ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কাগজের প্যাকেটে আত্মনির্ভর গৃহবধূ শিল্পী বেগম

প্রকাশিত: ০৮:৫৫, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯

 কাগজের প্যাকেটে আত্মনির্ভর গৃহবধূ শিল্পী বেগম

সাঘাটা উপজেলার সাঘাটা ইউনিয়নের দক্ষিণ সাথালিয়া গ্রামের দরিদ্র গৃহবধূ আমিন মিয়ার স্ত্রী শিল্পী বেগম কাগজের প্যাকেট তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করছে। এই পেশাকে আঁকড়ে ধরে আত্মনির্ভর হিসেবে গড়ে উঠে তিনি গ্রামের অন্য নারীদের কাছে অনুকরণীয় হয়ে উঠেছেন। উল্লেখ্য যে, পিতার গৃহে শিল্পী বেগম লেখাপড়া শুরু করলেও অর্থাভাবে স্কুলের গন্ডি পার হতে পারেননি। স্কুলের বই-খাতা ফেলে রেখেই কম বয়সে তাকে হাল ধরতে হয়েছে স্বামীর সংসারে। ইতোমধ্যে স্বামী অসুস্থ হয়ে পড়ায় নিতে হয় সংসারের দায়িত্ব। বিগত ২০০৩ সালে তিনি নওগাঁ জেলায় বেড়াতে গিয়ে নারীদের এভাবে পিচবোর্ড দিয়ে প্যাকেট তৈরি করতে দেখেন। এ থেকেই তার মনে ইচ্ছে জাগে এভাবে প্যাকেট তৈরি করে তিনি তার চলমান দারিদ্র্য থেকে মুক্ত হতে পারেন। বাড়িতে এসে শিল্পী শপিং নামে একটি ব্যবসা দাঁড় করান। পরে উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে গিয়ে মিষ্টির দোকান, হোটেলসহ বিভিন্ন দোকানে গিয়ে তার তৈরি করা প্যাকেট দেখান এবং তা বাজারযাত করার প্রচেষ্টা চালান। এভাবে তার তৈরি প্যাকেটগুলোর গ্রাহক তৈরি হয়ে যায় এবং তিনি তা বিক্রি করে যথেষ্ট আয় করতে সক্ষম হন। শিল্পী বেগমের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিনি বগুড়ার করতোয়া পেপার হাউস থেকে প্যাকেটের নেভেল, পিচ বোর্ডসহ অন্যান্য মালামাল কিনে নিয়ে আসেন। পরে রাতে নিজেই প্যাকেটগুলো তৈরি করেন এবং সকালে স্বামী-স্ত্রী মিলে ভ্যানে করে দোকানে দোকানে গিয়ে নির্দিষ্ট গ্রাহকদের সরবরাহ করেন। এভাবেই প্রতিদিন দিনে খরচ বাদে ৪শ’ থেকে ৬শ’ টাকা পর্যন্ত আয় হয়। যা দিয়ে তার সংসারের সব ব্যয় নির্বাহ করা সম্ভব হয়। তাঁর এক মেয়ে ও দুই ছেলেকে নিয়ে সংসার। মেয়েটিকে ইতোমধ্যে বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে দুটি এখন লেখাপড়া শিখছে। তার স্বপ্ন প্রথম সন্তান আসাদুজ্জামানকে ডাক্তার বানাবে। যে এখন রাজশাহী ইউনির্ভাসিটিতে অনার্স (বাংলা) প্রথম বর্ষ লেখা পড়া করছে। ছোট ছেলে সোহানুর রহমান সাঘাটা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেণীর ছাত্র। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও যমুনা নদীর অব্যাহত ভাঙ্গনে তার জমাজমি বিলীন হয়ে গেছে। এখন মাত্র ৫ শতাংশ জমির ওপর বসতবাড়ি তুলে কোনমতে বসবাস করছেন। এ কারণেই অসুস্থ স্বামী ও সন্তানদের নিয়ে শিল্পী কিছুটা বিপাকে পড়েছেন। তবে তার আশা ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় একদিন সব সমস্যা সঙ্কট দূর হয়ে যাবে। তিনি তার এই ব্যবসাকে নির্ভর করেই নিজ পায়ে দাঁড়াবেন এবং সংসারের চাহিদা পূরণ করবেন। -আবু জাফর সাবু, গাইবান্ধা থেকে
×