ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বোমা তৈরির নতুন নতুন কৌশল রপ্ত করছে জঙ্গীরা

পুলিশের ওপর হামলায় ব্যবহৃত হয়েছে রিমোট চালিত বোমা

প্রকাশিত: ১০:৩৪, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯

পুলিশের ওপর হামলায় ব্যবহৃত হয়েছে রিমোট চালিত বোমা

গাফফার খান চৌধুরী ॥ গুলিস্তান, মালিবাগ ও এলিফ্যান্ট রোডে পুলিশের ওপর চালানো হামলায় রিমোট চালিত বোমা ব্যবহার করা হয়েছে। সর্বশেষ এলিফ্যান্ট রোডের হামলায় ব্যবহৃত বোমার বিস্ফোরণ ঘটাতে খেলনার রিমোট ব্যবহার করা হয়েছিল। এ ধরনের রিমোট ড্রোন ওড়াতেও ব্যবহৃত হয়। এলিফ্যান্ট রোডে ব্যবহৃত বোমাটি গুলিস্তান ও মালিবাগের হামলায় ব্যবহৃত বোমার চেয়ে অনেক উন্নত প্রযুক্তির ও শক্তিশালী ছিল। বোমাটি চর্তুদিকে একশ’ গজ দূরত্বের মধ্যে ক্ষয়ক্ষতি করার ক্ষমতাসম্পন্ন। এর মধ্যে পঞ্চাশ গজের মধ্যে তুলনামূলক বেশি ক্ষয়ক্ষতি করার ক্ষমতা ছিল। এ ধরনের বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে অনেক মানুষকে হতাহত করা সম্ভব। দেশীয় জঙ্গীরা বোমা তৈরির নতুন নতুন কৌশল রপ্ত করছে। নতুন নতুন কৌশলে তৈরি বোমার পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ ঘটানোর পাশাপাশি আইএসের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই হামলাগুলো চালানো হয়েছে। বোমা হামলা চালানোর নেপথ্যে গভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে ধারণা করছে তদন্তকারী সংস্থাগুলো। তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ২৯ এপ্রিল রাজধানীর গুলিস্তানে প্রথম পুলিশের ওপর বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। বোমা বিস্ফোরণে ট্রাফিক পুলিশের দুই সদস্য ও কমিউনিটি পুলিশের এক সদস্যসহ মোট তিন জন আহত হন। গত ২৬ মে রাত নয়টায় রাজধানীর মালিবাগ মোড়ে সিএনজি পাম্পের বিপরীতে ফ্লাইওভারের নিচে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় ডিএমপির ট্রাফিকের পূর্ব বিভাগের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) রাশেদা খাতুন, রিকশাচালক লাল মিয়া ও এক পথচারী আহত হন। সর্বশেষ গত ৩১ আগস্ট রাজধানীর মিরপুর রোডের সায়েন্সল্যাব মোড়ে পুলিশের ওপর বোমা হামলা হয়। হামলায় দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের কনস্টেবল আমিনুল ইসলাম ও মন্ত্রীর নিরাপত্তা দলের অফিসার পুলিশ কর্মকর্তা সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) শাহাবুদ্দিন আহত হন। ঘটনা তিনটি গভীরভাবে তদন্ত করতে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের তরফ থেকে একটি বিশেষায়িত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে কাজ করছে। কমিটির সভাপতি করা হয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান ডিআইজি মোঃ মনিরুল ইসলামকে। কমিটির সদস্য সচিব করা হয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা ও অপরাধ তদন্ত বিভাগ ডিবির যুগ্ম পুলিশ কমিশনার মোঃ মাহবুব আলমকে। কমিটিতে ডিএমপির চার অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) ও দুই সহকারী পুলিশ কমিশনারকে (এসি) সদস্য করা হয়েছে। তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, তিনটি ঘটনারই দায় স্বীকার করে ইরাক ও সিরিয়াভিত্তিক আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠন আইএসের নামে বিবৃতি প্রকাশিত হয়। আইএসের নামে বিবৃতি প্রকাশের পর স্বাভাবিক কারণেই দেশ-বিদেশে এ নিয়ে ব্যাপক হৈচৈ শুরু হয়। কোন কোন মহল থেকে বাংলাদেশে আইএসের তৎপরতা আছে বলে প্রমাণের চেষ্টা করা হচ্ছে। এমনকি সেই তৎপরতা এখনও অব্যাহত। এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম জনকণ্ঠকে বলেন, পুলিশের ওপর পর পর তিনটি হামলার ঘটনা গভীরভাবে তদন্ত করে বিস্ময়কর তথ্য মিলেছে। তদন্তে দেখা গেছে, গুলিস্তানে পুলিশের ওপর হামলায় হ্যান্ডগ্রেনেড বা হাতে তৈরি বোমা ব্যবহার করা হয়েছে। বোমাটি যথেষ্ট শক্তিশালী ছিল। বোমায় ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) ব্যবহার করা হয়েছে। এ ধরনের বোমা সাধারণত জঙ্গীরাই তৈরি করে থাকে। দেশীয় জঙ্গীরা বোমা হামলাটি চালিয়েছে বলে তথ্য মিলেছে। আর মালিবাগের হামলায়ও হাতে তৈরি বোমা বা হ্যান্ডগ্রেনেড ব্যবহার করা হয়েছে।
×