ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

মতিলাল দেব রায়

অভিমত ॥ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গাছ

প্রকাশিত: ০৭:৪৮, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯

 অভিমত ॥ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গাছ

দেশে নির্মল বায়ু প্রকল্পসহ পরিবেশ উন্নয়নে সরকার বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। পৃথিবীর সকল পরিবেশবাদী পরিবেশের বিপর্যয় ঠেকানোর জন্য অধিক হারে বৃক্ষ রোপণের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন। সভা-সমিতিতে বলা হচ্ছে, বৃক্ষরোপণ সপ্তাহ পালিত হচ্ছে, বৃক্ষমেলা বা প্রদর্শনী করে বৃক্ষরোপণে দেশের মানুষকে উৎসাহ প্রদান করা হচ্ছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পরিবেশ বিষয়ক বইতে ও বৃক্ষ রোপণের গুরুত্ব সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে। সকলেই অবগত যে- গাছ বায়ু থেকে দূষিত কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে আর বায়ুতে অক্সিজেন ত্যাগ করে বাতাসে এর পরিমাণ বৃদ্ধি করে যা মানুষের জীবন ধারণের জন্য একটি অপরিহার্য মূল্যবান সম্পদ। পরিবেশমন্ত্রী প্রায়শই দেশের বিভিন্ন সভা-সমিতিতে পরিবেশের ওপর কথা বলেন। তিনি এমন কথাও বলেন, দেশে শতকরা ২৫ ভাগ ভূমিতে বৃক্ষ থাকার কথা কিন্তু বাংলাদেশে মাত্র ৭ ভাগ ভূমিতে বৃক্ষ বা গাছ আছে যা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে খুবই অপ্রতুল। এমনি অবস্থায় সরকারী পদক্ষেপকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে কতিপয় বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সহযোগিতায় স্কুল চত্বরে বহু বছরের পুরনো গাছ কেটে বিক্রি করে দিচ্ছে যা খুবই নিন্দনীয়। আমার দৃষ্টিতে এরা পরিবেশের শত্রু। এদের দৃষ্টান্তমূলক আইনানুগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা না গেলে বৃক্ষনিধন চলতেই থাকবে। ফলে পরিবেশের বিপর্যয় অবশ্যম্ভাবী। তাই গাছ কাটার ব্যাপারে সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাইস্কুল, কলেজের ম্যানেজিং কমিটি ও প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে লিখিত শতর্কবার্তা দেয়া খুবই জরুরী এবং উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিতে হবে। সম্প্রতি মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে উপজেলা প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই স্কুলের পুরনো গাছ বিক্রি করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। গাছের কিছু অংশ স্কুলের লাগুয়া ধান ক্ষেতে রয়েছে। একটি গ্রামীণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিবেশ দেখলে মনে হবে যেন জনপদহীন এক বিচ্ছিন্ন জায়গায় স্কুলটি তৈরি করা হয়েছে। গ্রামীণ অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর অবস্থান প্রায় একই রকম। তাই বেশির ভাগ স্কুলের সীমানার মধ্যে কোন গাছপালা নেই। মাঝে মধ্যে কিছু কিছু গাছপালা দেখা যায় যা স্থানীয় বা সরকারী উদ্যোগে লাগানো হয়েছিল। সরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেখানে বৃক্ষরোপণ করে পরিবেশের বিপর্যয় রোধ করতে গাছ লাগানোর কথা সেখানে তিনি পরিবেশ বিধ্বংসী এই রকম পদক্ষেপ কেন নিলেনÑ এই প্রশ্ন এখন এলাকাবাসীর। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব সরকারী প্রতিষ্ঠানে যেখানে গাছ লাগানোর অভিযান চলছে সেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ বৃক্ষনিধন কর্মসূচীতে কেন নামলেন তার কাছ থেকে জবাব নেয়া দরকার। সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সকল স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের মালিক বাংলদেশ সরকার। এই সম্পদের তত্ত্বাবধায়ক হলেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে এই গাছ কাটা তার বন্ধ করা উচিত ছিল। বাংলদেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গাছের মালিক সরকার, সুতরাং কেউ গাছ বিক্রি করার কোন অধিকার রাখেন না। তাই গাছ কাটা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিতে হবে। এ ব্যাপারে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিবেশমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
×