হু আর ইউ?
তোমাকে তো চিনতে পারছি না।
কি করে পারবে? আমার তো আগের চেহারা নেই।
তবে আমি তোমাকে গন্ধ শুঁকেই চিনেছি।
-কেন? তুমি কি চোখে দ্যাখ না?
-তা বলতে পার, আজকাল কানেও কম শুনি।
-এ জন্যই তো প্রথমবারই কথা বলার সময় তোমার কানের কাছে এসে কথা বলেছি।
-বেশ করেছ, তোমার বুদ্ধি আছে। শুধু আমাকে চিনতে পারলে না এই আফসোস।
-চিনতে পারলাম না আমি আর আফসোস করছ তুমি, এ কেমন কথা।
-এটাই সত্য কথা- কিছুদিন আগে আমিও আমাকে চিনতে পারি নাই। জঙ্গলে ঢাকা ছিলাম-আজই জঙ্গল পরিষ্কার করা হয়েছে।
-এ জন্যই কিছু পুরনো ইট দেখা যাচ্ছে।
-তা হলে পুরনো ইটগুলো তোমার চোখে পড়েছে।
-এটা তো সবারই চোখে পড়ছে।
-তবু তোমার মতো কেউ আমাকে জিজ্ঞেস করেনি।
-হয়তো তারা তোমাকে বিরক্ত করতে চায়নি।
-তারা কি মহত্ত্ব দেখিয়েছে?
-জানি না, হয়ত ব্যস্ততার জন্য কথা বলতে পারেনি।
-তোমার ব্যস্ততা নেই।
- আছে, তবে এর মাঝেও আমি কথা বলি গান করি। এক গাছ থেকে আরেক গাছে উড়ে বেড়াই। আমি যে এ দেশের জাতীয় পাখি দোয়েল।
-এ কারণেই তোমার কণ্ঠস্বর শুনে তোমাকে আমি চিনতে পেরেছি। আমার পাশে যে দেবদারু গাছ আছে ওর ডালে বসে তুমি কতবার নাচানাচি করেছ। শালিকের সাথে সখ্যতা করতে চেয়েছে।
-ওরা বড় হিংসুটে
-ও কথা বলছ কেন?
-বারে! আমি বুঝি নাÑ আমাকে জাতীয় পাখি করা হলো আর ওদের-কিছুই করা হলো না, ওরা মনে মনে হিংসা করে না।
-তা করবে কেন? পাখিরা হিংসা
কাকে বলে তাই জানে না।
-গাছেরাও হিংসা করতে জানে না। দেবদারু গাছটি দোলে উঠল-দোয়েল বলল কী দেবদারু ভাই ভূমিকম্প হচ্ছে নাকি?
-না দাদা, একটু দোলতে ইচ্ছে হলো একটু দোল খেলাম। গাছেরা তো নড়াচড়া করতে পারে না। একটু দোল খায়Ñ একটু আড়মোড় ভাঙ্গে আবার যেখানে ছিল সেখানেই স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।
-তুমি কতদিন এখানে দাঁড়িয়ে আছ?
- তুমি যার সাথে কথা বললে তার চেয়েও বহু আগে এখানে আমার পয়দা হয়েছে।
-তুমি এই পুরনো ভাঙ্গা ইট পাথরকে চিন?
-শুধু আমি কেন, এই তালগাছ চিনে, ঐ আমলকী গাছ চিনে, পাশের ঐ কদম গাছটি চিনে।
-শুধু আমি চিনি না।
-আমরা তো মাটিতে থাকি, এ দেশের পৃথিবী ধূলিকণাকে আমরা ভালবাসি এ জন্য দেখ না, যত বড় ঝড়ই আসুক, যত ভয়াবহ বন্যাই হোক, যত ভয়াবহ যুদ্ধই বাধুক আমরা মাটি আগলে দাঁড়িয়ে থাকিÑ দোয়েল পাখি কান্না করতে লাগল। শালিক বললÑ তুমি কাঁদ কেন?
-বুঝবে না।
-ঐ ভাঙ্গা ইটের টুকরোগুলো বুঝেছে তোমার বোঝার ক্ষমতা নেই।
-তা বলতে পার। ওজনে আমি কি তোমার কম, ঘিলু কি আমার চেয়ে তোমার বেশি।
-তুমি যা ইচ্ছা বলতে পার।
এই সময় কাক এসে কা কা শুরু করল। বক এসে শিমুল গাছে বসে ঝিমুতে লাগল, চিল এসে চি চি করে উঠল।
-দেবদারু বলল তোমরা থাম, ভাঙ্গা ইটের টুকরোগুলোর দিকে তাকাও।
-কেন?
-ওগুলো শুধুমাত্র ইটের টুকরো নয় শহীদের কবর, ওদের শান্তিতে ঘুমাতে দাও।
-দোয়েল বলল- ওমা, তাই নাকি? শহীদ ভাইয়েরা তোমাদের ছালাম। বৃক্ষ সকল তোমাদের অভিনন্দন। সবাই চুপ চাপ।
কাক আবার কা কা করে ডাকল
-আবার কু ডাক ডাকলে কেন? বলল বক।
-তোমাদের সতর্ক করার জন্য।
-তুমি আমাদের কি সতর্ক করবে?
-সবার বিপদ আসছে।
-কি বলছ!
সাফ শুতরা শুরু হয়েছে, গাছ কাটা হবে, শহীদের কবর নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হবে, এখানে গড়ে উঠবে পেল্লাই দালান, বিশাল ইমারত।
-চড়ুই বলল-ভালই তো-
সবাই বিমর্ষভাবে বলল- হ্যাঁ ভাল। আমরা সবাই কল্যাণ কামনা করি, আমরা ভাল চাই।
কাক উড়ে যেতে যেতে জবাব দিলো-
-তা হলে- এত বিমর্ষ কেন?
-এত মন খারাপ কেন?
এত ভাবনা কেন?
দোয়েল বলল- ভাবনা কিসের? মানুষ নতুন জায়গায় গাছ লাগাবে, বিশুদ্ধ অক্সিজেন আসবে, নতুন শহীদ মিনার হবে শহীদের স্মরণ করবে, আর পাখিদের জন্য তৈরি হবে অভয়ারণ্য।
-তাই যেন হয়।
শীর্ষ সংবাদ: