ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

তবে বাংলাদেশে প্রভাব পড়বে না

সৌদি তেলক্ষেত্রে হামলার পর তেলের দাম বেড়ে গেছে

প্রকাশিত: ১০:৫৪, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯

সৌদি তেলক্ষেত্রে হামলার পর তেলের দাম বেড়ে গেছে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আন্তর্জাতিক বাজারে গত চার মাসের মধ্যে তেলের দাম সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। শনিবার সৌদির দুটি তেলক্ষেত্রে হামলার পর থেকেই আশঙ্কা করা হচ্ছিল যে, তেলের দাম বাড়তে পারে। সোমবার সেই আশঙ্কা সত্যি করে দিয়ে, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম ১০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। রবিবার সৌদির স্টক এক্সচেঞ্জ খুলতেই সেই আশঙ্কা সত্যি প্রমাণিত হয়। সোমবার অপরিশোধিত তেলের দাম কয়েক মুহূর্তেই ব্যারেল প্রতি ১২ ডলার বেড়ে যায়। তবে সৌদি আরবের তেলক্ষেত্রে হামলায় বাংলাদেশের ওপর তেমন প্রভাব পড়বে না। বাংলাদেশ সৌদি আরব থেকে চাহিদার মাত্র ১০ শতাংশ অপরিশোধিত তেল আমদানি করে। তাছাড়া, বাংলাদেশের কাছে সব সময় দুই মাসের তেল মজুদ থাকে। ফলে এই হামলায় আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেড়ে গেলেও বাংলাদেশ তাৎক্ষণিকভাবে কোন ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। তবে দীর্ঘ মেয়াদে তেলের দাম বেড়ে গেলে তার প্রভাব পড়তে পারে। অবশ্য তার আগেই আন্তর্জাতিক তেলের বাজার স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা আশা করছেন। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) চেয়ারম্যান মোঃ সামছুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, সৌদি আরবের তেলক্ষেত্রে হামলায় আমাদের ওপর তেমন প্রভাব পড়বে না। আমরা শুধুমাত্র অপরিশোধিত জ¦ালানি তেল সৌদি আরব থেকে আমদানি করি। যা আমাদের মোট জ¦ালানি তেলের চাহিদার সর্বোচ্চ ১০ ভাগ। তিনি বলেন, আমাদের কাছে সব সময় ২ মাসের মজুদ থাকে। আশা করা যায় এরমধ্যে সেখানের পরিবেশ শান্ত হয়ে যাবে। সৌদির বৃহত্তম রাষ্ট্রীয় তেল স্থাপনা এ্যারামকো জানায়, হামলায় দৈনিক তেলের উৎপাদন ৫৭ লাখ ব্যারেল কমেছে। আর যে কারণে তেলের দাম ব্যারেল প্রতি বৃদ্ধি পেয়ে ৭১ ডলারে দাঁড়িয়েছে। তেলের দাম স্বাভাবিক হতে প্রায় এক সপ্তাহ সময় লাগবে। এক বিবৃতিতে সৌদির জ্বালানি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সৌদির দুই তেলক্ষেত্রে হামলার কারণে প্রতিদিনের তেল উৎপাদন কমেছে ৫৭ লাখ ব্যারেল। এটা সৌদির তেল উৎপাদনের অর্ধেক এবং বিশ্বের মোট উৎপাদনের প্রায় ৫ শতাংশ। বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল রফতানিকারক দেশ সৌদি আরব। প্রতিদিন দেশটি ৭০ লাখের বেশি ব্যারেল তেল রফতানি করে থাকে। ফলে শনিবার ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখোমুখি হওয়া তেল উত্তোলনকারী সংস্থা এ্যারামকোর ধাক্কা গিয়ে লেগেছে বিশ্ব বাজারেও। তবে, এই পরিস্থিতির মধ্যেও ভারতকে অপরিশোধিত তেল সরবরাহে কোন ঘাটতি হবে না বলেই জানিয়েছে এ্যারামকো। এ্যারামকো আশ্বাস দিয়েছে, এই বিপর্যয়ের ফলে ভারতীয় তৈল শোধনাগারগুলোতে সরবরাহের ক্ষেত্রে কোন প্রভাব পড়বে না। শনিবারের ঘটনার পর যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে সেদিকে নজর রাখছে পেট্রোলিয়াম মন্ত্রণালয়। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ভারত থেকেও পরিশোধিত তেল আমদানি করে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) চেয়ারম্যান মোঃ সামছুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, সৌদি আরবের তেলক্ষেত্রে হামলায় আমাদের ওপর তেমন প্রভাব পড়বে না। আমরা শুধুমাত্র অপরিশোধিত জ¦ালানি তেল সৌদি আরব থেকে আমদানি করি। যা আমাদের মোট জ¦ালানি তেলের চাহিদার সর্বোচ্চ ১০ ভাগ। বাকি চাহিদার পুরোটাই পরিশোধিত জ¦ালানি হিসেবে আমদানি করা হয়। আমাদের সঙ্গে ১১টি দেশের দীর্ঘ মেয়াদী চুক্তি রয়েছে। তাদের কাছ থেকে মোট পরিশোধিত জ¦ালানির অর্ধেক আমাদানি করা হয়। বাকি অর্ধেক দরপত্রের মাধ্যমে কেনা হয়। সিঙ্গাপুরভিত্তিক কোম্পানিগুলো চীন, ইন্দোনেশিয়া, ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে জ¦ালানি তেলের সংস্থান করে দেয়। প্রসঙ্গত দেশে এখন জ¦ালানি তেলের মোট চাহিদা ৬০ লাখ মেট্রিকটনের ওপরে। অন্যদিকে দেশের ইস্টার্ন রিফাইনারী বছরে ১৫ লাখ মেট্রিকটন অপরিশোধিত জ¦ালানি তেল পরিশোধন করতে পারে। তবে দেশের পেট্রোল এবং অকটেনের চাহিদা স্থানীয়ভাবে উৎপাদিক কনডেনসেট (গ্যাস ক্ষেত্রের উপজাত) দিয়ে মেটানো হয়। কনডেনসেট প্রক্রিয়া করেও কিছু পরিমাণ ডিজেল এবং কেরোসিন পাওয়া যায়। তবে বাংলাদেশ পরিশোধিত তরল জ¦ালানি হিসেবে ডিজেল, ফার্নেস অয়েল, কেরোসিন এবং জেট ফুয়েল আমদানি করে। সৌদি আরবের দুটি তেল শোধনাগারে ড্রোন হামলার তাৎক্ষণিক কেউ দায় স্বীকার না করলেও পরে হুথি বিদ্রোহীরা এই হামলা চালিয়েছে বলে দায় স্বীকার করেছে। হামলার দায় স্বীকার করে ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা জানিয়েছে, এতে এক সঙ্গে দশটি ড্রোন ব্যবহার করেছে। সৌদি আরবের পূর্বাঞ্চলে রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত তেল উৎপাদন প্রতিষ্ঠান সৌদি এ্যারামকোর দুটি স্থাপনায় এ হামলা চালানো হয়। সৌদির রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম জানায়, প্রথম হামলা হয় বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল শোধনাগার আবকাইকে। দ্বিতীয় হামলা হয়, পশ্চিমাঞ্চলের খুরাইস তেলক্ষেত্রে। দুই জায়গার আগুনই এখন নিয়ন্ত্রণে। এরপরে তেল ও গ্যাসের উৎপাদন অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্রায় অর্ধেকে নামিয়ে আনে সৌদি আরব। প্রায় পাঁচ বছর ধরে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট ইয়েমেনের সংঘাতে জড়িয়ে আছে। এর ফলে দীর্ঘদিন ধরেই সৌদিতে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে হুতি বিদ্রোহীরা। ওই হামলা সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানায়নি সৌদি। এমনকি এই ঘটনায় হতাহতের বিষয়টিও নিশ্চিত করা হয়নি। তবে এর ফলে তেল উৎপাদন অনেক কমে গেছে বলে নিশ্চিত করা হয়েছে।
×