ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এদেশের মাটিতে কোনভাবেই জঙ্গী, সন্ত্রাসী ও যুদ্ধাপরাধীদের ঠাঁই হবে না ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০১:১৬, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯

এদেশের মাটিতে কোনভাবেই জঙ্গী, সন্ত্রাসী ও যুদ্ধাপরাধীদের ঠাঁই হবে না ॥ প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ আজ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে সমাদৃত মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বর্তমান সময়ে অপরাধের ধরণ প্রতিনিয়ন পরিবর্তিত হচ্ছে। গতানুগতিক অপরাধের পাশাপাশি সাইবার ক্রাইম, মানিলন্ডারিং, মানব পাচার ইত্যাদি বৈশ্বিক অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ ও মাদকের মত অশুভ সামাজিক ব্যাধি। সমাজ থেকে এসব অপকর্ম নির্মূলে এবং সমসাময়িক সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সবাইকে সচেস্ট থাকতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জঙ্গীবাদ দমনে বাংলাদেশ পুলিশের অব্যাহত সাফল্য শুধূ দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ব্যাপকভাবে প্রশংসিত। এদেশের মাটিতে কোনভাবেই জঙ্গী, সন্ত্রাসী ও যুদ্ধাপরাধীদের ঠাঁই হবে না। আজ রবিবার দুপুরে রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে ৩৬তম বিসিএসের সহকারী পুলিশ সুপারদের (এএসপি) শিক্ষা সমপানী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষনে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরো বলেন, প্রযুক্তির অপব্যবহার করে একটি সার্থান্বেষি মহল বিভিন্ন সময় গুজব রটিয়ে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে। এসব গুজব রটনাকারীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে সচেতন করার কর্মসূচি পালন করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমদের সরকার বিগত ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর এদেশের সার্বিক উন্নয়ন ও জনমানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন সহ সেবাপ্রাপ্তি সহজতর করার লক্ষ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, বৈদেশিক নীতি ও সম্পর্ক, গ্রামীন অবকাঠামো, ব্যবসা-বাণিজ্য ও সামজিক নিরাপত্তা প্রতিতি সেক্টরেই আজ কাঙ্খিত অর্জন সম্ভব হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপনের মাধ্যমে মহাকাশেও আমাদের অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছে। যোগাযোগ খাতে আমাদের যুগান্তকারী উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। মেট্টো রেল এবং নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। ইতিমধ্যে জাতিসংঘ বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ হতে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে ঘোষণা করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিগত দশ বছরে আমরা পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছি। এরমধ্যে, পুলিশের প্রায় ৪৯ হাজার ২০০ পদ সৃজন করা হয়েছে। বর্ধিত জনবলের প্রয়োজনীয় যানবাহন ও সরঞ্জামাদি সরবরাহ করা হয়েছে। গাজিপুর ও রংপুরে নতুন মেট্টেপলিটন পুলিশ গঠন করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, জঙ্গী ও সন্ত্রাস নির্মূলে পুলিশের এন্টি টেরোরিজম ইউনিট, ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল পুলিশ, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), ট্যুারিস্ট পুলিশ, নৌ পুলিশ, এবং দুটি স্পেশাল সিকিউরিটি এন্ড প্রটেক্টশন ব্যাটালিয়ন গঠন করা হয়েছে। গার্ড এন্ড প্রটেকশন পুলিশ গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এসআই/ সার্জেট পদকে তৃতীয় শ্রেণী থেকে দ্বিতীয় শ্রেণীতে এবং দ্বিতীয় শ্রেণীর ইনসপেকটর পদকে প্রথম শ্রেণীতে উন্নীত করা হয়েছে। জাতির পিতা প্রদত্ব আইজিপি র‌্যাঙ্গ ব্যাজ পূণ: প্রবর্তণ করে আইজিপি পদকে সিনিয়র সচিব পদমর্যাদায় উন্নীত করা হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, ইন-সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। আরো চারটি ট্রেনিং সেন্টার স্থাপনের কাজ চলছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের সমস্যাকে দেখতে হবে একান্ত আন্তরিক ও মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে। জনগণের মনে পুলিশ সম্পর্কে যেন অমূলক ভীতি না থাকে সেজন্য জনগণের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। সমাজের নারী, শিশু ও প্রবীণদের প্রতি সংবেদনশীল আচরণ করতে হবে। সমাজ থেকে অপরাধ নির্মূলে জনসম্পৃক্ততার মাধ্যমে জনবান্ধব পুলিশ গঠনে আপনাদের অগ্রপথিকের ভূমিকা পালন করতে হবে। পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় জনগণের মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার ও আইনের শাসনকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী নবীন পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা মৌলিক প্রশিক্ষণ শেষে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করতে যাচ্ছেন। মনে রাখতে হবে, একজন মানুষ তার সবচেয়ে বিপদের সময় পুলিশের কাছে সাহায্যের জন্য আসে। তাই আপনাদের সেবা ও মানবিক আচরণের মাধ্যমে গণমানুষের আস্থা অর্জনে সচেষ্ট থাকতে হবে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু তার বলিষ্ঠ ও দূরদর্শী নেতৃত্বের মাধ্যমে সর্বদাই এ দেশের পুলিশকে জনগণের পুলিশ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য অনুপ্রাণিত করতেন। বঙ্গবন্ধু পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলতেনÑ আপনারা স্বাধীন দেশের পুলিশ। আপনারা বিদেশী শোষকদের পুলিশ নন, জনগণের পুলিশ। আপনাদের কর্তব্য জনগণের সেবা করা, জনগণকে ভালবাসা, দুর্দিনে জনগণকে সাহায্য করা।’ আমি আশা করি আপনারা জাতির পিতার সেই প্রত্যাশা পূরণে আপনাদের উপর অর্পিত পবিত্র দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনে সর্বদা সচেষ্ট থাকবেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা গণতন্ত্রকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার মাধ্যমে দেশে আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে চাই। আমি আশা করি, আপনাদের প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ‘রূপকল্প-২০২১’ এবং ‘রূপকল্প-২০৪১’ বাস্তবায়নের মাধ্যমে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে আন্তরিকভাবে সচেষ্ট থাকবেন। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় একটি হেলিকপ্টারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারদায় পুলিশ একাডেমিতে পৌঁছান। পরে প্যারেড মাঠে গেলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী তাকে স্বাগত জানান। এরপর প্রধানমন্ত্রী অভিবাদন মঞ্চে গিয়ে নবীন পুলিশের সশস্ত্র সালাম গ্রহণ করেন। পরে একটি খোলা জিপে চড়ে তিনি নবীন পুলিশ কর্মকর্তাদের সমাপনী কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি সুসজ্জিত খোলা জিপে চড়ে বর্ণাঢ্য প্যারেড পরিদর্শন এবং অভিবাদন গ্রহণ করেন। তিনি বিভিন্ন বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনকারী সহকারী পুলিশ সুপারদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন। প্যারেডে ১৭ জন নারী অফিসারসহ ১১৭ জন শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপার অংশগ্রহণ করেন। এসময় সামরিক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও বেসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ, বীর কূটনীতিকবৃন্দ, অতিরিক্ত আইজিপিগণ, ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাগণ, পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা মুক্তিযোদ্ধাগণ, রাজশাহীর গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং আমন্ত্রিত অতিথিগণ উপস্থিত ছিলেন।
×