ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

উপকূলীয় জনস্বাস্থ্যের জন্য হিতকর কেওড়া ফল

প্রকাশিত: ০৮:৫৩, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯

উপকূলীয় জনস্বাস্থ্যের জন্য হিতকর কেওড়া ফল

সুন্দরবনের কেওড়া ফল উপকূলীয় মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য এক উপকারী ফল। এটি সহজলভ্য ফল। এ ফলটি উপকূল অধিবাসী ছাড়াও যে কোন মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য হিতকর। টক জাতীয় এ ফলটি খুবই সুস্বাদু এবং পুষ্টিগুণে ভরপুর। বর্তমানে এ ফলটি খুলনা জেলা শহরসহ উপকূলীয় এলাকার বিভিন্ন শহর ও হাটবাজারে পাওয়া যাচ্ছে। সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলীয় জেলা ও উপজেলাসমূহের লোকজন কেওড়া ফলের সঙ্গে ছোট চিংড়িসহ বিভিন্ন মাছ, মসুরি ও মটর ডাল রান্না করে খেয়ে থাকে। তাছাড়া, কেওড়া ফল হতে আচার ও চাটনি তৈরি করা হয়। এ ফল পেটের অসুখের চিকিৎসায় বিশেষত বদহজমে ব্যবহৃত হয়। এ ফলটিতে ডায়রিয়া ও ডায়াবেটিক প্রতিরোধী এবং ব্যথানাশক গুণাগুণ রয়েছে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় কেওড়া ফলের নান রকমের পুষ্টিগুণসহ বিভিন্ন বিষয় উঠে এসেছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুবি) রিসার্চ সেল কর্তৃক প্রদত্ত গবেষণা অনুদানের অর্থে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি এ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ডিসিপ্লিনের প্রফেসর ড. শেখ জুলফিকার হোসেন কেওড়া ফল নিয়ে গবেষণা করেন। তার এ সংক্রান্ত বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্রসমূহ একাধিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণাপত্রে তিনি উল্লেখ করেন, জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশকে চরম ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এসকল ঝুঁকির অন্যতম হলো সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং উত্তরাঞ্চল থেকে নদ-নদী সমূহে মিঠা পানির প্রবাহ হ্রাস পাওয়া। এর ফলে বাংলাদেশের সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের মাটি ও নদ-নদীতে সমুদ্রের পানি ঢুকে লবণাক্ততা এক চরম সমস্যা রূপে আবির্ভূত হয়েছে। এ অঞ্চলের ১০ লাখ হেক্টরের অধিক জমি লবণাক্ততায় আক্রান্ত। উপকূলীয় এলাকার অনাবাদী লবণাক্ত জমিতে কেওড়া ফলটি ব্যাপকভাবে জন্মানোর উদ্যোগ নিলে প্রান্তিক জনগণের বাড়তি আয়ের উৎস হবে, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষিত হবে এবং উপকূলীয় পরিবেশের গুণগতমানের উন্নয়ন হবে বলে মনে করেন তিনি। গবেষণা থেকে জানা যায়, কেওড়া গাছ সুন্দরবনে প্রচুর পরিমাণে জন্মে। তাছাড়া উপকূলীয় এলাকার নদ-নদীতে জেগে ওঠা নতুন চরে এ ম্যানগ্রোভ গাছ প্রাকৃতিকভাবে জন্মে থাকে। লবণাক্ততা সহিষ্ণু এ গাছে প্রচুর ফল হয় যা কেওড়া ফল নামে পরিচিত। সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলীয় জেলাসমূহের লোকজন কেওড়া ফলের সঙ্গে ছোট চিংড়ি মাছ ও মসুরির ডাল রান্না করে খেয়ে থাকে। তাছাড়া, কেওড়া ফল হতে আচার ও চাটনি তৈরি করা হয়। এ ফল পেটের অসুখের চিকিৎসায় বিশেষত বদহজমে ব্যবহৃত হয়। অন্যদিকে, সুন্দরবনে উৎপন্ন মধুর একটা বড় অংশ আসে কেওড়া ফুল হতে। তাই এ গাছটি হয়ে উঠতে পারে লবণাক্ততায় আক্রান্ত কর্দমাক্ত জমির বিশেষ ফসল। এ গাছ উপকূলীয় মাটির ক্ষয় রোধ করে মাটিকে দিবে দৃঢ়তা ও উর্বরতা, রক্ষা এবং লবণাক্ত পরিবেশের উন্নয়ন ঘটাতে পারে। খুবির বায়োটেকনোলজি এ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ডিসিপ্লিনের প্রফেসর ড. শেখ জুলফিকার হোসেনের গবেষণালব্ধ প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায় যে, কেওড়া ফলে রয়েছে প্রায় ১২% শর্করা, ৪% আমিষ, ১.৫% ফ্যাট, প্রচুর ভিটামিন বিশেষতঃ ভিটামিন সি এবং এর ডেরিভেটিভসমূহ। কেওড়া ফল পলিফেনল, ফ্লাভানয়েড, এ্যান্থোসায়ানিন, এ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট ও আনস্যাচুরেটেড ওমেগা ফ্যাটি এসিড বিশেষ করে লিনোলেয়িক এসিডে পরিপূর্ণ। তাই মনে করা হয়, ফলটি শরীর ও মনকে সতেজ রাখার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে কার্যকরী। চা-এর মতো এ ফলটিতে ক্যাটেকিনসহ বিভিন্ন ধরনের পলিফেনল প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। এদেশে প্রাপ্ত ফলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পলিফেনল রয়েছে আমলকীতে তারপরই হল কেওড়া ফলের অবস্থান। কেওড়া ফলে সমপরিমাণ আপেল ও কমলা লেবুর তুলনায় অনেক বেশি পলিফেনল ও পুষ্টি উপাদান রয়েছে। পলিফেনল শরীরে ডায়াবেটিক, ক্যান্সার, আথ্রাইটিস, হৃদরোগ, এলার্জি, চোখের ছানি, বিভিন্ন ধরনের প্রদাহসহ প্রভৃতি রোগ সৃষ্টিতে বাধা প্রদান করে। ফলটিতে আমলকী, আপেল ও কমলা ফলের তুলনায় বেশি পরিমাণ পটাশিয়াম, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেশিয়াম ও জিংক রয়েছে। এ ফলের রয়েছে ডায়রিয়া ও ডায়াবেটিক প্রতিরোধী এবং ব্যথানাশক গুণাগুণ। ফলটি ডায়রিয়া, আমাশয় ও পেটের পীড়ার জন্যে দায়ী ব্যাক্টেরিয়াকে কার্যকরীভাবে দমন করতে পারে। তাছাড়া, কেওড়া ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ পালমিটিক এসিড, এ্যাস্করবাইল পালমিটেট ও স্টিয়ারিক এসিড যা খাদ্য শিল্পে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণে এবং তৈরি খাদ্য সংরক্ষণে ব্যবহৃত হয়। -অমল সাহা, খুলনা অফিস থেকে
×