ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষক খোঁজার প্লাটফর্ম ইয়োডা

প্রকাশিত: ১২:১৪, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯

শিক্ষক খোঁজার প্লাটফর্ম ইয়োডা

বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগে সব কিছুই অনলাইনে পাওয়া যায়। প্রযুক্তির এ অগ্রসরতায় ঘরে বসেই নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যসহ সবকিছুই পাবেন অনায়াসে। আর আমাদের আরও একটি কাজ সহজ করতে গৃহশিক্ষকের সন্ধান দিতে নতুন প্লাটফর্ম হিসেবে যাত্রা করেছে ইয়োডা। ঘরে বসেই অনলাইনে শিক্ষক খোঁজার মার্কেট প্লেসটি তৈরি করেছেন উদ্যোক্তা মোহাম্মদ সালমান। এই উদীয়মান তরুণের সাক্ষাতকার নিয়েছেন- মোয়াজ্জেম হোসেন দীর্ঘ সময় ধারণাটির পেছনে লেগেছিলেন তরুণ মোহাম্মদ সালমান। তিন বছরের বেশি সময়ের শ্রম আর নিষ্ঠার ফলেই প্রতিষ্ঠা পায় ইয়োডা। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে ছোট দুটি প্রতিষ্ঠান নিয়ে কাজ শুরু করেন সালমান। এর পাশাপাশি ইউনিলিভার ও ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকোর মতো প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন এই উদ্যোক্তা। দীর্ঘদিন চাকরির পর স্বাধীনভাবে কিছু করার তাগিদ থেকে পুরোদমে উদ্যোক্তা হতে প্রথমে বনানীতে প্রতিষ্ঠা করেছেন ট্রি হাউজ রেস্টুরেন্ট। এই রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় সফল হওয়ার পর তিনি আর একটি নতুন রেস্টুরেন্ট না দিয়ে জমানো টাকা দিয়ে শুরু করেছেন অনলাইনভিত্তিক শিক্ষক খোঁজার মার্কেট প্লেস ‘ইয়োডা’। ডিপ্রজন্ম : ইয়োডা কি এবং কেন? সালমান : ইয়োডা হলো শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মেলবন্ধনের প্লাটফর্ম। আমাদের সবারই জানা, শিক্ষাই শক্তি, শিক্ষাতেই মুক্তি। যোগ্য মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার জন্য শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। অবুঝ শিশু অবুঝ প্রাণীর মতো অরক্ষিত, নির্ভরশীল। তাদের চলমান পরিস্থিতির সঙ্গে অভিযোজন করার সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার হচ্ছে শিক্ষা ও উপযুক্ত শিক্ষক। সাধারণত আমরা যখন বাসায় শিক্ষক ঠিক করি তখন তার মুখের কথায় সব কিছু বিশ্বাস করি। এটাই চিরাচরিত নিয়ম হয়ে গেছে। তবে এক্ষেত্রে ইয়োডা শিক্ষকের সব তথ্য আপনার সামনে উপস্থাপন করছে। এরপর আপনি তথ্য দেখে শিক্ষক পছন্দ করতে পারছেন সহজেই এবং এখানে প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা একদম নেই। ধরুন, আপনার বাসায় বুয়েটে পড়াশোনা করে এমন একজন শিক্ষক হিসেবে আপনার সন্তানকে পড়াতে আসেন। হঠাৎ করেই আপনি জানতে পারলেন তিনি আসলে বুয়েটে পড়াশোনা করেন না এবং পড়ানোর মানও ভাল না। তখন আবার নতুন করে সন্তানের জন্য শিক্ষক খুঁজতে হবে আপনাকে। এক্ষেত্রে আপনাকে শুধু কষ্ট করে ইয়োডার ওয়েবসাইট (https://yodabd.com) এ গিয়ে একটি এ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হবে। এ্যাকাউন্ট তৈরি করে আপনি সহজেই আপনার সন্তানের জন্য পছন্দের শিক্ষক খুঁজে পাবেন। ইয়োডাতে শিক্ষক খোঁজার পাশাপাশি একটি হোয়াইট বোর্ড ফিচার যুক্ত করা হয়েছে। এর মাধ্যমে অডিও ভিজ্যুয়াল ইফেক্টসহ পুরো সেশন রেকর্ড করে রাখা যাবে। এটি মূলত দেশের ইলার্নিংয়ে নতুন সংযোজন। অর্থাৎ কোন শিক্ষক সরাসরি শিক্ষার্থীকে পড়াতে বাসায় না আসতে পারলেও এই ফিচারের মাধ্যমে অনায়াসে পড়াতে পারবেন। ইয়োডার শিক্ষক নিবন্ধ প্রক্রিয়ায় অনেকগুলো ধাপ পার করতে হয়। প্রথম শিক্ষক নিজে সব তথ্য প্রমাণ দিয়ে