জাবি সংবাদদাতা ॥ জাহাঙ্গীরনগর অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পে ছাত্রলীগকে দেয়া টাকা নিয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী এবং শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের একটি অডিও রেকর্ড ফাঁস হয়েছে। ৬ মিনিটের এই ফোনালাপের অডিও ক্লিপ সংগৃহীত আছে। সেখানে উপাচার্যের পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির নানা কথা তুলে ধরেন জাবি ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন -
সাদ্দাম ও রাব্বানীর ৬ মিনিটের ফোনালাপের সেই কথোপকথন হুবহু তুলে ধরা হলো -
রাব্বানী ফোনের শুরুতেই বলেন, টাকা নেয়ার সময় ছিল কে কে? উত্তরে অন্তর বলেন- জুয়েল ভাই, (সভাপতি, জাবি) চঞ্চল ভাই (সাধারণ সম্পাদক, জাবি)আর সাদ্দাম ভাই (যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক) ছিল।
রাব্বানী প্রশ্ন করে টাকাটা দিছে কোন জায়গায় বসে?
অন্তর : ম্যামের বাসাতেই ... সাদ্দাম ভাই আপনার সাথে কথা বলবে এই যে আমার পাশে আছে।
রাব্বানী : দাও দাও
রাব্বানী : ওয়ালাইকুম সালাম, সাদ্দাম কি খবর ভাই
সাদ্দাম : ভাই খবর তো হচ্ছে আমি তো আপনাকে জানাইছি ভাই খবর ভালো না বেশি একটা.... আমি তাজ, জুয়েল ও চঞ্চল আমরা ৪ জন ছিলাম। ওই মিটিংয়ের সময়। আর আজকে জাহাঙ্গীরনগর ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে প্রেস রিলিজ দিছে আপনাদের বিপক্ষে।
রাব্বানী : সেটা তো দেখলাম... বিষয়টা কি...
সাদ্দাম : বিষয়টা তারা হচ্ছে বামের সঙ্গে সিটিংয়ে গেছে... হ্যাঁ হ্যাঁ দুইটা বৈঠক হইছে। বৈঠকে বিচার বিভাগীয় তদন্ত বাদে বাকি দাবিগুলো মেনে নিছে। আর বিচার বিভাগীয় তদন্ত হবে কি না সেটা নিয়ে আগামী বুধবার বসবে ভাই।
রাব্বানী : আন্দোলন নিয়া...
সাদ্দাম : হ্যাঁ হ্যাঁ... আন্দোলন...
রাব্বানী : ম্যামতো নাকি বলছে যে আন্দোলনও আমরা নাকি করাইছি বা সামথিং এমন কিছু একটা... আন্দোলন কারা করছে সেটা তো আমরা জানি না।
সাদ্দাম : বিষয়টা হচ্ছে উনি আর কি ছাত্রলীগের ওপর দিয়ে সব কিছু করে নিজের ফ্যামিলিকে সেভ করতে চাচ্ছে। আর নিজে বাঁচতে চাচ্ছে।
আর প্রধানমন্ত্রীর রেফারেন্স দিয়ে অনেকগুলা কথা বলছে আপনার বিপক্ষে বা সেন্ট্রাল ছাত্রলীগের বিপক্ষে।
রাব্বানী : কি রকম?
সাদ্দাম : ওই যে যুগান্তরে ভাই...
রাব্বানী : ওইটা দেখছি দেখছি... আচ্ছা যখন টাকাটা দিল তুই ছিলি না?
সাদ্দাম : হ্যাঁ হ্যাঁ আমি ছিলাম ভাই। আমি আর তাজ ছিলাম। আমরা... আপনি ভাই বলেন ভাই কি করতে হবে আমরা করতেছি সমস্যা নাই। আমি আর তাজ ওইখানে উপস্থিত ছিলাম।
রাব্বানী : তুই আর কে?
সাদ্দাম : আমি আর তাজ আমার বন্ধু ভাই...
রাব্বানী : ও হ্যাঁ তাজ... তুই তো জয়েন সেক্রেটারি .....
