র গত জুন মাসের শুরুতে কবরস্থানের একটি অংশ দখলে নিতে তারকাঁটা ও সিমেন্টের পিলার দিয়ে ঘেরা দেয়। গত ৭ জুন জুমার নামাজ শেষে স্থানীয় সমাজপতি ও মুসল্লিরা জায়গাটি দখলমুক্ত করতে কবরস্থান থেকে বেড়া ও পিলার উপড়ে ফেলে দেন। প্রায় ১৫ বছর আগেও একবার চক্রটি কবরস্থানের খালি জায়গায় চাষাবাদের চেষ্টা করলে তৎকালীন সমাজ কমিটি তাদের টাকা পয়সা দিয়ে অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে। কিন্তু এরপরও ভূমিদস্যুরা প্রভাবশালী হওয়ার কারণে স্থানীয়রা কবরস্থান দখলের আতঙ্কে আছেন। এ বিষয়ে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রুহুল আমীন জনকণ্ঠকে বলেন, এ ধরনের একটি আবেদন গণস্বাক্ষরসহ আমার দফতরে গৃহীত হয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ভাইস চেয়ারম্যান। এ বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রমাণ সাপেক্ষে অসাধুদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সন্দ্বীপ কলোনি সমাজকল্যাণ সমবায় সমিতির পক্ষ থেকে জানা গেছে, কবরস্থানটি মোট ১৬০ শতক জায়গার ওপর অবস্থিত। এ এলাকায় নগেন্দ্র লাল দে নামের একজন ৮৩ একর ৫০ শতক জায়গা বিক্রি করেছেন। ১৯৭৩ সালে সন্দ্বীপের ১৪০ জন গৃহহীন এই সম্পত্তি ক্রয় করেন। কিন্তু কি কারণে নগেন্দ্র লাল দে এর সম্পত্তি খাস হয়ে যায়। পরে চট্টগ্রামের কাট্টলী এলাকার এক বিত্তশালী জনৈক মফজল চৌধুরী এই জায়গা নিলামে নেয়ার চেষ্টা করেন। পরে নগেন্দ্র লাল হাইকোর্টে রিট মামলা দায়ের করলে নিলামের কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। নগেন্দ্র লাল দে এর ছেলে পরিমল চন্দ্র ও বিশ্বনাথ চন্দ্র ২০০৬ সালে মফজলের ২৩ জন ওয়ারিশের সঙ্গে সোলেনামা করে। এদিকে, ২০০৪ সালের ৩ অক্টোবর কবরস্থান সংলগ্ন জমির দখল হস্তান্তর বাবদ মৃত শফিউল্লাহর ছেলে মোহাম্মদ ছিদ্দিককে পাঁচ হাজার টাকা ও মৃত মুছা মিয়ার ছেলে মোহাম্মদ শফিককে একই বছরের ৭ জুন পাঁচ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে সমিতির পক্ষ থেকে । কারণ কবরস্থানের আওতায় থাকা খাস জমি তারা চাষাবাদ করে রুজি রোজগারের ব্যবস্থা করেছিল। এ বিষয়ে মোহাম্মদ ছিদ্দিক জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, কবরস্থানের জায়গা ব্যক্তি মালিকানা। কিন্তু সরকার কি কারণে এই ভূমির খাজনা নেয় না। তার বড় ভাই প্রবাসী অজিউল্লাহ, প্রবাসী একরাম ও মোহাম্মদ সেলিমসহ তার মামা জনৈক হারুন এই জায়গার মালিক। সেখানে তাদের প্রায় একশ’ শতক জায়গা রয়েছে। এরমধ্যে ৪০ শতক জায়গা কবরস্থানে পড়েছে। আমি ও মোহাম্মদ শফিক সেখানে চাষাবাদ করতাম। এ বিষয়ে সমিতির সেক্রেটারি আকবর হোসেন জনকণ্ঠকে জানান, কবরস্থানের জায়গাটি খাস। ফলে সরকার এই জমির কোন খাজনা নিচ্ছে না। কবরস্থান দখল সংক্রান্ত বিরোধ মেটাতে আবেদনের সঙ্গে সন্দ্বীপ কলোনি শাহী জামে মসজিদের সাড়ে চারশ’রও বেশি মুসল্লির গণস্বাক্ষরের একটি কপিও জমা দেয়া হয়েছে জেলা প্রশাসন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে। কিন্তু আদৌ কোন পদক্ষেপ নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
×