ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষা কর্মকর্তাকে ঘুষ দিলে চেক মেলে!

প্রকাশিত: ০২:৫১, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯

শিক্ষা কর্মকর্তাকে ঘুষ দিলে চেক মেলে!

নিজস্ব সংবাদদাতা, গফরগাঁও, ময়মনসিংহ ॥ ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে চাহিদা মোতাবেক ঘুষ না দিলে বিদ্যালয় মেরামতের চেক মেলে না। মেরামত শেষে চাহিদা অনুযায়ী ঘুষ পেলেই চেক তুলে দেন শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সালমা আক্তার। শিক্ষকদের অভিযোগ, এ অফিসে ঘুষ ছাড়া কেউ চেক পেয়েছেন এমন নজির কেউ খুঁজে পাবেন না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে শিক্ষকরা বলেন, ঘুষ কেলেঙ্কারীর দায়ে ২০১৭ সালের ৭ আগষ্ট গফরগাঁও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আনোয়ারুল ইসলাম গ্রেফতার হয়ে সাময়িক বরখাস্তের পর ভেবেছিলাম গফরগাঁও প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ শুদ্ধি লাভ করবে। উল্টো ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা সালমা আক্তার অতীতের সকল অনিয়মকে পিছলে ফেলে শিক্ষকদের নানাভাবে জিম্মি করে উৎকোচ আদায়সহ, অনিয়ম-দূর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতায় আকন্ঠ ডুবিয়ে দিয়েছেন গফরগাঁওয়ের প্রাথমিক শিক্ষা স্তরকে। শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, গফরগাঁওয়ে মেরামতের জন্য ২২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুই লাখ, ২৪টিতে দেড় লাখ এবং ১৫০ টিতে ৪০ হাজার টাকা করে মোট এক কোটি ৪০ লাখ টাকা বরাদ্দ আসে ১৯৬টি বিদ্যালয়ে। পরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসকে মেরামত কাজ শেষে বরাদ্দ পাওয়া বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে চেক প্রদান শেষে টাকা উত্তোলনের নির্দেশ প্রদান করে। নির্দেশ মোতাবেক প্রতিটি বিদ্যালয়ের প্রধানগণ বরাদ্দকৃত টাকার সমপরিমাণ সংস্কার শেষে উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে ক্লিয়ারেন্স নিয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার নিকট থেকে চেক গ্রহণ করেন। আর এ সুযোগে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা যে সকল বিদ্যালয় মেরামতের জন্য দুই লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়েছে সে সকল বিদ্যালয় থেকে ৯ থেকে ১০ হাজার, যে সকল বিদ্যালয় দেড় লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়েছে সে সকল বিদ্যালয় থেকে ৬ থেকে ৭ হাজার, আর যে বিদ্যালয়গুলো ৪০ হাজার টাকা করে বরাদ্দ পেয়েছে সেসব বিদ্যালয় থেকে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা করে ঘুষ নিয়ে চেক প্রদান করেন। আর যে সকল বিদ্যালয় ঘুষ দেয়নি আটকে যায় সে সব বিদ্যালয়ের চেক। ফলে বাধ্য হয়েই শিক্ষা কর্মকর্তাকে ঘুষ দিতে হয় প্রধান শিক্ষকদের। শিক্ষা কর্মকর্তাকে ঘুষ দেয়ার বিষয়টি প্রধান শিক্ষকরা অপকটে স্বীকার করলেও কেউ নাম প্রকাশে রাজি হননি। তারা দাবী করে বলেন, সাংবাদিকরা আমাদের বক্তব্য প্রকাশ করেই তাদের দায়িত্ব শেষ করেন। কিন্তু পত্রিকায় নাম প্রকাশ হওয়ার কারনে পরবর্তী সময়ে দীর্ঘদিন পর্যন্ত আমাদেরকে শিক্ষা কর্মকর্তা বিভিন্নভাবে হয়রানি করে থাকেন। ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দ পাওয়া সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের ভুক্তভোগী একাধিক প্রধান শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে অভিযোগ করে বলেন, প্রথমে ভেবেছিলাম অল্প বরাদ্ধের কারনে হয়তো শিক্ষা কর্মকর্তাকে ঘুষ দিতে হবে না। কেননা যে টাকা বরাদ্ধ পেয়েছি তার চেয়ে বেশি খরচ হয়েছে। কিন্তু হয়েছে তার উল্টো শিক্ষা কর্মকর্তা সালমা আক্তারের চাহিদা মতো ঘুষ না দেয়ায় তাদেরকে প্রায় ২০দিন ঘোরাঘুরি করতে হয়। পরে বাধ্য হয়ে নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা দিয়ে তারা চেক হাতে পান। এভাবেই চেক প্রদানে ভয়ংকর দুর্নীতির আশ্রয় নিচ্ছেন শিক্ষা কর্মকর্তা সালমা আক্তার। দুই ও দেড় লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া বিদ্যালয় প্রধানরা জানান, চেক গ্রহন বাবদ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে ৭ থেকে ১০ হাজার টাকা করে দিতে হয়েছে। ওইসব টাকা না দিলে চেক মিলে না। তাই বাধ্য হয়েই শিক্ষা কর্মকর্তাকে ঘুষ দিতে হয়েছে। অভিযোগের ব্যাপারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সালমা আক্তার ঘুষ গ্রহণের কথা অস্বীকার করে বলেন, এসব অভিযোগ বানোয়াট, মিথ্যা। গফরগাঁও উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট কে এম এহছান বলেন, ওই অফিসের অনেক কথাই তাঁরা শুনেন। কিন্তু কেউ অভিযোগ না করায় তাঁরা কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেন না। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মাহবুব উর রহমান বলেন, এ ব্যাপারে আমি অবগত নই। অভিযোগ দিলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×