ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

খোলা বাজারে ৪৫ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ বেচছে টিসিবি

প্রকাশিত: ১০:৫২, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯

খোলা বাজারে ৪৫ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ বেচছে টিসিবি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দাম বেড়ে যাওয়ায় অস্থিরতা বিরাজ করছে পেঁয়াজের বাজারে। খুচরা বাজারে প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬৫-৭০ টাকায়। দুদিনের ব্যবধানে কেজিতে ২৫ টাকা দাম বেড়ে যাওয়ায় অস্বস্তিতে দেশের সাধারণ ভোক্তারা। ভোক্তাদের দাম কমানোর আশ্বাস দিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম কমে আসবে। বর্তমানে দেশে ২৮ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ মজুদ রয়েছে। এই পেঁয়াজ বাজারে আসলে ভোক্তারা সহনীয় মূল্যে পেঁয়াজ কিনতে পারবেন। ইতোমধ্যে রাষ্ট্রীয় বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা টিসিবি (ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ) খোলা বাজারে ৪৫ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ বিক্রি কার্যক্রম শুরু করেছে। মঙ্গলবার বিকেলে পেঁয়াজের দাম নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সভাকক্ষে বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে বৈঠক করেন নবনিযুক্ত বাণিজ্য সচিব ড. মোঃ জাফর উদ্দিন। এছাড়া ট্যারিফ কমিশনের সদস্য আবু রায়হান আল বিরুনি ও মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভায় বাণিজ্য সচিব বলেন, সভা থেকে খুব শক্তভাবে বলতে চাই আমাদের মজুত সন্তোষজনক। যেভাবে দাম বাড়ানো হচ্ছে, সেটা আশা করি থাকবে না এই মিটিংয়ের পরে। দাম বৃদ্ধির কারণ উল্লেখ করে বাণিজ্য সচিব বলেন, ভারতের মহারাষ্ট্রে পেঁয়াজের ফলন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাদের অভ্যন্তরীণ বাজারে দর বেশ বৃদ্ধি পায়। এছাড়া ভারত সরকার পেঁয়াজের ন্যূনতম রফতানি মূল্য টন প্রতি ৮৫০ ডলার নির্ধারণ করে। আগে যেখানে ২৫০-৩০০ ডলারে আমদানি করা যেত, তা ৮৫০ ডলারে এসেছে। তিনি বলেন, আামরা হিসাব করে দেখলাম আমদানি পর্যায়ে যেগুলো পাইপলাইনে আছে এবং বর্তমানে যে মজুত আছে, তা সন্তোষজনক। কাজেই আমার মনে হয়, পেঁয়াজ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার মতো কারণ নেই। বাণিজ্য সচিব বলেন, পাইকারি থেকে খুচরা পর্যায়ে বেশি গ্যাপ মনে হচ্ছে। এটা যাতে কমে আসে, সেজন্য ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ থেকে শুরু করে আরও কিছু এজেন্সি এগুলো মনিটরিং করে থাকে। আশা করি মনিটরিং জোরদার করা হচ্ছে। এই সমস্যাটা আর থাকবে না। তিনি বলেন, পাইকারি থেকে খুচরায় যে দাম বাড়ছে, আমরা সিদ্ধান্ত দিয়ে দিলাম আজকেই মনিটরিং জোরদার করা হচ্ছে। আপনারা একটু ধৈর্য ধারণ করেন। আমাদের একটু সময় দেন। আশা করি এই সমস্যা থেকে খুব সহসাই বের হতে পারব। বাণিজ্য সচিব আরও বলেন, গত ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে বাজারদরের উর্ধগতি রোধে ন্যায্য মূল্যে ট্র্যাক সেলের মাধ্যমে খোলা বাজারে পেঁয়াজ বিক্রির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া পেঁয়াজ আমাদানির ক্ষেত্রে এলসি মার্জিন এবং সুদের হার হ্রসের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এক থেকে দেড় মাসের জন্য এই সমস্যা হয়েছে জানিয়ে সচিব বলেন, আশা করি টিসিবি কার্যকর ভূমিকা পালন শুরু করেছে। প্রসঙ্গত, গত কোরবানি ঈদের আগে থেকে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। গত কোরবানির সময় ৫০ টাকার নিচে কোথাও কোন পেঁয়াজ পাওয়া যায়নি। কোরবানি শেষ হলেও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে বাজারে। বর্তমান প্রতিকেজি পেঁয়াজ ৬৫-৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। এতে করে সাধারণ মানুষের কষ্ট বাড়ছে। দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে দুদিন আগে জরুরী ভিত্তিতে টিসিবি ট্র্যাক সেলে পেঁয়াজ বিক্রির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। বর্তমান খোলা বাজার থেকে ৪৫ টাকা দরে টিসিবির পেঁয়াজ কিনছে নগরবাসী। কম দামে টিসিবির পেঁয়াজ কিনতে ট্র্যাকগুলোর সামনে ভিড় বাড়ছে মানুষের। বাণিজ্য সচিবের মতো আশাবাদ ব্যক্ত করে বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের সদস্য আবু রায়হান আল বিরুনি বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পেঁয়াজের দাম কমে আসবে। ইতোমধ্যে রাজধানীর ৫ স্থানে ট্র্যাকে করে টিসিবির পেঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে। তবে এত অল্প সময়ের মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটির দাম কমাতে কি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তা খোলাসা করেননি আবু রায়হান। পেঁয়াজের দাম কমার কারণ ব্যাখ্যায় আবু রায়হান আল বিরুনি বলেন, ট্যারিফ কমিশন এ্যানালাইসিস করে দেখেছে আমাদের বার্ষিক পেঁয়াজের চাহিদা ২৪ লাখ মেট্রিক টন। দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন হয় ২৩ লাখ ৭৬ হাজান মেট্রিক টন। ৩০ শতাংশ পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায়। পচনের কারণে আমাদেরকে ১০ থেকে ১১ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়। তিনি বলেন, ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে ১২ লাখ ৭১ হাজার ৮৩০ মেট্রিক টন। উৎপাদন রয়েছে ১৬ লাখ মেট্রিক টন। সুতরাং আমরা বাজার বিশ্লেষণ করে দেখেছি ২৮ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ মজুদ রয়েছে যা যথেষ্ট। ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে দেশে উৎপাদিত নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসবে জানিয়ে তিনি বলেন, ভারতের আবহাওয়া ও কৃষি ব্যবস্থার কারণে এক মাস আগে নতুন পেঁয়াজ নামে। নবেম্বরে যখন ভারতের বাজারে নতুন পেঁয়াজ নামবে তখন তাদের ট্যারিফ বাধা উঠিয়ে দেবে। তখন প্রতি টন পেঁয়াজের দাম ৩০০ ডলারে নেমে আসবে। এ কারণে পেঁয়াজের দাম বাড়ায় ঘাবড়ানোর কিছু নেই। পাইকারি থেকে খুচরা বাজার পর্যন্ত দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধির যে বিষয়টি রয়েছে তা মনিটরিং আরও জোরদার করা হচ্ছে। এছাড়া মিয়ানমারসহ আরও কয়েকটি দেশে থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা যায় কিনা তা নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিনিধিরা কথা দিয়েছেন, মালামাল খালাস থেকে শুরু করে পরিবহন ব্যবস্থায় কোন সমস্যা হবে না।
×