ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

বগুড়ার গ্রামে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ॥ নির্মল পরিবেশে শিক্ষা

প্রকাশিত: ০৮:৫২, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯

 বগুড়ার গ্রামে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ॥ নির্মল পরিবেশে শিক্ষা

অনেকটা দূরের নিভৃত গ্রামে ঝকঝকে ভবন দেখে মনেই হবে না গ্রামও এত উন্নত! নিজের গাড়ি থাকলে পাকা সড়ক ধরে দ্রুত পৌঁছা যায়। সাধারণ পরিবহনে ট্রানজিট করতে হয়। তবে পৌঁছে প্রাণ জুড়িয়ে যায়। গ্রামের নাম আলিয়ারহাট। বগুড়া শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার উত্তর পশ্চিমে অবস্থান। গ্রামটি শিবগঞ্জ উপজেলার মধ্যে। উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার ভিতরে যেতে হয়। নিকট অতীতে পথঘাট ছিল কাঁচা। অবকাঠামো বলতে গেরস্ত বাড়ির পাকা ঘর। আর এখন রোসনাই। বিদ্যুতায়িত এই গ্রামে অনেক সরকারী প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। যার একটি- এতিম ও প্রতিবন্ধী ছেলেমেয়েদের কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে সমাজসেবা অধিদফতরের আওতায় প্রায় তিন একর জায়গায় প্রায় দেড় যুগ আগে নির্মিত হয়েছে। তবে চালু হয়েছে চার বছর আগে। প্রশাসনিক ভবন, প্রশিক্ষণ ভবন, প্রশিক্ষণার্থী নারী পুরুষদের আলাদা আবাসন (ডরমেটরি) ও হোস্টেল, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বাসভবন রয়েছে চারদিকে। সকল ভবন বহুতল। এই কেন্দ্রে ৫টি ট্রেডে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। আসন সংখ্যা একশ’জনের। প্রতিটি কোর্স ছয় মাসের। বর্তমানে কম্পিউটার মাল্টিমিডিয়া, টেইলরিং (দর্জি) ও মোটর ড্রাইভিংয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। স্থানীয় ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানের এতিম তরুণরা আসছে প্রশিক্ষণ নিতে। এদের বেশিরভাগই কোন না কোন শিশু পরিবারের সদস্য। প্রত্যন্ত গ্রামে কেন্দ্রটি স্থাপিত হওয়ায় প্রকৃতির নির্মল পরিবেশের মধ্যেই প্রশিক্ষণার্থীরা কারিগরি জ্ঞান শিখছে। তবে এখনও নারী ও প্রতিবন্ধী কেউ ভর্তি হয়নি। বিভাগীয় এই কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠার কথা ছিল রাজশাহীতে। পরে ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনায় উত্তরাঞ্চলের মধ্যবর্তী হওয়ায় বগুড়ায় কেন্দ্রটি স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়। ওই সময়ে শিবগঞ্জের আলিয়ারহাট গ্রামের এক ব্যক্তি উচ্চপদে থাকায় নিজের গ্রামকে সমৃদ্ধ করেন। গ্রামে অনেক সরকারী প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। কয়েকটি সরকারী প্রতিষ্ঠান পূর্নভাবে চালু করা যায়নি। কয়েকটি প্রতিষ্ঠান একেবারেই চালু হয়নি। শুধু অবকাঠামো দাঁড়িয়ে আছে। এর মধ্যে কারিগরি প্রতিষ্ঠানটি চালু হয়েছে। কেন্দ্রের মহা ব্যবস্থাপক (জিএম) ইফফাত তাসলিমা মুনিয়া জানালেন, আন্তরিকতা