ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এনামুল হক

ডিজিটাল ট্যাক্স ॥ অবশেষে ফ্রান্স-মার্কিন সমঝোতা

প্রকাশিত: ১২:১৪, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯

ডিজিটাল ট্যাক্স ॥ অবশেষে ফ্রান্স-মার্কিন সমঝোতা

ডিজিটাল ট্যাক্স নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের মধ্যে শেষ পর্যন্ত একটা সমঝোতা হয়েছে। ডিজিটাল সার্ভিস থেকে সে সব কোম্পানি ফ্রান্সে বছরে আড়াই কোটিরও বেশি ইউরো এবং বিশ্বব্যাপী ৭৫ কোটি ইউরো আয় করে থাকে তাদের আয়ের ওপর ফ্রান্স ৩ শতাংশ কর ধার্য করেছিল। প্রেসিডেন্ট ম্যাকো জুলাই মাসে এই সংক্রান্ত একটি আইনে স্বাক্ষর দেন। তবে তা ভূতাপেক্ষভাবে ১ জানুয়ারি ২০১৯ থেকে কার্যকর হয়। সুনির্দিষ্টভাবে আমেরিকার বৃহৎ টেক কোম্পানিগুলোকে টার্গেট করে এই কর আরোপ করা না হলেও ফ্রান্সে কারবার করা বৃহৎ টেক কোম্পানিগুলোর সিংহভাগই হলো আমেরিকান। মার্কিন টেক কোম্পানি এ্যামাজন, ফেসবুক ও গুগল এই করের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায় এবং একে বৈষম্যমূলক আখ্যা দেয়। ট্রাম্প প্রশাসনও এ ঘটনায় ফ্রান্সের ওপর ক্ষেপে যায় এবং প্রতিশোধমূলক কর আরোপের কথা ভাবতে থাকে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আমদানিকৃত ফরাসী মদের ওপর শুল্ক বসানোর উদ্যোগ নেন। গত ২৬ জুলাই এক টুইটে ট্রাম্প ফ্রান্সের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, ‘ফ্রান্স আমাদের বৃহৎ টেক কোম্পানিগুলোর ওপর ডিজিটাল ট্যাক্স বসিয়েছে। কেউ যদি তাদের ওপর কর ধার্য করে তাহলে সেটা তাদের নিজ দেশ আমেরিকারই ধার্য করা উচিত। ম্যাকোর এই নির্বুদ্ধিতার জবাবে শীঘ্রই আমরা বড় ধরনের পাল্টা ব্যবস্থা ঘোষণা করব। আমি সর্বদাই বলে এসেছি আমেরিকান মদ ফরাসী মদের চেয়ে ভাল।’ প্যারিসে জাতি গোষ্ঠীর শীর্ষ বৈঠকে যোগ দিতে যাওয়ার আগে ট্রাম্প আবারও ফ্রান্সের এই করের তীব্র সমালোচনা করেন এবং বলেন যুক্তরাষ্ট্র ফরাসী মদের ওপর শুল্ক বসাবে। বৈঠক শেষে এক সাংবাদিক সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ঘোষণা করেন যে তিনি ও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প টেক জায়েন্টগুলোর ওপর আরোপিত বিতর্কিত কর নিয়ে একটা সমঝোতায় পৌঁছেছেন। বৃহৎ টেক কোম্পানিগুলোর ওপর আরোপিত ৩ শতাংশ কর থাকছে। তবে ফরাসী সরকার অঙ্গীকার করেছে যে, যে সব দেশে এই টেক কোম্পানিগুলো চালু আছে সেখানে এসব কোম্পানির ওপর যথাযথভাবে কর ধার্যের একটা উপায় অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থা (ওইসিডি) বের করার সঙ্গে সঙ্গেই ফ্রান্সের এই কর বাতিল করে দেয়া হবে। গত কয়েক বছর ধরে ওইসিডি একসেট আদর্শ নিয়মনীতির মধ্য দিয়ে টেক কোম্পানিগুলোর ওপর যথাযথভাবে কর ধার্যের উপায় উদ্ভাবনে কাজ করছে। ওইসিডির ওই কাঠামো প্রকাশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ডিজিটাল ট্যাক্সের অবসান ঘটানো ছাড়াও ফ্রান্স প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে, যে সব কোম্পানি ওইসিডি কাঠামো প্রকাশ পাওয়ার আগে নির্ধারিত করের অতিরিক্ত কর দিয়েছে তাদের বাড়তি করের অর্থ ফেরত দেয়া হবে। দৃষ্টান্তস্বরূপ নতুন ফরাসী কর অনুযায়ী ফেসবুক যদি ২০১৯ সালে বিপুল অঙ্কের কর দিয়ে থাকে এবং তাদের যদি ওইসিডির কাঠামোর অধীনে তার চেয়ে কম কর দিতে হয় তাহলে যে বাড়তি কর ফেসবুক দিয়েছে সেই অর্থটা তাদের ফেরত দেয়া হবে। ট্রাম্পের সঙ্গে সমঝোতা সম্পর্কে বলতে গিয়ে ম্যাক্রোঁ বলেন, ফরাসী ডিজিটাল ট্যাক্স নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির কারণে যথেষ্ট উদ্বেগের সঞ্চার হয়েছে। আমরা এ নিয়ে কথা বলেছি এবং মনে হয় বেশ ভাল একটা সমঝোতা খুঁজে পেয়েছি। দ্বিপক্ষীয় ভিত্তিতে আমরা আমাদের মতানৈক্য দূর করার ব্যাপারে একমত হয়েছি। তবে ৭ জাতি শীর্ষ বৈঠকে ট্রাম্প ফ্রান্স-মার্কিন সমঝোতা যে হয়েছে তা নিশ্চিত করতে চাননি। ফ্রান্সের নতুন কর ধার্যের ক্ষেত্রে আয়ের যে সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে তাতে বেশিরভাগ ফরাসী কোম্পানি স্বচ্ছন্দে পার পেয়ে গেছে। করটি নির্দিষ্টভাবে এসে পড়েছে গুগল, এ্যাপল, ফেসবুক ও এ্যামাজনের ওপর। এর জন্য একে গাফা ট্যাক্সও বলা হয়ে থাকে। নয়া কর ঘোষণার পর মার্কিন প্রশাসন ফ্রান্সের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ১৯৭৪ সালের বাণিজ্য আইনের ৩০১ ধারার অধীনে ফরাসী কর নিয়ে তদন্ত শুরু করে। একই আইনের একই ধারা বলে যুক্তরাষ্ট্র চীনের ওপর শুল্ক আরোপের যৌক্তিকতা দেখিয়ে থাকে। গত ১৯ আগস্ট মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি রবার্ট লাইট থাইজার টেক কোম্পানিগুলোর আনুষ্ঠানিক অভিযোগ শোনেন। শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র কোন পাল্টা ব্যবস্থা নেয় কিনা তা এখনও দেখার বিষয়। তবে ফ্রান্স এই নতুন কর আরোপ করে মনে হয় ট্রাম্পকে তার নিজের ওষুধের স্বাদ কেমন তা টের পাইয়ে দিচ্ছে। বলা বাহুল্য, বাণিজ্য অংশীদারদের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই একতরফাভাবে পদক্ষেপ নিয়ে এসেছে। সূত্র : দ্য ইকোনমিস্ট
×