ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

১৪ কোম্পানিকে তালিকাচ্যুতির ব্যাখ্যা চেয়েছে বিএসইসি

প্রকাশিত: ১২:০৩, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯

১৪ কোম্পানিকে তালিকাচ্যুতির ব্যাখ্যা চেয়েছে বিএসইসি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ তালিকাভুক্ত ১৪ কোম্পানিকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ যে কারণে তালিকাচ্যুত করার উদ্যোগ নিয়েছে, সে বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে ডিএসই’কে এ সংশ্লিষ্ট ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তালিকাচ্যুত কোম্পানিগুলো হলো- শ্যামপুর সুগার মিলস, জিলবাংলা সুগার মিলস, বেক্সিমকো সিন্থেটিকস, শাইনপুকুর সিরামিকস, সোনারগাঁও টেক্সটাইল, সিএ্যান্ডএ টেক্সটাইল, তুং-হাই নিটিং এ্যান্ড ডাইং, দুলামিয়া কটন, সমতা লেদার কমপ্লেক্স, জুট স্পিনার্স, মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজ, মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক ইন্ডাস্ট্রিজ, ইমাম বাটন ইন্ডাস্ট্রিজ ও সাভার রিফ্র্যাক্টোরিজ। বাজার সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, কোন কোম্পানিকে তালিকাচ্যুত করলে কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকরা বেশি লাভবান হন। আর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। তবে ডিএসই সাধারণ বিনিয়োগকারীদের, না ওইসব কোম্পানিগুলোর উদ্যোক্তা পরিচালকদের স্বার্থকে প্রাধান্য দিচ্ছে সেটা বিএসইসি’র খতিয়ে দেখা উচিত। সূত্র মতে, কোম্পানিগুলোকে তালিকাচ্যুতির বিষয়ে ডিএসই’র কাছে আইন অনুযায়ী চারটি যৌক্তিক ব্যাখ্যা চেয়েছে বিএসইসি। সেগুলো হলো লিস্টিং আবেদনের শর্ত অনুযায়ী কোম্পানিগুলোতে কোন ধরনের অসঙ্গতি বা ঘাটতি আছে কি-না, কোন আইনের লঙ্ঘন রয়েছে কি-না, সাধারণ বিনিয়োগকারীর স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে তার জন্য কোম্পানি ও পরিচালকদের বিরুদ্ধে লিস্টিং রেগুলেশন ২০১৫ এর ৯ (৪) অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কি-না। ডিএসইতে কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্তির সময় সংশ্লিষ্ট ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কিংবা কোন মনোনীত ব্যক্তির সঙ্গে যে চুক্তি হয়েছিল, তা পরিপালনে ব্যর্থ হয়েছে কি-না, ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিটির বিরুদ্ধে স্টক এক্সচেঞ্জ লিস্টিং রেগুলেশন, ২০১৫ এর ৭ ধারা অনুযায়ী কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ডিএসই লিস্টিং রেগুলেশনস এর ৫১ (২) ধারা অনুযায়ী কোম্পানিগুলোর ট্রেডিং মনিটর করা হয়েছে কি-না। ডিএসই’র লিস্টিং রেগুলেশনস এর ৫১ (২) বলা হয়েছে, ট্রেড সাসপেন্ড পরিবর্তে যদি কোন কোম্পানির কার্যক্রম বন্ধ থাকে, তবে স্টক এক্সচেঞ্জ সেই কোম্পানির সার্বিক অবস্থা ছয় মাস মনিটর করবে। এছাড়া ডিএসই এসব কোম্পানিগুলোর সর্বশেষ নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে কোন গোইং কনসার্ন থ্রেট’ বা ‘ভবিষ্যত হুমকির মুখে’ এমন কোন তথ্য পেয়েছে কিনা। পেলে তা বিএসইসি’র নির্দেশনা অনুযায়ী ডিএসই’র ট্রেডিং মনিটরে তা প্রকাশ করেছে কিনা। এ বিষয়ে বিএসইসি’র নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোঃ সাইফুর রহমান বলেন, ‘তালিকাভুক্ত ১৪ কোম্পানিকে তালিকাচ্যুত করার বিষয়ে ডিএসই একটি সুপারিশপত্র পাঠিয়েছিল। সে সংক্রান্ত একটি চিঠি ডিএসইকে পাঠানো হয়েছে। এদিকে বিষয়টি নিয়ে ‘বংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ’-এর সভাপতি মিজান-উর-রশিদ চৌধুরী বলেন, যে কোন কোম্পানিকে তালিকাচ্যুত করা কিংবা ওটিসি মার্কেটে পাঠানো হলে মূলত ওই কোম্পানির পরিচালকরা সবচেয়ে বেশি লাভবান হন। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা চরম ক্ষতিগ্রস্ত হন। ডিএসই সাধরণ বিনিয়োগকারীর স্বার্থকে প্রাধান্য না দিয়ে কেন কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকের স্বার্থ রক্ষা করতে চাচ্ছেন, সেটা খতিয়ে দেখতে হবে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে। তবে তালিকাচ্যুতির প্রক্রিয়া শুরু করার আগে শেয়ার বাইব্যাক আইন করা উচিত।’ এদিকে বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ- যেসব কোম্পানিকে তালিকাচ্যুত করা হচ্ছে, সেগুলোর মতো আরও অনেক কোম্পানি বাজারে তালিকাভুক্ত রয়েছে। সেগুলো নিয়ে ডিএসই’র তেমন কোন ভূমিকা নেই। কোম্পানিগুলোকে তালিকাচ্যুত করার পেছনে কোন কারসাজি হচ্ছে কি-না সেটা স্পষ্ট হতে হবে। তাছাড়া সময়ে সময়ে তালিকাচ্যুতি বা ওটিসি মার্কেটে পাঠানো সংক্রান্ত গুজবে মার্কেটে হঠাৎ নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এতে ওইসব কোম্পানির শেয়ারের দর ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কমে যায়। তবে সঠিক কোন সিদ্ধান্ত না আসায় আবার দর বাড়ে ওইসব কোম্পানির। এভাবে মাঝখানে একটা কারসাজি চক্র মুনাফা লুটে নেয়। তাতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসব বন্ধ করতে হবে।
×