ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

প্রকল্প বাস্তবায়ন যত দ্রুত হবে ঢাকাবাসী ততই জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাবে

ওয়াসার দুটি প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজ চলছে শম্ভুকগতিতে

প্রকাশিত: ১০:৩৫, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯

ওয়াসার দুটি প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজ চলছে শম্ভুকগতিতে

ফিরোজ মান্না ॥ ঢাকা ওয়াসার প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে চরম ধীরগতি চলছে। ঢাকার জলাবদ্ধতা দূর করতে গত বছর দুটি প্রকল্পের অনুমোদন দেয় একনেক। এক বছরে প্রকল্পের অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ৮ দশমিক ২৫ শতাংশ। প্রকল্প বাস্তবায়নের এমন গতিকে ‘অস্বাভাবিক’ বলছেন নগর পরিকল্পনাবিদরা। তবে ওয়াসা বলছে, প্রকল্প পাসের পর নানা সমস্যার কারণে শুরুর দিকে বেশি সময় লাগে। পরে প্রকল্পের গতি বাড়ে। প্রকল্প দুটি যথাসময়েই শেষ হবে। একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, ঢাকা ওয়াসার বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প দুটি হচ্ছে ‘ঢাকা মহানগরের ড্রেনেজ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ ও খাল উন্নয়ন’ এবং ‘হাজারীবাগ বাইশটেকী কুর্মিটোলা মান্ডা ও বেগুনবাড়ি খালে ভূমি অধিগ্রহণ ও খনন-পুনঃখনন’ প্রকল্প। প্রকল্প দুটি দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি, একনেক অনুমোদন দেয়। কিন্তু ওয়াসার প্রকল্প দুটোর উন্নয়ন কাজের গতি খুবই কম। কোন কোন প্রকল্পের কাজ হয়েছে মাত্র দশ শতাংশ। ফলে নগরবাসী দীর্ঘমেয়াদী দুর্ভোগের মধ্য দিয়েই কাটাচ্ছেন। সরকারের পক্ষ থেকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা বলা হলেও ওয়াসার ঠিকাদাররা ইচ্ছাকৃতভাবে কাজের সময় বেশি নিচ্ছে। সময় বেশি পার হলে তারা প্রকল্পের টাকার পরিমাণও বাড়াতে পারেন। এতে ওয়াসা কর্তৃপক্ষের এক শ্রেণীর কর্মকর্তাদের যোগসাজশ রয়েছে। কারণ প্রকল্পের টাকা বাড়লে উভয় পক্ষের লাভ। খাল উন্নয়ন প্রকল্পটির অনুমোদন দেয়া হয় গত বছরের জুলাই মাসে। ৫৫০ কোটি ৫০ লাখ টাকার এই প্রকল্প আগামী বছরের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা। প্রকল্পে ঢাকা মহানগরীর পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার সঙ্গে ১৫১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ৪৪ খাল, দশটি বক্স কালভার্ট ও বিভিন্ন সংস্থার কয়েক হাজার কিলোমিটার নালা যুক্ত রয়েছে। কিন্তু এই প্রকল্পের অগ্রগতি মাত্র সাড়ে ৮ শতাংশ। এই খাল উন্নয়নের মাধ্যমেই বৃষ্টির পানি ঢাকার চারপাশের নদীতে পড়বে। ওয়াসা বলছে, ঢাকা মহানগরীর খালগুলোর মধ্যে ওয়াসার আওতায় রয়েছে ২৬ খাল। কিন্ত খালগুলোর অধিকাংশই স্থায়ী অবকাঠামোর মাধ্যমে উন্নয়ন করা হয়নি। ফলে বর্ষা মৌসুমে অতিবৃষ্টির পানি দ্রুত বের হতে পারে না। এ কারণে নগরীতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এজন্য এসব এলাকায় নতুন ‘ড্রেনেজ নেটওয়ার্ক’ সম্প্রসারণ ও খালগুলোর উন্নয়নে প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। খালের তীর উন্নয়ন করে সেখানে ওয়াকওয়ে নির্মাণের কথা আছে। প্রকল্পের মাধ্যমে খাল খননের পাশাপাশি প্রশস্ততার কথা উল্লেখ করা হয়। এতে প্রকল্প এলাকায় বসবাসরত মানুষের পানিবাহিত রোগের স্বাস্থ্যঝুঁকি কমবে। এ প্রকল্পের আওতায় ১৬ খালের ২০ কিলোমিটার পুনঃখনন করা হবে। রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে ১১ কিলোমিটার এবং ৮ কিলোমিটার বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন নালা ও ৭ কিলোমিটার সড়ক খনন করা হবে। ওয়সার এক উর্ধতন কর্মকর্তা বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের তেরোটি এলাকা জলাবদ্ধতামুক্ত হবে। এলাকাগুলো হচ্ছে ঢাকা দক্ষিণের ধানম-ি, হাজারীবাগ, শংকর, ঝিগাতলা, রায়েরবাজার এবং উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, শেরেবাংলা নগর, দারুস সালাম, মিরপুর, পল্লবী, ক্যান্টনমেন্ট, উত্তরা ও বিমানবন্দর এলাকা। প্রকল্প এলাকার প্রায় ৫২ লাখ মানুষ বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাবে। অন্যদিকে ‘হাজারীবাগ বাইশটেকী কুর্মিটোলা মান্ডা ও বেগুনবাড়ি খালে ভূমি অধিগ্রহণ এবং খনন-পুনঃখনন’ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয় গত বছরের এপ্রিলে।
×