দিয়ে চেষ্টা করছেন প্রতিষ্ঠানটিকে উন্নত মর্যাদায় নিয়ে যেতে। ২০১৫ সালে হাতে গোনা প্রশিক্ষণার্থী নিয়ে চালু হয়। এর দুই বছর পর ২০১৭ সালে এই কেন্দ্রে ৬০ জন ভর্তি হয়। পরবর্তী কোর্সগুলোতে কখনও ৬০ জন কখনও ৭০ জন ভর্তি হয়। তারা মনোযোগ দিয়েই প্রশিক্ষণ নেয়। প্রশিক্ষকগণ চেষ্টা করেন সঠিকভাবে গড়ে তুলতে। তারপরও কিছু ঘাটতি রয়েই যায়। যেমন নারী ও প্রতিবন্ধী প্রশিক্ষণার্থী এখনও ভর্তি হয়নি। তাদের জন্য অভিজ্ঞ প্রশিক্ষক নেই। নারী প্রশিক্ষণার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব দেয়া দরকার। কেন্দ্রের জন্য সরকারী বরাদ্দ নিতান্তই কম। সীমিত বরাদ্দে সীমিত সাধ্যের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটিকে টিকিয়ে রাখা হয়েছে। এ জন্য সরকারী বরাদ্দ বাড়ানো জরুরী হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, মোটর ড্রাইভিং শেখার সঙ্গে অটোমোবাইল কোর্সটিও থাকা দরকার। কারণ ড্রাইভার মেকানিক্স হলে শেখা পূর্ণতা পায়। প্রতি সপ্তাহে থিওরিটিক্যাল ও প্রাক্টিক্যাল ক্লাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রশিক্ষণ শেষে বিআরটিএ থেকে ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য প্রয়োজনে সহযোগিতা করেন। মাল্টি মিডিয়া ও কম্পিউটার প্রশিক্ষণার্থীদের প্রতি সপ্তাহে পরীক্ষা নেয়া হয়। দশটি উন্নতমানের কম্পিউটারে প্রশিক্ষণার্থীরা আগ্রহ নিয়ে শিখছে। টেইলারিং কোর্সের প্রশিক্ষণে আধুনিক ধারা রয়েছে। যাতে কর্মজীবনে প্রবেশ করে হালফ্যাশনে যুক্ত হতে পারে। তবে পোলট্রি প্রশিক্ষণে আগ্রহী খুঁজে পাওয়া যায় না। গ্রামের তরুণরা মনে করে পোল্ট্রি আবার শিখতে হবে। তিনি মনে করেন পোল্ট্রি শিল্প হিসেবে গড়তে অবশ্যই প্রশিক্ষণ দরকার। কারণ প্রাণী পালনে (হাঁস মুরগি) অভিজ্ঞতার সঙ্গে টেকনিক্যাল জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। এ পর্যন্ত এই কেন্দ্র থেকে বিভিন্ন ট্রেডে প্রায় দুইশ’ জন প্রশিক্ষণ নিয়েছে। মোটর ড্রাইভিংয়ে ১০১ জন ও কম্পিউটারে ৪৭ জন। কেন্দ্রে তিনি ছাড়া একজন সহকারী জি এম ও সাতজন কর্মকতা কর্মচারী রয়েছেন। আউট সোর্সিং থেকে দৈনিক হাজিরায় চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়। আলিয়ারহাট গ্রামে একই সময়ে গড়ে উঠেছে ২০ শয্যার সরকারী হাসপাতাল, সরকারী নি¤œ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, পোস্ট অফিস, উন্নত গ্রোথ সেন্টার, ডাকবাংলো, এতিমখানা, আদর্শ ক্লাব ও পাঠাগার, শাহী মসজিদ, সান বাঁধানো পুকুর ঘাট। গ্রামের সংযোগে প্রায় ৫০ কিলোমিটার পাকা সড়ক নির্মিত হয়েছে। সরকারী হাসপাতালে কমিউিনটি ক্লিনিকের কার্যক্রম চলে। পোস্ট অফিস চালু হয়নি। ডাকবাংলো ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। এর মধ্যেই কারিগরি কেন্দ্রটি তবু চলছে। বলাবলি হয় বাকি সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো চালু হলে গ্রামটি দেশের অন্যতম গ্রামে পরিণত হবে। -সমুদ্র হক, বগুড়া থেকে
×