ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ

শরৎ ॥ শুভ্র মেঘের সারি

প্রকাশিত: ১২:৫৪, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯

শরৎ ॥ শুভ্র মেঘের সারি

‘এ কি অপরূপ রূপে মা তোমায় হেরিনু পল্লী-জননী।’ কবি যেন যথার্থই বলেছেন। কারণ প্রকৃতির অপরূপ রূপের সৌন্দর্য নিয়ে গঠিত বাংলাদেশ। সবুজ রঙের অপূর্ব চিত্রকর্ম মন কাড়ে সবার। শস্য-শ্যামল দেশটি বহুগুণে গুণান্বিত। দেশটির এ সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে ছয়টি ঋতু। গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত- তার আপন মহিমা নিয়ে হাজির হয় আমাদের সামনে। নানাবিধ রূপের ছটায় থমকে দাঁড়ায় পথিকবর। আটষট্টি হাজার গ্রামবাংলার সবুজ-শ্যামল রূপ কবিদের মনেও আনন্দের হিল্লোল বয়ে আনে। শিল্পীর কণ্ঠে আনে গান। চিত্রকরের তুলিতে আনে বর্ণিল আবহ। কৃষকের মনে আনে প্রশান্তি, দেহে আনে বল। প্রত্যেকটি ঋতুর আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য হাজির হয় আমাদের সামনে। তাই তো বলা যায়, ‘এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে না কো তুমি।/ সকল দেশের রানি সে যে আমার জন্মভূমি।’ কবির এ কথা তাই বারবার মনে পড়ে। সেই ‘সকল দেশের রানি’র জন্য শরৎকাল যেন ঋতু বৈচিত্র্যের এক অপার বিস্ময়। আমরা জানি, ষড়ঋতুর বাংলাদেশে ভাদ্র ও আশ্বিন মাস শরৎকাল। ছয়টি ঋতুর মধ্যে তৃতীয় ঋতু হচ্ছে শরৎ। এও জানি যে, শরৎকে ইংরেজীতে ‘অটাম’ বলা হয়। আর উত্তর আমেরিকায় একে ‘ফল’ হিসেবে ডাকা হয়। পৃথিবীর চারটি প্রধান ঋতুর একটি হচ্ছে এই শরৎকাল। উত্তর গোলার্ধে সেপ্টেম্বর মাসে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে মার্চ মাসে শরৎকাল গ্রীষ্মকাল ও শীতকালের মধ্যবর্তী ঋতু হিসেবে আগমন করে। এ সময় রাত তাড়াতাড়ি আসে এবং আবহাওয়া ঠা-া হতে থাকে। এ সময়ের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- গাছের পাতা ঝরে যাওয়া। প্রকৃতিতে শরতের ফুল হচ্ছেÑহিমঝুরি, গগনশিরীষ, ছাতিম, পাখিফুল, পান্থপাদপ, বকফুল, মিনজিরি, শেফালি বা শিউলি, হাস্নাহেনা, কলিয়েন্ড্রা ও কাশফুল প্রভৃতি। অন্য ফুলের নাম না জানলেও এই কাশফুল, পরিষ্কার নীল আকাশ আর সবুজ মাঠ-শব্দগুলো শুনলেই মনে আসে ঋতুর রানি শরতের নাম। শরৎ তার আপন মহিমায় সবার অন্তরে জায়গা করে নিয়েছে। জায়গা করে নিয়েছে কবি-সাহিত্যিকদের অন্তরেও। তাই তো কবিগুরু বলেছেন, ‘শরৎ, তোমার অরুণ আলোর অঞ্জলি,/ছড়িয়ে গেল ছাপিয়ে মোহন অঙ্গুলি।