ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

যৌন হয়রানি প্রতিরোধে আইন

প্রকাশিত: ০৮:৩২, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯

 যৌন হয়রানি প্রতিরোধে আইন

বাংলাদেশে নারী এবং শিশু নির্যাতন ও নিপীড়ন আশঙ্কাজনকভাবে দৃশ্যমান হচ্ছে। ভুক্তভোগীরা বিচারের আশায় মামলা-মোকদ্দমাও করে। প্রচলিত আইনে আসামিদের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়। কিন্তু কোন এক ফাঁক-ফোকরে আসামি জামিনে মুক্ত হয়ে বেরও হয়ে আসে। ফলে বিচারিক কার্যক্রম স্থবিরতা এবং দীর্ঘসূত্রতার আবর্তে পড়লে অপরাধীরা প্রকাশ্য দিবালোকে দাপটের সঙ্গে ঘুরে বেড়ায়। তার প্রভাব গিয়ে পড়ে আরও নতুন কোন অপরাধ সংঘটনের মাত্রায়। তাই সব সময়ই আশঙ্কা করা হচ্ছে বিচার প্রক্রিয়ার অপসংস্কৃতি থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যবস্থাপনাকে বের করে আনতে ব্যর্থ হতে থাকলে অন্যায় আর অসঙ্গতি শুধু বেড়েই চলবে না, নারী ও শিশুদের নিরাপত্তার বলয়টিও হুমকির মুখে পড়বে। ফলে নারী ও শিশু সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হলে প্রচলিত আইনকে যুগের চাহিদায় আরও আধুনিকায়ন এবং কঠোরভাবে প্রয়োগ করা সময়ের দাবি। এমন বাস্তবোচিত উদ্যোগটি গ্রহণ করে একটি আইনী খসড়া তৈরি হয় জাতীয় কন্যা শিশু এ্যাডভোকেসি ফোরামের মাধ্যমে। এই খসড়া প্রণয়নে গুরু দায়িত্ব পালন করে সংস্থাটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ নেয়ায় জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পীকার মোঃ ফজলে রাব্বি মিয়া বিশেষ সন্তোষ প্রকাশ করেন। শুধু তাই নয়, এমন সিদ্ধান্ত আরও আগে নেয়া উচিত ছিল সরকারী পক্ষ থেকে এই মর্মে নিজের অভিব্যক্তি বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি আরও বলেন, তাদের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে খসড়াটিকে পর্যায়ক্রমিক ধারায় এগিয়ে নিতে যা যা করা দরকার সবটাই করতে হবে। শেষ অবধি জাতীয় সংসদের মাধ্যমে আইন পাস হয়ে তা প্রয়োগ করাও সরকারের বিবেচনাধীন থাকবে। জাতীয় সংসদ ভবনের আইপিডি সম্মেলন কক্ষে ‘যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন ২০১৯’ হস্তান্তর সম্পর্কিত এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। নারী ও শিশু নির্যাতনের যে কঠিন অবস্থা সংশ্লিষ্টদের শঙ্কিত করে তুলছে তেমন প্রয়োজনীয় মুহূর্তে এই নতুন আইন জঘন্য নৃশংসতা প্রতিকারে বিশেষ সহায়ক হবে বলে উপস্থিত বক্তারা দৃঢ় মত পোষণ করেন। সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয় নারী ও কন্যা শিশুদের সুরক্ষায় রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমকে গতিশীল করা হলেও তাৎক্ষণিক শাস্তির বিধান তেমনভাবে স্পষ্ট হয় না। আর নারী ও কন্যা শিশুর নিরাপদ নির্বিঘ্ন বলয় সুনিশ্চিত না হলে বাংলাদেশ তার কাক্সিক্ষত স্বপ্নের দ্বারে পৌঁছাতে অনেক দেরি করবে। নারীদের ওপর শারীরিক সহিংসতা ও হত্যার মতো পাশবিক ঘটনায় বিব্রত অবস্থায় পড়া শুধু একতরফা দায়ভাগে নিষ্পত্তি করতে দেখা যায়। অনেক ক্ষেত্রে এমন অপকর্ম পুরুষদের দ্বারা সংঘটিত হলেও কিছু নারীও যে একেবারে ধোয়া তুলসীপাতা নয় তেমন ব্যাপারটিও বিবেচনায় রাখা সঙ্গত। মাঝে-মধ্যে দেখা যায় পারস্পরিক প্ররোচনার ভিত্তিতেই কিছু দুর্ঘটনা ঘটে গেলেও নারীদের সেভাবে সামনে আনা হয় না। সামাজিক অপসংস্কার, নারীর অধিকারহীনতা কিংবা তাদের অযৌক্তিক কর্মকান্ডে জড়িত হওয়া যেখানে নিজেরাও স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এমন অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। সুতরাং ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার-বিশ্লেষণই নয়, আইনী কার্যক্রমেও এমন বিষয়গুলো অধিভুক্ত করা বাঞ্ছনীয়, যাতে নির্দোষ আর নিরপরাধ কোন ব্যক্তি জঘন্য অন্যায়ের আবর্তে পড়ে না যায়। সবদিক বিবেচনায় রেখে ঘটনার যথার্থ প্রতিবেদন তৈরি করা, সঙ্গে আইনী ব্যবস্থায়ও তেমন বিধিনিষেধ উল্লেখ থাকলে কারও ওপর অবিচার হওয়া থেকে পুরো ব্যাপারকে বের করে আনা সম্ভব হবে। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমেই বিলটি জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা হবে। বাকি প্রাতিষ্ঠানিক কর্মযোগও সম্পন্ন করে যত দ্রুত সম্ভব আইনী কাঠামোতে তা প্রয়োগ করতে হবে। সরকার আর নারী ও শিশু বিষয়ক সংস্থাগুলোর মিলিত কার্যক্রমে আইনী বিধি যেন সংশ্লিষ্টদের সুরক্ষায় প্রয়োগ করতে কোন দীর্ঘসূত্রতার জালে আটকে না যায় এই বিষয়টিও লক্ষ্য রাখতে হবে।
×