ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জান্নাতুল রুহানি

সাধারণ মানুষের ভরসা মোবাইল ব্যাংকিং

প্রকাশিত: ১২:১৫, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯

সাধারণ মানুষের ভরসা মোবাইল ব্যাংকিং

একটা সময় ছিল যখন সাধারণ মানুষ ঘরের গোপনীয় জায়গায় টাকা জমিয়ে রাখত। কেউ আবার প্রতিবেশী কোন ঘরের নির্ভরযোগ্য মানুষের কাছে রাখত। এখন সময় পাল্টেছে গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে মোবাইল ব্যাংকিং। নিজের মোবাইলেই লুকিয়ে রাখছে তার জমানো টাকা। বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে বিপ্লব ঘটে গেছে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সংবাদ মাধ্যমে জানিয়েছেন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রতিদিন এখন ৮৪৪ কোটি টাকারও বেশি লেনদেন হয়। গ্রাহক ৫ কোটি ২৬ লাখ, যা বাংলাদেশের মোট জনগেষ্ঠীর এক তৃতীয়াংশ। সংশ্লিষ্ট তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে বর্তমানে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস), যা মোবাইল ব্যাংকিং নামে পরিচিতি পেয়েছে, তার মাধ্যমে দিনে গড়ে ৪৯ লাখ ৫ হাজারটি লেনদেন হয়। এতে গড়ে প্রতিদিন লেনদেন হওয়া অর্থের পরিমাণ ৮৪৪ কোটি ২৩ লাখ টাকা। বর্তমানে এমএফএস সার্ভিস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১৭টি। এজেন্ট সংখ্যা ৭ লাখ ৪৬ হাজার এবং গ্রাহক ৫ কোটি ২৬ লাখ। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের গ্রাহক এখন বাংলাদেশের মোট জনগোষ্ঠীর এক তৃতীয়াংশ। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সুবিধা হলো, এই এ্যাকাউন্ট করতে আলাদা ব্যাংক এ্যাকাউন্টের প্রয়োজন হয় না। মোবাইল ফোন থাকলেই যে কেউ ব্যাংক এ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন আর টাকা লেনদেন করতে পারেন বাংলাদেশের যে কোন স্থান থেকে। তাকে ব্যাংকের শাখায় যেতে হয় না। মোবাইল ফোনের কল রিচার্জ বা ‘ফ্লেক্সিলোড’ যারা করেন মূলত তারাই এখন মোবাইল ফোন ব্যাংকিংয়ের এজেন্ট। তাদের কাছে ন্যাশনাল আইডি কার্ড জমা দিলে তারাই এ্যাকাউন্ট খুলে দেন। মোবাইল ফোন নম্বরটিই গ্রাহকের এ্যাকাউন্ট নম্বর। থাকে একটি পাসওয়ার্ড। এই এ্যাকাউন্টের মাধ্যমেই অন্য কোন মোবাইল ব্যাংক এ্যাকাউন্টে টাকা পাঠাতে পারেন। নগদ টাকা তুলতে মাঝখানে থাকেন একজন এজেন্ট। তারা মূলত ছোট ব্যবসায়ী, যারা নিজের দোকানেই লাইসেন্স নিয়ে থাকেন ব্যাংকের কাছ থেকে। অর্থাৎ মোবাইল ব্যাংকিং মানুষের সময় বাঁচিয়ে দিয়েছে, কমিয়েছে ভোগান্তি। এ কারণেই এ পদ্ধতি এত দ্রুত জনপ্রিয় হচ্ছে। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিং চালু হয় ২০১০ সালে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ২৮টি ব্যাংক অনুমোদন নেয় মোবাইল ব্যাংকিংয়ের লাইসেন্স নিলেও চালু করে ১৭টি ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের জানুয়ারি মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের গ্রাহক ছিল ৩ কোটি ১২ লাখ। আর প্রতিদিন গড়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেন হতো প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। মাত্র দেড় বছরে গ্রাহক এবং টাকা লেনদেনের পরিমাণ প্রায় ৮০ ভাগ বেড়েছে। বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের প্রবৃদ্ধি বোঝার জন্য আরও একটি উদাহরণ দিলে বোঝা যাবে যে, এর প্রবৃদ্ধি হঠাৎ করে নয়। শুরু থেকেই ধারাবাহিকভাবে এটা দ্রুত জনপ্রিয় হয়। ২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের গ্রাহক ছিল ৩ কোটি। কিন্তু মাত্র এক মাসে নবেম্বরে গ্রাহক ১২ লাখ থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ৩ কোটি ১২ লাখ, যা তখন ছিল মোট জনসংখ্যার প্রায় ২০ ভাগ। গত তিন বছরে গ্রাহক বাড়ার হার হলো শতকরা ৫২৪ ভাগ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গবর্নর খন্দকার ইব্রাহিম খালেদ ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘মোবাইল ব্যাকিং সহজ এবং এর নেটওয়ার্ক অনেক বিস্তৃত। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে তাদের এজেন্ট আছে আর মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্কও দেশজুড়ে বিস্তৃত। প্রচলিত ব্যাংক এ্যাকাউন্ট ঝামেলাপূর্ণ হওয়ায় এই মোবাইল ব্যাংকিং দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। মানুষ সহজে দ্রুত টাকা পাঠাতে চায় এবং দ্রুত তুলতে চায়।’ মোবাইল ব্যাংকিংয়ে সাধারণ ব্যাংক এ্যাকাউন্টের সব সুবিধা নেই। এটা প্রধানত টাকা লেনদেনের কাজ করে। ইব্রাহিম খালেদ আরও বলেছেন, ‘মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলো কোন না কোন ব্যাংকের সঙ্গে সংযুক্ত। ফলে দেশের বিপুল জনগোষ্ঠীর যারা সরাসরি ব্যাংকিংয়ের আওতায় আগে আসেননি, তারাও এর মাধ্যমে ‘ব্যাংকিং সিস্টেম’-এ আসলেন। এতে অর্থনীতি বিশেষ করে ‘ইনক্লুসিভ’ অর্থনীতি লাভবান হচ্ছে। বিরাট এক জনগোষ্ঠীকে বিকল্প এক ব্যাংকিংয়ের আওতায় আনা যাচ্ছে।’ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সেবাগুলোর মধ্যে অর্থ স্থানান্তর (পিটুপি), নগদ জমা (ক্যাশ ইন) এবং নগদ উত্তোলন (ক্যাশ আউট) সবচেয়ে জনপ্রিয়। মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস ব্যবহার করে বেতন-ভাতা প্রদান, ইউটিলিটি বিল পরিশোধের পরিমাণ বাড়ছে। বাড়ছে কেনাকাটাও।
×