স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশে ক্রমবর্ধমান ধনবৈষম্য, দুর্নীতি, মাদকের বিস্তার, নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা , সন্ত্রাস, হত্যা, গুম ও সাম্প্রদায়িকতার ক্রমবর্ধমান বিস্তারে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ১৪ দলের অন্যতম শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি। দলটির শীর্ষ নেতারা বলছেন, উন্নয়নের দিক বিবেচনা করলে দেশ এগিয়ে গেলেও নানা কারণে সামাজিক সূচক নামছে নীচের দিকে। যে কোন মূল্যে সামাজিক সূচক উপরে ওঠাতে হবে। অন্যথায় এককভাবে উন্নয়ন দিয়ে আন্তর্জাতিক বিশে^ দেশের সার্বিক মানদ- ধরে রাখা কঠিন হবে।
সোমবার দলটির দুইদিনব্যাপী শুরু হওয়া পলিটব্যুরো সভার সমাপনি প্রস্তাবে বলা হয়, দেশের চলমান উন্নয়নে সৃষ্ট সম্পদের বৃহদাংশ মুষ্টিমেয় ধনীর দখলে। এ জন্য ব্যাংকের টাকা লুট, বিদেশে পাচার, সরকারী প্রকল্প ও ক্রয়ে অবিশ্বাস্য রকম মূল্য দেখিয়ে অর্থ আত্মসাত ও সর্বোপরি রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে ব্যাংক, বীমা ও লাভজনক প্রতিষ্ঠান সমূহের মালিকানা দখল করতেও তারা সামান্যতম দ্বিধা করছে না। এর ফলে সৃষ্ট আরও ধনবৈষম্য সমাজের মধ্যে ক্রমবর্ধমান অস্থিরতা তৈরী করছে। ফলে এই উন্নয়ন টেকসই না হওয়ার সমূহ বিপদ দেখা দিয়েছে।
অন্যদিকে দুর্নীতি এখন রাষ্ট্র, সমাজ, অর্থনীতি ও প্রশাসনের স্বাভাবিক নিয়মে পরিণত হয়েছে। রাষ্ট্র ক্ষমতার শীর্ষ থেকে নীচ পর্যন্ত এর চরম বিস্তৃতি ঘটেছে। প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করলেও তার চারপাশেই এটা ঘটে চলেছে।
পলিটব্যুরোর প্রস্তাবে বলা হয়, মাদকের বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণুতা ঘোষণা ও কথিত বন্ধুকযুদ্ধে বহু সংখ্যক মাদক ব্যবসায়ীর নিহত হওয়ার পরও মাদক এখন শহর ছেড়ে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। মাদকের প্রভাবে যুব সমাজ ধ্বংসের প্রান্তে। মাদকাসক্তিসহ সামাজিক ক্ষেত্রে চরম অবক্ষয়, নারী ও শিশু ধর্ষণ হত্যাসহ, নারীর প্রতি সহিংসতা বেড়েই চলেছে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে ধর্মবাদীদের ফতোয়া, তথাকথিত হিজাব, নেকাবসহ পর্দার ঘেরটোপ। পথে ঘাটে, কর্মস্থলে নারীরা শিকার হচ্ছে যৌন নিপীড়নের।
পলিটবুরোর প্রস্তাবে বলা হয় সন্ত্রাস এখন কিশোরদের মধ্যে পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। গুম-অপহরণের ঘটনাও ঘটছে প্রতিনিয়ত। এর ফলে সমাজের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে নিরাপত্তাবোধের অভাব। বিস্তৃত হচ্ছে সাম্প্রদায়িক মনোভাব ও সহিংসতার ঘটনাও।
পলিটব্যুরোর প্রস্তাবে বলা হয় এই পরিস্থিতিতে আগামী নবেম্বরের প্রথম সপ্তাহে অনুষ্টিতব্য কংগ্রেসের পার্টির ২১ দফার ভিত্তিতে “সামাজিক ন্যায্যতা-সমতা প্রতিষ্ঠাসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক জনগণতান্ত্রিক আধুনিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার যে শ্লোগান দেয়া হয়েছে তাতে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ ও সংগঠিত করতে এখনই।
সভায় ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পার্টি সভ্যপদ নবায়ন, ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শাখা সম্মেলন, ২৩ অক্টোবরের মধ্যে জেলা সম্মেলন রিপোর্ট প্রদান ও ২,৩,৪,৫ নভেম্বর ঢাকায় ১০ম কংগ্রেসের সফল অনুষ্ঠানের জন্য, পার্টি সকল ইউনিটকে, সকল প্রকার প্রচেষ্টা গ্রহণের আহ্বান জানান হয়।
পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিতব্য পলিটব্যুরোর সভায় পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এমপি ১০ম কংগ্রেসের প্রস্তুতির বিষয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট তুলে ধরেন। সভায় আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন পলিটব্যুরোর সদস্য আনিসুর রহমান মল্লিক, নুরুল হাসান, মাহমুদুল হাসান মানিক, অধ্যাপক ড. সুশান্ত দাস, হাজেরা সুলতানা, কামরূল আহসান ও মুস্তফা লুৎফুল্লাহ এমপি ।