ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

বিপদে জনগণের বন্ধু

প্রকাশিত: ০৯:০৩, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯

বিপদে জনগণের বন্ধু

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রবিবার রাজশাহীর সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে ৩৬তম বিসিএস (পুলিশ) ব্যাচের শিক্ষানবিস পুলিশ সুপারদের সমাপনী কুচকাওয়াজে বিপদে জনগণের বন্ধু হয়ে ওঠার আহ্বান জানিয়েছেন পুলিশের প্রতি । অস্বীকার করার উপায় নেই যে, বাংলাদেশের পুলিশ ব্রিটিশ কিংবা পাকিস্তানী ঔপনিবেশিক আমলের পুলিশের মতো নয়। তারা নির্যাতন-নিপীড়নকারী নয়; বরং জনগণের সেবক। দেশ ও জনগণের বন্ধু। এর পাশাপাশি এও বলতে হয় যে, মাঝে-মধ্যে ডিআইজি মিজান, ডিআইজি (প্রিজন) পার্থ বণিক কিংবা ফেনীর সোনাগাজী থানার ওসি মোয়াজ্জেমের অপকর্মের কারণে সার্বিকভাবে পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয়। সে কারণে তাদের জুটেছে কারাবাস, যেটা আগের সরকারের আমলে ছিল অকল্পনীয়। পুলিশের বিরুদ্ধে, বিশেষ করে থানার ওসিদের বিরুদ্ধে জনসাধারণকে কারণে-অকারণে হয়রানিসহ ঘুষ-দুর্নীতি-ধর্ষণ-চাঁদাবাজির অভিযোগও ওঠে প্রায়ই। তবে বর্তমান সরকারের কঠোর মনোভাবের কারণে জড়িত ও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থাও নেয়া হয়। যেটি আগে তেমন দেখা যেত না বললেই চলে। ঢাকায় নবনিযুক্ত ডিএমপি কমিশনারও বিষয়টি প্রকারান্তরে স্বীকার করে নিয়েছেন। প্রথম সংবাদ সম্মেলনে থানার পুলিশ সদস্যদের সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেছেন, মানুষের মন থেকে পুলিশভীতি দূর করতে হবে। থানায় সাধারণ মানুষকে হয়রানি করা চলবে না। সেবার মান না বাড়াতে পারলে প্রয়োজনে তিনি নিজে থানায় বসে ‘ওসিগিরি’ করবেন। জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের থানায় বসাবেন। ঘুষ-দুর্নীতি-অনিয়ম-চাঁদাবাজির বিরুদ্ধেও তিনি সরকার ঘোষিত ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। রাজধানীর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়েও তিনি তার পরিকল্পনার কথা জানান। অনেকটা এই প্রেক্ষাপটেই প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ ও গুরুত্ববহ। যথার্থ অর্থে একটি গণমুখী ও জনবান্ধব পুলিশ বাহিনী গড়ে তোলা বর্তমান সরকারের অন্যতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। ইতোমধ্যে মেট্রোরেল পুলিশ গঠনেরও উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। তবে পুলিশের সীমিত জনবল, পর্যাপ্ত আধুনিক যানবাহন ও অস্ত্রশস্ত্রের অভাব, তথ্যপ্রযুক্তিগত সুযোগ-সুবিধার স্বল্পতা, মাত্রাতিরিক্ত খাটুনি ইত্যাদি অস্বীকার করা যায় না। বর্তমান সরকারের আমলে তাদের সুযোগ-সুবিধা, এমনকি বেতন-বোনাস বর্ধিত করা হয়েছে বহুলাংশে। পুলিশের বিরুদ্ধে ঘুষ ও দুর্নীতির অভিযোগও তুলনামূলকভাবে কম। ২০০৯ সালে পুলিশ ও জনসংখ্যার অনুপাত ছিল ১ : ১৩৫৫। বর্তমানে তা ১ : ৮০১। খুব শীঘ্রই পুলিশ বাহিনীতে আরও পঞ্চাশ হাজার সদস্য নিয়োগ দেয়া হবে। তখন এই হার আরও কমে আসবে। সময় ও যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এই বাহিনীর আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ, মাদক নির্মূল ও প্রতিরোধে পুলিশ বাহিনীর সাফল্যও উল্লেখ করার মতো। প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, জঙ্গী দমনে বাংলাদেশ পুলিশ বিশ্বে এখন রোল মডেল। অধুনা এর সঙ্গে নিরাপদ সড়ক ও খাদ্যের জন্য আন্দোলন যুক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীকে সাফল্যের এই ধারাবাহিকতা অক্ষুণœ রাখতে হবে যে কোন মূল্যে। ইদানীং রাজধানী ও দেশের অন্যত্র খুন-ধর্ষণ-সড়ক দুর্ঘটনা অনেক বেড়েছে, তাও সত্য। এসব ক্ষেত্রে পুলিশ ও গোয়েন্দা বাহিনীকে আরও তৎপর এবং নজরদারি বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে জনসাধারণকে হয়রানিমুক্ত সেবার পাশাপাশি সর্বস্তরে পুলিশের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
×