ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রলম্বিত হলো ৪০ বছরের আক্ষেপ মেটানোর পালা ...

প্রকাশিত: ০৬:৪৫, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৯

প্রলম্বিত হলো ৪০ বছরের আক্ষেপ মেটানোর পালা ...

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ আগের পাঁচ মোকাবেলায় তিনটিতেই ড্র। একটিতে জয়, হার একটিতে। জয়টি এসেছিল কবে, সেটা জানলে চোখ কপালে উঠে যাবে ... ৪০ বছর আগে! মঙ্গলবার ষষ্ঠ মোকাবেলায় অবশ্য জেতার কোন সুযোগ ছিল না। তবে যথেষ্ট সুযোগ ছিল হার এড়ানোর এবং একটি পয়েন্ট বাগিয়ে নেবার। কিন্তু চীনের রেফারি ঝ্যাং লেইয়ের একটি ভুলের কারণে তা আর হলো কই? ফিফা বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে এশিয়া অঞ্চলের ‘ই’ গ্রুপে বাংলাদেশ তাদের প্রথম ম্যাচে ০-১ গোলে হেরে গেছে আফগানিস্তানের কাছে (খেলার ২৭ মিনিটে জয়ী দলের ফারশাদ নূর জয়সূচক গোলটি করেন)। খেলা শেষ হবার মিনিট খানেক আগে বাংলাদেশ একটি পেনাল্টি পেতে পারতো। নিজেদের বক্সের ভেতরে এক আফগান ডিফেন্ডার বাংলাদেশের ফরোয়ার্ড নাবিব নেওয়াজ জীবনকে লাথি মেরে ফেলে দেন। সঙ্গে সঙ্গেই পেনাল্টির দাবিতে মুখর হয়ে ওঠেন বাংলাদেশের ফুটবলাররা। কিন্তু রেফারি সেই দাবি এক কথায় নাকচ করে দেন। ফলে শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশের ম্যাচে সমতায় ফেরার সব আশা-ভরসা। পুরো ম্যাচে আফগানিস্তানই প্রাধান্য বিস্তার করে খেলেছে। শারীরিকভাবে এবং উচ্চতায় তারা বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়েছিল। প্রথমার্ধে তাদেরই দাপট ছিল। তবে দ্বিতীয়ার্ধে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে লাল-সবুজরা। কখনও খাটে পাস, কখনও লম্বা পাস, দুই উইং দিয়ে আচমকা আক্রমণ করা ... সবই করেছে তারা। কিন্তু আসল কাজের কাজটিই অর্থাৎ গোল করতে পারেনি। তার ওপর ইনজুরি সময়ে জীবনের সেই ফাউলকে রেফারির আমলে না নেয়া। অনেকের মতে, রেফারি দৃষ্টিকটু ভুল করেছেন। এক. জীবনকে ফাউলের জন্য পেনাল্টি না দেয়া, সেই আফগান ডিফেন্ডারকে লাল কার্ড না দেখানো এবং জীবন ইচ্ছাকৃত ফাউল হবার অভিনয় না করলে তাকে কোন কার্ড না দেখানো। এর মাসুল দিতে হয়েছে বাংলাদেশকে ম্যাচে হেরে। খেলাটি হয়েছিল নিরপক্ষে ভেন্যু তাজিকিস্তানের দুশানবের রিপাবলিকান সেন্ট্রাল ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে। সেখানে আফগান দল এবং রেফারি ছাড়ও বাংলাদেশকে লড়তে হয়েছে আফগান দর্শকদের বিরুদ্ধেও। ওই স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে যত দর্শক হাজির হয়েছিলেন, তার ৯০ শতাংই ছিলেন আফগান! মনে হচ্ছিল, খেলাটি যেন দুশানবেতে নয়, অনুষ্ঠিত হচ্ছে কাবুলে! যেখানে বাংলাদেশের ফিফা রাংকিং ১৮৩, সেখানে আফগানিস্তানের রাংকিং ১৪৯। তবে সার্বিকভাবে বাংলাদেশ এই ম্যাচে হারলেও খুব একটা খারাপ খেলেনি। প্রতিরোধ গড়ার পাশাপাশি সমানতালে দ্রুতগতির ফুটবল খেলার চেষ্টা করেছে। এ থেকে মনে হয়েছে, পরের ম্যাচে (ফিরতি ম্যাচ, যেটা অনুষ্ঠিত হবে ঢাকায়, আগামী ২০২০ সালের ২৬ মার্চ) একটু চেষ্টা করলেই কাবুলিওয়ালাদের দেশকে হারের স্বাদ উপহার দেয়া সম্ভব দীর্ঘ ৪০ বছর পর। আফগানিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশ প্রথম ম্যাচটি খেলে ১৯৭৯ সালের ১২ জানুয়ারি। এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের সেই খেলাটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল ঢাকায় এবং তাতে ২-২ গোলে ড্র করেছিল বাংলাদেশ। ওই একই বছরের ৫ মার্চ ফিরতি ম্যাচে ঢাকায় ৪-১ গোলে জিতেছিল লাল-সবুজ বাহিনী। সেই শেষ। তারপরের ম্যাচগুলোতে শুধুই ড্র আর হার। ২০০৮ সালের ৬ জুন কলম্বোতে সাফ ফুটবলে ২-২ গোলে ড্র, ২০১৫ সালের ২ জুন ঢাকায় প্রীতি ম্যাচে ১-১ গোলে ড্র, ওই বছরেই ২৪ ডিসেম্বর ভারতের কেরালায় সাফ ফুটবলের গ্রুপ ম্যাচে ০-৪ গোলে হার। ফিফা বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে বাংলাদেশের পরের (দ্বিতীয় ম্যাচ) শক্তিশালী কাতারের বিরুদ্ধে, ঢাকায়, ১০ অক্টোবর। কাতার তাদের প্রথম ম্যাচে ৬-০ গোলে হারিয়েছে আফগানিস্তানকে। এছাড়া গোলশূন্য ড্র করেছে ভারতের সঙ্গে। এখন দেখার বিষয়, ফিরতি ম্যাচে আফগানদের হারিয়ে ৪০ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটাতে পারে কি না জেমি ডের শিষ্যরা।
×