/ শরৎ, তোমার শিশির-ধোয়া কুন্তলে/ বনের-পথে-লুটিয়ে পড়া অঞ্চলে/ আজ প্রভাতের হৃদয় ওঠে চঞ্চলি।’ এভাবেই বাঙালীর সামনে শরতের সৌন্দর্য উপস্থাপন করেছেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। অন্যত্র শুভ্রতার ঋতু শরতের বর্ণনা দিয়ে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এভাবেই পঙ্ক্তিমালা সাজিয়েছেন, ‘আজিকে তোমার মধুর মুরতী/ হেরিণু শরৎ প্রভাতে/ হে মাত বঙ্গ শ্যামল অঙ্গ/ ঝরিছে অনল শোভাতে।’ এমনকি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রাচীন গ্রন্থ ‘কুশজাতক’ কাহিনী অবলম্বন করে ‘শাপমোচন’ নৃত্যনাট্যও রচনা করেছেন। রবীন্দ্রনাথ ছাড়াও সাহিত্যে কাশফুলের কথা নানাভাবে এসেছে। শরতের সৌন্দর্য বর্ণনায় পিছিয়ে নেই বিদ্রোহী কাজী নজরুল ইসলামও। তিনি বলেছেন, ‘এসো শারদ প্রাতের পথিক এসো শিউলী বিছানো পথে/ এসো ধুইয়া চরণ শিশিরে এসো অরুণ কিরণ রথেÑ’ জাতীয় কবির এমন কথামালা শরতের সৌন্দর্যেরই মূর্তিমান বহিঃপ্রকাশ। শুধু তা-ই নয়, তিনি শরতের শিউলি ফুল নিয়ে গেয়েছেন, ‘শিউলী ফুলের মালা দোলে/ শারদ রাতের বুকে ঐ।’ প্রকৃতির কবি জীবনানন্দ দাশ এ ঋতুর চরিত্রের সঙ্গে তুলনা করেছেন প্রিয়তমাকে। তিনি তার ‘এখানে আকাশ নীল’ কবিতায় লিখেছেন, ‘এখানে আকাশ নীল/ নীলাভ আকাশজুড়ে সজিনার ফুল/ ফুটে থাকে হিম শাদা/ রং তার আশ্বিনের আলোর মতন।’ তাই বলা যায়, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দÑএরা সবাই বারবার শরতের প্রশংসা করেছেন। এছাড়া জনপ্রিয় বাংলা গানও রয়েছে শরৎ বন্দনার। উৎপল সেন লিখেছিলেন, ‘আজি শরতের আকাশে মেঘে মেঘে স্বপ্ন ভাসে।’ কবি-সাহিত্যিকগণ শরৎকে বলেছেন শুভ্রতার প্রতীক! কেননা সাদা কাশফুল, শিউলি, স্নিগ্ধ জ্যোৎস্না, দিনভর আলো-ছায়ার খেলা নিয়েই তো শরৎ। শরৎকালের প্রথম মাস অর্থাৎ ভাদ্রের শুরু থেকেই শরতের আবির্ভাবটা লক্ষণীয়। শরতের স্নিগ্ধতা এককথায় অসাধারণ! জলহারা শুভ্র মেঘের দল যখন নীল, নির্জন, নির্মল আকাশে পদসঞ্চার করে তখন আমরা বুঝতে পারি শরৎ এসেছে। শরতের আগমন সত্যিই মধুর। শরৎ মানেই প্রভাতের শিশিরভেজা শিউলি, ঝিরিঝিরি বাতাসে দোল খাওয়া ধবধবে কাশবন, পদ্ম-শাপলা-শালুকে আচ্ছন্ন জলাভূমি শরতের চিরকালীন রূপ। এককথায় শিউলি ফোটার দিন। কাশফুলের দিন। নানা রকমের ফুলদলের মধুগন্ধ বিলানোর দিন। নদীর পাড়ে কিংবা জলার ধারে ফোটে রকমারি কাশফুল। পাশাপাশি হাস্নাহেনা, ছাতিম, জারুল