ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গারা ভোটার হচ্ছে ইসি কর্মী ও জনপ্রতিনিধিদের যোগসাজশেই

প্রকাশিত: ১০:৫৭, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯

 রোহিঙ্গারা ভোটার  হচ্ছে ইসি কর্মী ও  জনপ্রতিনিধিদের  যোগসাজশেই

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ নির্যাতনের মুখে রাখাইন প্রদেশ থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা কিভাবে বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ও পাসপোর্ট পাচ্ছে তা তদন্তে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। রবিবার দুদকের একটি টিম দ্বিতীয় দফায় চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলেন। তারা রোহিঙ্গাদের এনআইডি বা স্মার্টকার্ড পাওয়ার নেপথ্যে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ের কর্মী এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের যোগসাজশে কিছু তথ্য পেয়েছেন। দুদক চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপ-সহকারী পরিচালক মোঃ শরীফ উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, জেলা নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে ভোটার তালিকার কাজে ব্যবহৃত কয়েকটি ল্যাপটপের খোঁজ মিলছে না। ২০১৫ সালের পর থেকে ল্যাপটপগুলোর হদিস নেই। নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ের কর্মকর্তারা এসব ল্যাপটপের বিষয়ে কিছু জানেন না বলে আলাপে নিশ্চিত হওয়া গেছে। রোহিঙ্গারা ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে পাসপোর্ট তৈরির চেষ্টা করছে। চট্টগ্রামের মনসুরাবাদ পাসপোর্ট অফিস থেকে এমন ৫৪ জনের তথ্য দুদককে দেয়া হয়েছে। দুদকের তদন্ত টিমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচন কমিশনের কিছু অসাধু কর্মচারী এবং সিটি কর্পোরেশন ও জেলা পর্যায়ের স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের যোগসাজশের প্রাথমিক প্রমাণ মিলেছে। চট্টগ্রাম জেলা ছাড়াও কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলায় রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়ার যে তথ্য এসেছে সেগুলোও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মুনীর হোসেন খান জনকণ্ঠকে জানান, দুদকের টিম তাদের কাছে ভোটার হওয়ার প্রক্রিয়া এবং কিভাবে সার্ভারে উপাত্ত আপলোড হয় তা জানতে চেয়েছেন। কর্মকর্তাদের চাহিদা অনুযায়ী বিস্তারিত অবহিত করা হয়েছে। কয়েকটি ল্যাপটপ না পাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ২০১৫ সালে ভোটার তালিকা হালনাগাদের সময় থেকেই ল্যাপটপগুলো পাওয়া যাচ্ছে না। এ বিষয়ে আগেই থানায় জিডি করা হয়েছে। তখন আমি দায়িত্বে ছিলাম না। দুদকের অনুসন্ধানে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করা হবে বলে তিনি জানান। চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আরও জানান, রোহিঙ্গা সন্দেহে ৫৪টি ফরম আলাদা করা হয়েছে, যেগুলোর তদন্ত চলছে। কোন রোহিঙ্গা যেন এনআইডি না পায় এবং ভোটার হতে না পারে সেজন্য চট্টগ্রাম জেলার নয় উপজেলায় সতর্কতা বাড়ানো হয়েছে। জনপ্রতিনিধিদের প্রত্যয়নের পাশাপাশি বসবাসকারীদের এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা প্রমাণের জন্য জমির দলিল, নিকটাত্মীয়ের এনআইডি কপি দাখিল করতে হবে। সব ঠিক থাকলে জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতিতেই ছবি তোলার কাজ চলছে। সার্বিক বিষয় মনিটরিং চলছে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে। তিনি জানান, ভোটার হওয়ার ক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্ব অনেক। এ বিষয়ে তাদের বেশি সতর্ক থাকতে হবে। রোহিঙ্গাদের দুই শর্ত ॥ এবার চীনের প্রতিনিধি দলকে দুই শর্ত দিয়েছে রোহিঙ্গারা। তা হচ্ছে- কেড়ে নেয়া ভিটেমাটি ফেরত ও নিরাপত্তা দিতে হবে। তাহলে নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে যাবে রোহিঙ্গারা। রবিবার বিকেলে বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিংয়ের কাছে এসব দাবি জানান তারা। তুমব্রু কোনারপাড়া জিরো পয়েন্টে অবস্থান করা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেন চীনের প্রতিনিধি দল। কী করলে মিয়ানমারে ফিরে যাবে, লি জিমিং-এর এমন প্রশ্নের জবাবে রোহিঙ্গারা দুটি দাবি মেনে নিলে ফিরে যাবার কথা জানায়।
×