সাদ্দাম : জি ভাই।
রাব্বানী : আচ্ছা... টাকাটা ম্যাডাম দিছে নিজে না অন্য কেউ ছিল
সাদ্দাম : ওখানে আর কেউ ছিল না। ম্যাম আমাদের সাথে ডিলিংস করছে, করে সে হচ্ছে টাকাটা আমাদের হলে পৌঁছাই দিছে।
রাব্বানী : হলে পৌঁছে দিছে টাকা?
সাদ্দাম : হ্যাঁ হ্যাঁ....
রাব্বানী : কয় টাকা দিছে? আমাদের কে বলছে হইছে এক কোটি... এর বেশি আর জানি না। জুয়েলের সাথে আলাদা সেটিং হইতে পারে..। বাট আমাদের সাথে হইছে।
রাব্বানী : আমরা তো শুনলাম ১ কোটি ৬০...
সাদ্দাম : ওইটা তো ভাই আমরা জানি না...৬০ এরটা আমরা জানি না.. আমরা হচ্ছে ভাই.. ওখানে হচ্ছে উনি ভাগ করে দিছে ৫০ হচ্ছে জুয়েলের ২৫ আমাদের আর ২৫ চঞ্চলের।
রাব্বানী : কত টাকা দিছে?
সাদ্দাম : আমাদের বলছে ১ কোটি। আমরা বাকিটা আর জানি না। ভাগ করে দিয়ে বলছে ৫০ জুয়েলের, ২৫ আমাদের আর ২৫ চঞ্চলের।
রাব্বানী : ম্যাডামই এভাবে ভাগ করে দিছে?
সাদ্দাম : হুম।
রাব্বানী : জুয়েল ভালো ছেলে এজন্য তাকে ৫০ আর চঞ্চল ক্যাম্পাসের বাইরে থাকে এজন্য তাকে ২৫।
সাদ্দাম : হ্যাঁ, চঞ্চল সে তো আমাদের বাদ দিতে পারে নাই, ঝামেলা এড়ানোর জন্য বা আমাদেরকে ঠিক রাখার জন্য এটা করছে।
রাব্বানী : ভাগের টাকাই তোদেরকে দিছে।
সাদ্দাম : চঞ্চলের ওখান থেকে আমরা বলছি যে আমাদেরকে ২৫ পার্সেন্ট দেয়া লাগবে। মানে চঞ্চলের ২৫ পার্সেন্ট দিতে হবে ওর ভাগের, ওরে ফুল টাকা দেয়া যাবে না। আর পত্রিকার হিসাবটা হলো ভাই এক্সট্রা আলাদা করে ওদের ৬০ লাখ টাকা দিছে আমাদেরকে না জানাই, এটা হইতে পারে।
রাব্বানী : তোমাদেরকে না জানাইয়া দিছে, না?
সাদ্দাম : হ্যাঁ, আমরা এটা জানি না। আমরা ১ কোটির হিসাব জানি ভাই।
রাব্বানী : ঠিকাছে এখন ম্যাডাম যে আমাদের নাম জড়াইলো, এখানে আমাদের সম্পর্কে কোন আইডিয়াই নাই, টাকার ব্যাপারে কথা বলতেছে।
সাদ্দাম : ভাই উনি খুব নোংরামি করতেছে ভাই, ঠিকাছে, আপনারা ভাই সিদ্ধান্ত নেন কি করা লাগবে, আমরা করতেছি সমস্যা নাই ভাই।
রাব্বানী : না, তোমাদের কিছু করা লাগবে না। তোমরা সাইলেন্ট থাকো। এটা যেহেতু আপার কানে দিয়েছে.. আমিও বুঝতেছি যে নিজে সেভ হওয়ার জন্য, তার ফ্যামিলি সেভ করার জন্য এসব করতেছেন।
সাদ্দাম : হ্যাঁ, হ্যাঁ।
রাব্বানী : এই ছয়টা কাজ ডিল করছে কে? বেসিক্যালি ঠিকাদারদের সাথে এসব ডিল কে করছে?
সাদ্দাম : তার ছেলে, মূলত হচ্ছে তার ছেলে আর তার পিএস সানোয়ার ভাই আর হচ্ছে পিডি আর তার হাজব্যান্ড। এই চারজন।
রাব্বানী : আগে থেকেই এই ছয়টা কোম্পানি রেডি করে রাখছে?