ও মল্লিকার রূপ-গন্ধ মোহিত করে সবাইকে। শরতের সকাল শান্ত-স্নিগ্ধ, মিষ্টি আমেজ মাখা। সূর্যরশ্মি পড়ে যেন মনে হয় মুক্তার দানা। বাতাসে শিউলি ফুলের সুগন্ধ ম-ম করে। ছোটরা শিউলি ফুলের মালা গেঁথে অনাবিল আনন্দ পায়। কখনো কখনো প্রেমিকা আপনমনে মালা গাঁথে। প্রেমিকপ্রবর তার প্রিয়তমার খোঁপায় গুজে দেন শিউলি ফুলের মালা। আবার কখনো মেঘের আড়ালে সূর্য হারিয়ে যাওয়া। শরৎ আসে মূলত মেঘ-রৌদ্রের লুকোচুরির ভেতর। কখনো ধুমধাম বৃষ্টি, কখনো কাঠফাটা রোদ্দুর। কাঠফাটা রোদ্দুরের পর হঠাৎ বৃষ্টি। শরতের জ্যোৎস্নার মতো নির্মল স্বচ্ছ জ্যোৎস্না অন্য ঋতুতে মেলা ভার। বিস্তীর্ণ স্বচ্ছ জলরাশির ওপর ভেসে বেড়ানো ডিঙ্গি নৌকা; ওপরে নীলাকাশে পূর্ণিমার চাঁদ। স্বচ্ছ স্থির পানিতে সেই চাঁদের প্রতিবিম্ব। তাই তো তন্বী মজুমদার বলেছেন, ‘অনুপম রূপ সৌন্দর্যময়-স্ফিত শরৎ ঋতু ‘শারদ লক্ষ্মী’ নামে পরিচিত। বর্ষণ-বিধৌত, মেঘমুক্ত আকাশের সুনীল রূপ-কান্তি, লঘুভার মেঘের অলস-মন্থর নিরুদ্দেশ যাত্রা, আলো-ছায়ার লুকোচুরি, শিউলি ফুলের মন উদাস করা গন্ধ, প্রভাতের তৃণ-পল্লবে নবো শিশিরের আল্পনা, তাতে প্রভাত-সূর্যের রশ্মিপাত ও শুভ্র জোছনা পুলকিত রাত্রিÑ এই অনুপম রূপ নিয়ে বাংলার বুকে ঘটে শারদ লক্ষ্মীর আনন্দময় আবির্ভাব।’ কিংবদন্তি চিত্রশিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘শরৎ যে এত সুন্দর আগে হয়ত বাঙালী জানতোও না। রবীন্দ্রনাথই তাঁর গান, কবিতার মাধ্যমে সবাইকে শরৎকাল উপভোগ করতে শিখিয়েছেন। তাঁর গানগুলো শুনলেই শরতের সমস্ত সৌন্দর্য ধরা পড়ে।’ তিনি আরও বলেন, ‘গ্রামের বধূ যেমন মাটি লেপন করে নিজ গৃহকে নিপুণ করে তোলে, তেমনি শরৎকাল প্রকৃতিকে সুন্দর করে সাজিয়ে দেয়। বর্ষার পরে গাছগুলো সজীব হয়ে ওঠে। আকাশে হালকা মেঘগুলো উড়ে উড়ে যায়।’ মহাকবি কালিদাস শরতের রূপ-সৌন্দর্য বর্ণনা করতে গিয়ে লিখেছেন, ‘প্রিয়তম আমার, ঐ চেয়ে দেখ,/ নব বধূর ন্যায় সুসজ্জিত শরৎকাল সমাগত।’ কবিতায় তিনি শরৎকালকে নববধূর সঙ্গে তুলনা করেছেন। শরৎকালকে তিনি নববধূর মতো সুসজ্জিত বলে আখ্যা দিয়েছেন। যে রূপ সবারই দৃষ্টি আকর্ষণ করে। শুধু কালিদাসই নন; বাংলা সাহিত্যের আদি মধ্যযুগের কবি চন্ডীদাসের কবিতায়ও শরৎকে তুলে ধরা হয়েছে। কবি শরতের প্রসঙ্গ তুলে ধরেছেন এভাবে, ‘ভাদর মাসে অহোনিশি অন্ধকারে।/ শিখি ভেক ডাহুক করে কোলাহলে/ তাওনা দেখিবো যবে কাঞ্চির মুখ/ চিন্তিতে চিন্তিতে মোর ফুটি জায়ির বুক।’ বহুল পঠিত মহাকাব্য পদ্মাবতীর কবি আলাওল তার কাব্যের ‘ষট ঋতু বর্ণন খ-ে’ শরতের রাত যাপনের এক মিলন মধুর দৃশ্যের অবতারণা করেছেন।// কবি বলেছেন, ‘আইল শরৎ ঋতু নির্মল আকাশ।/ দোলায় চামর কাশ কুসুম বিকাশ।’ বাস্তব কিংবা সাহিত্যে, স্বপ্ন কিংবা অবলোকনে শরৎ হচ্ছে মেঘের ঋতু, স্পষ্টতার ঋতু। কেননা শরতের আকাশ থাকে ঝকঝকে পরিষ্কার। নীল আকাশের মাঝে টুকরো টুকরো সাদা মেঘ যেন ভেসে বেড়ায়। শরৎ মানেই নদীর তীরে কাশফুল। শরৎ মানেই গাছে গাছে হা¯œাহেনা আর বিলে শাপলার সমারোহ। শরৎ মানেই গাছে পাকা তাল। সেই তাল দিয়ে তৈরি পিঠা-পায়েস। আর ক্ষেতে ক্ষেতে আমন ধানের বেড়ে ওঠা চারা। কিন্তু কালের বিবর্তনে যেন গ্রামে-গঞ্জে কাশফুলের আধিক্য কমে গেছে। কমে গেছে তালগাছ। মাঠে নেই আমন ধান। নগরায়ন আর কাল-কারখানার দৌরাত্ম্যে হারিয়ে যাচ্ছে সবই। তাতে বিরূপ প্রভাব পড়ছে প্রকৃতিতেও। তাই তো মনে দারুণ কষ্ট নিয়ে মুস্তাফা মনোয়ার বলেছেন, ‘আমরা মানুষরা শুধু লোভীর মতো প্রকৃতির কাছ থেকে খাদ্য চাই। কিন্তু প্রকৃতিকে টিকিয়ে রাখার জন্য কিছুই করি না। যেমন আগে প্রায় প্রতিটি গ্রামে বটগাছ দেখা গেলেও এখন তেমনটা চোখে পড়ে না। মানুষ নিজের প্রয়োজনে সেগুলো কেটে ফেলেছে। অথচ আগে এই বটগাছকে কেন্দ্র করে কত উৎসব হয়েছে। বটগাছের ছায়ায় মানুষ বিশ্রাম নিয়েছে। আশ্রয় নিয়েছে কতরকম পাখি আর পোকামাকড়। কিন্তু এখন আর সেসব নেই।’ আমরা কি জানি যে, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ছাড়াও বৈষয়িক কাজে লাগে কাশফুল। না জানলে জেনে রাখা ভালো, শুভ কাজে কাশফুলের পাতা বা ফুল ব্যবহার করা হয়। মূল ব্যবহার হয় ঔষধি হিসেবে। কাশফুলের বেশ কিছু ঔষধি গুণ রয়েছে। যেমন- পিত্তথলিতে পাথর হলে নিয়মিত গাছের মূলসহ অন্যান্য উপাদান দিয়ে ওষুধ তৈরি করে পান করলে পিত্তথলির পাথর দূর হয়। কাশমূল বেটে চন্দনের মতো নিয়মিত গায়ে মাখলে গায়ের দুর্গন্ধ দূর হয়। শরীরের রং কালো হলে, দিনদিন তা শুভ্র হয়ে ওঠে। এছাড়াও শরীরে ব্যথানাশক ফোঁড়ার চিকিৎসায় কাশের মূল ব্যবহৃত হয়। গবেষকরা বলছেন, কাশফুলের উদ্ভিদতাত্ত্বিক বৈজ্ঞানিক নাম হলো ঝধপপযধৎঁস ংঢ়ড়হঃধহবঁস. এরা ঘাসজাতীয় জলজ উদ্ভিদ। চিরল পাতার দু’ধারে খুবই ধার। পালকের মতো নরম এর সাদা ফুল। আর তাই তো শরৎ বলতেই আমরা যেন শুধু কাশফুল বুঝি। নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা। মাঠজুড়ে কাশফুলের কোমড় দোলানো নৃত্য। এই তো যেন শরতের বৈশিষ্ট্য। তাই