ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কোম্পানি আইন

প্রকাশিত: ০৮:৫৭, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯

কোম্পানি আইন

বর্তমান সরকার যে ব্যবসাবান্ধব সেটি নানা সময়ে নানা উদ্যোগ ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ভেতর দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে। চলতি মাসের শুরুতে দেশের রফতানি খাতের সম্প্রসারণ এবং রফতানি বহুমুখীকরণসহ নতুন বাজার খুঁজে বের করার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার ব্যবসাবান্ধব সরকার। ব্যবসায়ীরাই ব্যবসা করবে, তাদের কাজে আমরা সহযোগিতা করব।’ যে কোন ব্যবসা করতে গেলে আইন অনুযায়ী কোম্পানি গঠনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে এই কোম্পানি গঠন অনেক সময়েই নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য বিড়ম্বনাময় হয়ে ওঠে। আনুষ্ঠানিকতা ও নিয়মের বেড়াজালে আটকে পড়ে কোম্পানি গঠন প্রক্রিয়াটি অনেক সময় দীর্ঘসূত্রতায় পর্যবসিত হয়ে পুরো আয়োজনটিই মুখথুবড়ে পড়ে। সরকার বিষয়টি সম্পর্কে অবগত এবং ব্যসায়ীদের কল্যাণ চায় বলেই কোম্পানি গঠন প্রক্রিয়াটি কিভাবে সহজ করা যায় সে ব্যাপারে অনেক চিন্তাভাবনা করেছে। তারই প্রতিফলন হিসেবে কোন একক ব্যক্তির কোম্পানি গঠনের সুযোগ রেখে ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইন সংশোধন করতে যাচ্ছে সরকার। এ জন্য বিদ্যমান আইনে ‘এক ব্যক্তি কোম্পানি’ নামে নতুন ধারা যুক্ত করা হচ্ছে। আইনের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ‘এক ব্যক্তি কোম্পানি’ বলতে এমন একটি প্রাইভেট কোম্পানিকে বোঝাবে যেখানে একজন মাত্র প্রাকৃতিক সত্তা বিশিষ্ট ব্যক্তি ওই কোম্পানির শেয়ার হোল্ডার হবেন। বিষয়টি যে প্রশংসাযোগ্য তাতে কোন সন্দেহ নেই। এর ফলে দেশে নতুন ব্যবসায়ী সম্প্রদায় গড়ে ওঠার উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখা দেবে। একই সঙ্গে নতুন নতুন ব্যবসাও চালু হবে। সার্বিকভাবে এতে দেশের ব্যবসা তথা অর্থনীতিতে সুবাতাস বয়ে যাবে বলে পর্যবেক্ষক মহল মনে করে। একক ব্যক্তির কোম্পানি গঠনের সুযোগ ছাড়াও দেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণ, ব্যবসা ও বিনিয়োগ সহজ করা, কোম্পানির সাধারণ পাওনাদার ও সংখ্যালঘু শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ সংরক্ষণকে গুরুত্ব দিয়ে আইন সংশোধন করা হচ্ছে। আইনের সংশোধিত খসড়ায় বিদ্যমান আইনের এ পরিবর্তনের পাশাপাশি যৌথ মালিকানা কোম্পানির পরিচালকের সংখ্যা ১৪ থেকে বাড়িয়ে কমপক্ষে ২১ জন করা হচ্ছে। প্রস্তাবিত আইনে কোম্পানি গঠন প্রক্রিয়াও আগের তুলনায় সহজ করা হচ্ছে। সহজে ব্যবসা করার সূচকে উন্নতির লক্ষ্যে সরকার এসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগের আইনে দেশে এক ব্যক্তি মালিকানার কোম্পানি গঠনের সুযোগ না থাকলেও একক পরিবারের মালিকানাধীন অনেক কোম্পানি রয়েছে। মালিকানার নিয়ম মানতে গিয়ে অনেক বেনামী শেয়ার রাখার ঘটনাও আছে। ফলে এক ব্যক্তির মালিকানার কোম্পানি গঠনের সুযোগ চালু হলে এতে বিড়ম্বনা যেমন কমে আসবে, তেমনি স্বচ্ছতাও দেখা দেবে। বিশেষজ্ঞরাও মনে করছেন, একজনের মালিকানায় কোম্পানি গঠনের সুযোগ দেয়ার পদক্ষেপ ভাল উদ্যোগ। এতে শুধু আইন পরিপালনের জন্য কোম্পানির নামমাত্র অংশীদার বা পরিচালক তৈরির দরকার হবে না। দেশের উদ্যোক্তারা অনেকদিন ধরেই এক ব্যক্তির কোম্পানি খোলার সুযোগ চেয়ে আসছেন। এ ধরনের কোম্পানির নামের শেষে ‘ওয়ান পারসন কোম্পানি’ বা ওপিসি লেখা থাকবে। আইনটিকে ব্যবসায়ী মহল ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করে দেশের অর্থনীতিকে বেগবান করায় ফলপ্রসূ ভূমিকা রাখবেÑ সেটাই প্রত্যাশিত।
×