ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

নাদালের উনিশ

প্রকাশিত: ১১:৫৮, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯

নাদালের উনিশ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ অবিশ্বাস্য, অপ্রতিরোধ্য নাদাল। আবারও ইউএস ওপেনের চ্যাম্পিয়ন নাদাল। ৪ ঘণ্টা ৫০ মিনিটের রুদ্ধশ্ব¦াস লড়াই শেষে রাশিয়ার দানিল মেদভেদেভকে পরাজিত করেন তিনি। রবিবার ফাইনালে স্পেনের এই টেনিস তারকা ৭-৫, ৬-৩, ৫-৭, ৪-৬ এবং ৬-৪ গেমে হারান মেদভেদেভকে। সেইসঙ্গে ক্যারিয়ারের চতুর্থ ইউএস ওপেনের শিরোপা উঁচিয়ে ধরেন নাদাল। ১৯তম গ্র্যান্ডস্লাম। সবমিলিয়ে ক্যারিয়ারের ৮৪তম ট্রফি। শুধু তাই নয়, কিংবদন্তি রজার ফেদেরারের আরও কাছে চলে গেলেন নাদাল। পুরুষ এককে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ গ্র্যান্ডস্লাম জয়ের মালিক রজার ফেদেরার। সুইস তারকার মেজর শিরোপার সংখ্যা ২০টি। এই তালিকায় ফেড এক্সপ্রেসের পরেই অবস্থান এখন নাদালের। ১৬ গ্র্যান্ডস্লাম জেতা নোভাক জোকোভিচের অবস্থান তিন নম্বরে। বর্তমান বিশ্ব টেনিসের ত্রিমূর্তির পর চতুর্থ এবং পঞ্চম স্থানে রয়েছেন যথাক্রমে পিট সাম্পাস (১৪) এবং রয় এমারসন (১২)। চলতি মৌসুমের শুরু থেকেই রাফায়েল নাদাল দুর্দান্ত খেলেছেন। নতুন বছরের প্রথম মেজর শিরোপা অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু শিরোপার লড়াইয়ে নোভাক জোকোভিচের কাছে হেরে যান। এরপর ফ্রেঞ্চ ওপেনেরও ফাইনাল খেলেন এই স্প্যানিয়ার্ড। এবার অবশ্য চ্যাম্পিয়ন হয়েই থামেন রাফা। সেইসঙ্গে রেকর্ড ১২তম ফ্রেঞ্চ ওপেনের ট্রফি জেতার অবিস্মরণীয় কীর্তি গড়েন তিনি। প্রমাণ করেন কেন তিনি লাল দুর্গের অবিসংবাদিত রাজা। দাপট দেখিয়েছেন বছর শেষের বড় মঞ্চেও। সময়ের দুই মহাতারকা জোকোভিচ-ফেদেরার আগে বিদায় নিলেও কোর্টে দুর্দো-প্রতাপে লড়াই করে যান ৩৩ বছরের এই তারকা। ফাইনালেও দেখা গেছে রাফার দাপট। মেদভেদেভের বিপক্ষে প্রথম দুই সেট টানা জিতে নেন। হাল ছাড়েননি রাশান তারকাও। প্রথমবার কোন গ্র্যান্ডস্লামের ফাইনালে ওঠা ২৩ বছরের এই তারকাও লড়াইয়ে ফিরেন পরের দুই সেট জিতে। শেষ পর্যন্ত পঞ্চম সেটেই নির্ধারত হয় ম্যাচ। শেষ সেটে বাজিমাত করেন নাদাল। প্রায় পাঁচ ঘণ্টার লড়াই করে দুই বছর পর আবারও ইউএস ওপেনের শিরোপা পুনরুদ্ধার করেন বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের সাবেক এই নাম্বার ওয়ান। মাত্র ৪ মিনিটের জন্য ইউএস ওপেনের ফাইনালে সবচেয়ে বেশি স্থায়ী ম্যাচের রেকর্ড স্পর্শ করেনি নাদাল-মেদভেদেভের ম্যাচটি। তারপরও আর্থার এ্যাশ স্টেডিয়ামে উপস্থিতি প্রায় ২৪ হাজার দর্শক দেখলেন দারুণ রোমাঞ্চকর এবং উপভোগ্য এক ফাইনাল। ২০১০ সালে ইউএস ওপেনের প্রথম ট্রফি জিতেছিলেন নাদাল। ২০১৩ সালে দ্বিতীয়টি। ২০১৭ সালে ইউএস ওপেনের তৃতীয় শিরোপা জিতেছিলেন রাফা। গত মৌসুমে সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নেন তিনি। ওই আসরে শিরোপা জিততে না পারার দুঃখ ঘোচাতে এবারের ইউএস ওপেনকেই বেছে নেন নাদাল। যে কারণে টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই তিনি বলেছিলেন, ‘এবারের শিরোপা জয় করাটা আমার জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। গেল আসরে সেমিফাইনাল থেকে বিদায়টা আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছিল।’ শেষ পর্যন্ত নিজের সেই লক্ষ্য পূরণ করেছেন নাদাল। স্প্যানিশ তারকা যেভাবে ছুটছেন, পারফর্মেন্সের এই ধারাবাহিকতা ধরে রেখে আগামী বছরের জানুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের শিরোপা জিততে পারলে ফেদেরারকেও ছুঁয়ে ফেলবেন নাদাল। ফাইনাল জয়ের পর দারুণ রোমাঞ্চিত নাদাল। নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার টেনিস ক্যারিয়ারে সবচেয়ে আবেগময় এক রাত এটি। সত্যিই অসাধারণ একটি ফাইনাল। আর্কষণীয় ফাইনাল। দর্শকরা উপভোগ করেছে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই।’ ক্যারিয়ারের প্রথম কোন গ্র্যান্ডস্লামের ফাইনাল খেললেন দানিল মেদভেদেভ। পুরো টুর্নামেন্টে নজরকাড়া পারফর্মেন্স উপহার দেয়া রাশিয়ান তারকা ফাইনালেও লড়াই করেছেন বীরের মতো। কিন্তু তারপরও শিরোপা বঞ্চিত হয়েছেন মেদভেদেভ। স্বাভাবিকভাবেই হতাশ। তারপরও প্রতিপক্ষ নাদালকে মেদভেদেভ শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি নাদালকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। ১৯ গ্র্যান্ডস্লাম জয় অবিশ্বাস্য, ভয়ঙ্কর। ’ গত দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে টেনিস কোর্টে দাপটের সঙ্গে খেলছেন ফেদেরার-নাদাল ও জোকোভিচ। টেনিসের এই ত্রিমূর্তি ভাগাভাগি করে নিয়েছেন শেষ ১২ ইউএস ওপেনের শিরোপা। এর মধ্যে চার নাদালের। ১৯৭০ সালে ৩৫ বছর বয়সে ইউএস ওপেন জিতে ইতিহাস গড়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার কেন রোজওয়েল। আর এই যুগে ৩৩ বছর বয়সে ইউএস ওপেন জিতে রেকর্ড বইয়ে নাম তুললেন নাদাল।
×