শরৎ এলেই আমরা হারিয়ে যেতে চাই কাশবনে। তবে কাশফুল ছাড়াও শরতের অন্যান্য বৈশিষ্ট্য ফেলে দেওয়ার মতো নয়। ভাদ্র মাসের পাকা তালও লোভনীয় ফল। তালের পিঠা ও পায়েস জিভে জল এনে দেয়। সবুজ ধানের চারা কদিন পরেই সোনালি রং পাবে। আমন ধানের সবুজ চারার ওপর ঢেউ তোলে উদাসী হাওয়া। ফসলের মাঠের একপাশ দিয়ে বয়ে চলা নদীর রুপালি ধারায় সূর্যের আলো ঝলমল করে। স্বচ্ছ জলে পুঁটি, খলসে, চান্দা মাছের রুপালি শরীরের আভা ভেসে ওঠার অপেক্ষায় থাকে ধ্যানরত মাছরাঙা। বিলের জলে অগণিত ফুটে থাকা সাদা, গোলাপি ও লাল শাপলা যেন জড়াজড়ি করে আছে। কী যে তার অপার সৌন্দর্য! হা¯œাহেনার সুরভিত সৌরভ মানুষের মন হারানোর জন্য যথেষ্ট। ছাতিম, জবা, মালতি, মল্লিকা, জুঁই তো আছেই। শরতের কোন রূপের কথা বলবো? সব রূপই তো মানুষের মনে আনন্দ জাগায়। জাগায় ভালোবাসা। ভাদ্র মাসের দাবদাহে কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি। মানুষের ক্লান্ত মনে এনে দেয় স্বস্তি। এই হঠাৎ বৃষ্টি আবার হঠাৎ রোদ। আবার কখনো রোদের মধ্যেই বৃষ্টির হানা। এই মেঘ-রৌদ্রের এমন লুকোচুরি খেলা আনন্দ দেয় শিশুদের। শিশুরা তখন সমস্বরে গেয়ে ওঠে, ‘রোদ হচ্ছে বৃষ্টি হচ্ছে, খেকশিয়ালের বিয়ে হচ্ছে।’ শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতিতে প্রকৃতি বিশাল প্রভাব ফেলে। সে বর্ষা, বসন্ত, শরৎ বা হেমন্তই হোক না কেন? তাই তো শরতের সৌন্দর্য বর্ণনায় পিছিয়ে নেই আধুনিক কবিগণও। কবি ভবানী প্রসাদ মজুমদার লিখেছেন, ‘শরৎ এলো কী উল্লাসে কাঁপছে নদীর জল/ পাখনা মেলে বেড়ায় খেলে প্রজাপতির দল,/ বাজলো কাঁসর সাজলো আসর চলরে সবাই চল/ মন-গালিচায় বন গালিচায় নামলো খুশির ঢল।’ বর্তমান সময়ের অন্যতম কবি নির্মলেন্দু গুণ শরতের চিত্র আঁকেন এভাবে, ‘সবে তো এই বর্ষা গেল/ শরৎ এলো মাত্র,/ এরই মধ্যে শুভ্র কাশে/ ভরলো তোমার গাত্র।/ ক্ষেতের আলে মুখ নামিয়ে/ পুকুরের ঐ পাড়টায়,/ হঠাৎ দেখি কাশ ফুটেছে/ বাঁশবনের ঐ ধারটায়।’ কাশবন, নীল আকাশ, সাদা মেঘ, সবুজ মাঠ, ফুলের সৌরভÑ সবই তো শরতের উপাদান। অন্য সব ঋতুর মাঝেও শরতের আবেদন অস্বীকার করার উপায় তো নেই। তবে যেভাবে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটছে, তাতে আতঙ্কিত হতেই হয়। এই উপাদানগুলো যদি প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যায়। তবে কি আমরা শরৎকে আর খুঁজে পাবো? তখন কি চিনতে পারবো একে? আমরা কি বলতে পারবো আমাদেরও শরৎকাল ছিল।
×