সাদ্দাম : হ্যাঁ ভাই, শুরু থেকেই তারা সব কিছু করছে, টেকনিক্যাল কমিটিতেও ভিসি ছিল ভাই।
রাব্বানী : ও, টেকনিক্যাল কমিটিতেও ভিসি ছিল? সাধারণত টেকনিক্যাল কমিটিতে তো ভিসি থাকতে পারে না। সেখানেও ছিল?
সাদ্দাম : না থাকে না, সে ছিল। এবং সে হচ্ছে প্রথমে টেন্ডার জমা দেয়ার সময় সবাইকে ফেরত পাঠাই দিল না? তখন আমরা বললাম সবাইকে টেন্ডার ড্রপ করতে দিতে হবে, তখন ড্রপ সবাইরে করাইছে বাট কাজ হচ্ছে সব নিজ হাতে করছে ভিসি। আর যখন হাসপাতালে ভর্তি হইছে ওইটা নাটক ছিল। হাসপাতালে ভর্তি হইছে যেন তাকে কেউ প্রশ্নবিদ্ধ করতে না পারে।
রাব্বানী : ও আচ্ছা আচ্ছা, সিডিউল বিক্রির টাইমে সে হাসপাতালে ভর্তি হইছে ইচ্ছা করে?
সাদ্দাম : হ্যাঁ.. হ্যাঁ ভাই
রাব্বানী : আচ্ছা আমি তোর সাথে কথা বলবো পরে যদি প্রয়োজন হয়।
এই ফোনালাপের প্রসঙ্গে উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অডিওতে আমি টাকা দিয়েছি এমন গল্প ফাঁদছে। আমার সাথে টাকার কোন দেখাই হইনি। এই মিথ্যাটা সত্য করার দায়িত্ব আমার না। ওরা করুক। আর ওরা তো বলতেই পারে। সাদ্দাম বলতে পারে রাব্বানীকে যে উপাচার্য আমাদেরকে টাকা দিলেন বলে আমরা টাকা পেলাম। রাব্বানীর যেহেতু পদ নেই এটা সে ষড়যন্ত্র থেকে এসব বলাতে পারে। কিন্তু নিশ্চিত থাকেন আমরা বাসায় কোনো টাকা পয়সার কোন কথাই বলিনি, আনিও নি।’
সদ্য সবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী ও জাবি ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের কথোপকথনের শুরুতে মধ্যস্থতা করেন জাবি শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হামজা রহমান অন্তর।
কথোপকথনের সত্যতার বিষয়ে জানতে চাইলে হামজা রহমান অন্তর বলেন, আমার ফোন থেকেই কথোপকথন হয়েছে। রাব্বানী ভাই আমাকে ফোন দিয়েছিল তখন আমি বেশি কিছু জানি না বলে সাদ্দামের কাছে ফোন দিয়ে দেই। তবে অনেকেই অভিযোগ তুলছে যে, আমি এ ফোনালাপ ফাঁসের সাথে জড়িত। সন্ধ্যা পর্যন্ত ফোনালাপ ফাঁসের বিষয়ে আমি কিছু জানতাম না। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর স্যারও আমাকে ফোন দিয়ে হুমকি-ধামকি দিয়েছেন। সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ও জাবি ছাত্রলীগের সাথে অনেক চক্রান্ত চলছে। সার্বিক প্রেক্ষাপটে আমি নিজেও নিরাপত্তাহীনতায় ভোগছি।
অনেকেই সন্দেহ করছেন উপাচার্যকে ফাঁসানোর জন্যেই কথোপকথনের বিষয়টি পরিকল্পিতভাবে হয়েছে।
ফোনালাপের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জাবি ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘গোলাম রাব্বানী ভাই সাধারণ সম্পাদক ছিলো কেন্দ্রের। আমি তার রাজনীতি করতাম এখন ভাইয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী সে যা বলছে তাই বলছি, সে যা করতে বলছে তাই করছি। সে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কথা বলছে আমিও ওই ভাবে কথা বলছি।