নিবন্ধন করবেন এর পর ইয়োডা কর্তৃপক্ষ সব তথ্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলে যাচাই-বাছাই করে ইয়োডা প্লাটফর্মে অভিভাবকদের জন্য উন্মুক্ত করবে। এর ফলে অভিভাবকদের কোনভাবে প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। অনলাইনে ইয়োডায় নিবন্ধন করলে যে কোন বাবা-মা তাদের সন্তানদের জন্য সেখান থেকে বেছে নিতে পারবেন গৃহশিক্ষক। আর ইয়োডায় শিক্ষকরা নিবন্ধিত হলে পাচ্ছেন নিজের চাহিদামতো শিক্ষার্থী। ডিপ্রজন্ম : কিভাবে সেবা দিচ্ছে ইয়োডা? সালমান : আমরা পুরো সেবাই ফ্রি দিচ্ছি। শিক্ষক খোঁজার ক্ষেত্রে সেবাটি সবসময়ই ফ্রি থাকবে। তবে ইয়োডার প্রিমিয়াম গ্রাহকদের জন্য আমরা WAVE (Whiteboard Audio Visual Environment) প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ দেব। যার জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি নেব। ওয়েভ প্রযুক্তির আওতায় শিক্ষক কখনও দুর্যোগের কারণে বাসায় আসতে না পারলেও অনলাইনে হোয়াইট বোর্ডের মাধ্যমে শিক্ষার্থীকে পড়াতে পারবেন। এই প্রযুক্তিটি বাংলাদেশে শুধু আমরাই নিয়ে এসেছি। এর মাধ্যমে অভিভাবকরা শিক্ষক কী পড়িয়েছেন তার পুরো সেশনটি যে কোন সময় দেখতে পারবেন। প্রক্রিয়াটিকে আরও সহজ করতে নিজস্ব এ্যাপও তৈরি করেছি। ডিপ্রজন্ম : ইয়োডার মতো একটা প্লাটফর্ম তৈরির চিন্তাধারা কেন আসল? সালমান : আমদের দেশে ব্যাঙ্গের ছাতার মতো টিউশন মিডিয়া গজিয়ে উঠেছে। আমি যখন বিবিএ তে লেখাপড়া করি তখন আমি এক ছাত্রকে বাসায় গিয়ে পড়াতাম। আর ওই টিউশনিটা পেয়েছিলাম একটা এজেন্সির মাধ্যমে। কিন্তু ওই এজেন্সিকে আমার প্রথম মাসের পুরো বেতনটাই দিয়ে দিতে হয়েছিল। তখন আমার খুবই খারাপ লেগেছিল। এরপরই আমার মাথায় এমন চিন্তা আসল। যে এমন একটা কিছু করব যাতে কাউকে কোন কমিশন না দিয়ে যেন টিউশন পাওয়া যায়। তখন থেকেই এমন একটা প্লাটফর্ম বাননোর চিন্তা মাথায় আসে। ডিপ্রজন্ম : ইয়োডা নিয়ে ভবিষ্যত পরিকল্পনা কী? সালমান : ইয়োডাকে আমি এমন একটা জায়গায় নিয়ে যেতে চাই যেন এর ওপর সবাই আস্থা রাখে। যাদের শিক্ষক প্রয়োজন তারা যেন নির্দ্বিধায় ইয়োডার ওপর ভরসা রাখে। আমরা ভেরিফায়েড করে মানসম্মত শিক্ষক রেখেছি এবং ইয়োডাকে আস্তে আস্তে পুরো দেশে পৌঁছিয়ে দেয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া আমাদের এখানে কমপক্ষে ২০০ জনের স্থায়ী চাকরির ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছি। ডিপ্রজন্ম : আমাদের দেশে একজন উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে প্রতিবন্ধকতা কি? সালমান : আমাদের দেশে একজন উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে ওঠতে বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়। পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক দিক দিয়ে খুব কমই সাহায্য পাওয়া যায়। তাছাড়া দক্ষ জনবলেরও সঙ্কট আছে আমাদের। ডিপ্রজন্ম : তরুণদের কাছে কি প্রত্যাশা? সালমান : তরুণরাই আমাদের আগামীর বাংলাদেশ। তাদের অবশ্যই দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করতে হবে। আজকের তরুণরাই পারবে আগামীর ভাল একটি বাংলাদেশ উপহার দিতে। তাই বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সব তরুণদের সহযোগিতা করার অনুরোধ করছি। ডিপ্রজন্ম : কেমন বাংলাদেশ দেখতে চান? সালমান : অবশ্যই খুব ভাল মাদকমুক্ত একটি বাংলাদেশ দেখতে চাই। দেশের প্রত্যেকটি লোক স্বশিক্ষিত হওয়ার স্বপ্ন দেখি। ক্ষুধা, দরিদ্রতা, দুর্নীতিমুক্ত ও বেকারমুক্ত একটি সুখী বাংলাদেশ আমার সব সময়ের কামনা।
×