ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ফিফা রেফারি জয়া যখন দর্শক আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু ...

প্রকাশিত: ০৯:২৯, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯

ফিফা রেফারি জয়া যখন দর্শক আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু ...

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ শুক্রবারের দুপুর। মেঘলা আবহাওয়া। সকালে এক পশলা বৃষ্টি হওয়াতে পল্টন মাঠটি কর্দমাক্ত। একটু পরেই শুরু হলো বসুন্ধরা কিংস বিএফএসএফ অনুর্ধ-১৪ একাডেমি কাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট (দেশে এ ধরনের টুর্নামেন্ট এই প্রথম)। সেদিন ছিল টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় দিন। প্রতিকূল আবহাওয়ার পরও খেলা উপভোগ করতে মাঠে হাজির উল্লেখযোগ্য সংখ্যক দর্শক। তারা অপেক্ষা করছে ফেনী এফএ বনাম ধলেশ্বরী এফএ দলের ম্যাচটি শুরু হবার। একটু পরেই দুই দল মাঠে নামলো। তাদের সঙ্গে মাঠে নামলেন ম্যাচের তিন রেফারিও। দর্শকরা বিস্মিত হয়ে দেখলো রেফারিরা সবাই নারী। ম্যাচের মূল রেফারিকেও দর্শকরা এক মুহূর্তেই চিনে ফেললো, মাঠে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়লো, ‘ওই যে ফিফা রেফারি জয়া চাকমা!’ দর্শকরা স্বভাবতই দু’দলের লড়াই দেখতে যতটা উদগ্রীব ছিল, তারচেয়েও বেশি উৎসুক ছিল রেফারি হিসেবে কিভাবে এবং কেমন ম্যাচ পরিচালনা করেন জয়া (খেলায় তাকে সহযোগিতা করেন আরও দুই সহকারী রেফারি আলেয়া আক্তার আলো এবং তাহমিনা আক্তার) খেলা শুরুর ১৫ মিনিটের মধ্যেই দর্শকরা বুঝে গেল কেমন কড়া রেফারি জয়া। ধলেশ্বরীর দুই ফুটবলারকে বলপ্রয়োগ করে খেলার অপরাধে বিনা দ্বিধায় দেখিয়ে দিলেন হলুদ কার্ড। উভয় দলের ফুটবলাররাও এতে সতর্ক হয়ে গেল। কেননা খেলার বাকি সময়টাতে আর কোন কার্ড বের করতে হয়নি জয়াকে! খেলা শেষেই জয়া মাঠ থেকে বেরিয়েই লক্ষ্য করলেন তার খেলা দেখতে মাঠে এসেছেন সিনিয়র রেফারি হাজী ইব্রাহিম নেসার। তাকে পায়ে ধরে সালাম করলেন জয়া। জানালেন কিভাবে ম্যাচ পরিচালনা করেছেন। শুনে মৃদু হেসে জয়াকে কিছু উপদেশ দিলেন নেসার। টুর্নামেন্ট কমিটির কাছে জানা গেল, এই আসরেও আরও কিছু ম্যাচে রেফারির ভ‚মিকায় দেখা যাবে জয়াকে। ফলে দর্শকরা যে এই আসরের খেলাগুলো দেখতে মাঠে উপচে পড়বে, তাতে কোন সন্দেহ নেই। সম্প্রতি দেশের হয়ে প্রথমবারের মতো ফিফার রেফারির খাতায় নাম লেখান বাংলাদেশের দুই নারী রেফারি। একজন জয়া চাকমা, অন্যজন সালমা আক্তার মনি। জয়া একসময় ছিলেন ফুটবলার। ২০১০ সালে রেফারিংয়ের জগতে আসেন। লেভেল ১, ২, ৩ কোর্স করে জাতীয় রেফারি হয়েছেন আগেই। কদিন আগে ফিফা রেফারি হওয়ার ফিটনেস টেস্টে সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়ে পরিণত হন বাংলাদেশের প্রথম নারী মহিলা ফিফা রেফারিতে। জয়ার সঙ্গে সহকারী রেফারি হিসেবে সালমাও আছেন এই তালিকায়। ২০২০ সালে এই দুজন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জাতীয় দলের ম্যাচ পরিচালনা করতে পারবেন। গত নয বছর ধরেই দেশ-বিদেশে নানা ফুটবল ম্যাচে রেফারির দায়িত্ব পালন করে আসছেন রাঙ্গামাটির মেয়ে জয়া। এছাড়া তিনি বিকেএসপি মহিলা ফুটবল দলের কোচও। কদিন আগেই ভারতে অনুষ্ঠিত সুব্রত কাপে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হবার পাশাপাশি হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন হবার গৌরব অর্জন করেছে জয়ার দলটি। খেলাধুলা নিয়ে থাকলেও লেখাপড়াটাও জয়া চালিয়ে গেছেন সমানতালে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে করেছেন মাস্টার্স। ডিপ্লোমা আছে স্পোর্টস সায়েন্সের ওপরেও। বাংলাদেশের প্রথম নারী ফিফা রেফারি হিসেবে সফল হবেন জয়া-এটাই ফুটবলপ্রেমীদের নিগুঢ় প্রত্যাশা।
×