ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভাল ॥ ও. কাদের

প্রকাশিত: ১০:৫২, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯

দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভাল ॥ ও. কাদের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অপকর্ম-অনিয়ম যারা করে, তারা দলে না থাকাই ভাল বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, যারাই অপকর্ম করুক তাদের কোন রকম ছাড় নয়। কেউ যদি মনে করে পার্টির লেবাস লাগিয়ে অপকর্ম করবে তা আর চলতে দেয়া হবে না। অপকর্মকারী যত ক্ষমতাধর হোক না কেন তার বিরুদ্ধে শাস্তি নিশ্চিত। চাঁদাবাজির অভিযোগে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে পরিবর্তন এবং যুবলীগের অভিযোগবিদ্ধ নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগের মধ্যেই এমন মন্তব্য এলো দলের সাধারণ সম্পাদকের কাছ থেকে। মঙ্গলবার সচিবালয়ে নিজ দফতরে সমসাময়িক ইস্যুতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, যারা অপকর্ম করে, অনিয়ম করে, এ ধরনের নেতাকর্মীদের দলের ভেতরে না থাকাই মনে করি যথার্থ এবং দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভাল বলে চিন্তা ভাবনা করছি। সরকারের সেতুমন্ত্রী কাদের বলেন, দলের কেউ যখন ‘অপকর্ম’ করে, তখন তা সরকারের উন্নয়ন অর্জন ম্লান করে দেয়। একটি ‘খারাপ আচরণের’ কারণে ১০টি ভাল কাজ ম্লান হয়ে যায়। রুলিং পার্টিতে আমাদের মতো দেশে একটি সমস্যা থেকেই যায়, সেটি হচ্ছে কিছু আগাছা-পরগাছা, এসব সুবিধাবাদি স্রোতের সঙ্গে থাকার চেষ্টা করে। কিন্তু এরাই বেশিরভাগ সময় সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এদের বিষয়ে আমাদের আরও সচেতন, সোচ্চার হতে হবে। নইলে বদনামের শেষ থাকবে না। সামান্য আগাছা-পরগাছার জন্য বদনাম নিজেদের ঘাড়ে নিতে চাই না। চাঁদাবাজি আর অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগে আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের নেতৃত্বে পরিবর্তন এসেছে এবং যুবলীগও যে ট্রাইব্যুনাল গঠনের কথা বলেছে, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, এখানে স্পষ্ট বিষয়টা হচ্ছে, সরকার ও দলের ইমেজটা ক্লিন হওয়া দরকার। প্রধানমন্ত্রী ক্লিন ইমেজের জন্য সারা বিশ্বে প্রশংসিত। যুবলীগের ট্রাইব্যুনালের প্রতিও প্রধানমন্ত্রীর দফতরের নজর আছে বলে জানান ওবায়দুল কাদের। সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে কয়েকটি ঘটনায় চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠার প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষুব্ধ হলে ক্ষমতাসীন দলের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে সরিয়ে দেয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দরপত্রের কাজ থেকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুই কোটি টাকা চাঁদা দাবি করলেও পরে এক কোটি টাকা দেয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত হয়েছিল। তবে শোভন এবং রাব্বানী উপাচার্য ফারজানা ইসলামের কাছে চাঁদা দাবির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এই প্রেক্ষিতে ওবায়দুল কাদের বলেন অপকর্ম যেই করুক, তাকে শাস্তি পেতে হবে। গোয়েন্দা সংস্থাকেও বলা হয়েছে তথ্য দেয়ার জন্য, কোথাও অপকর্ম হলে কাউকে যেন ছাড় দেয়া না হয়, সে দলে যত শক্তিশালীই হোক। ভাল কাজে পুরস্কার ও খারাপ কাজে তিরষ্কার থাকবে। ছাত্রলীগের ঘটনা ‘হতাশ করেছে’ মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ছাত্রলীগের বিষয়টা নজিরবিহীন ঘটনা ঘটল, অনেক যাচাই-বাছাই করে কমিটি দিয়েছিল। আমি ঘোষণা দিয়েছি ভাল রেজাল্ট ও রিপোর্ট দেখে। এত অনিয়ম ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের বিষয় এটা আসলে হতাশ করেছে। সে কারণে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা তাকে নিতে হয়েছে এবং সবাই সমর্থন দিয়েছি। আশা করি এটা অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হবে। অনিয়মে মন্ত্রী-এমপিকেও ছাড় দেয়া হয়নি দাবি করে সেতুমন্ত্রী বলেন, সাংগঠনিকভাবে শাস্তি আছে, প্রশাসনিকভাবেও শাস্তি আছে। অপরাধ অপকর্ম করে কেউ পার পাবে না, এক্ষেত্রে সরকার বা দলের পক্ষ থেকে ছাড় নেই। যুবলীগের ক্ষেত্রেও ছাত্রলীগের মতো কোন সিদ্ধান্ত আসছে কিনা প্রশ্ন করলে ওবায়দুল কাদের বলেন, যুবলীগ উদ্যোগে নিয়েছে, দেখি আমরা পর্যবেক্ষণ করছি, তারা বিষয়টা কীভাবে নিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী দৃষ্টান্ত স্থাপন করে পথ দেখিয়ে দিয়েছেন। প্রত্যেকে আপন করে শুদ্ধি অভিযান চালাতে পারে। দলে নতুন সাধারণ সম্পাদক হলে স্বাগতম ॥ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ আগামী ২০ ও ২১ ডিসেম্বর দলের জাতীয় সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগামীতে সাধারণ সম্পাদক পদে কোন পরিবর্তন আসছে কিনা প্রশ্ন করলে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক বলেন, জেনারেল সেক্রেটারি পদটি মূলত পার্টির সুপ্রীম নির্দেশনায় চলে, এখানে প্রার্থী হওয়ায় অধিকার সবার আছে, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে হয়। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালনের সুযোগকে ‘বিশাল ব্যাপার’ হিসেবে বর্ণনা করে কাদের বলেন, অনেক কর্মী আজীবন ত্যাগ করে এই পদ পায়নি, আমি ভাগ্যবান মানুষ। একবার হয়েছি এটাই বিরাট ব্যাপার, আরেকবার আমি থাকব কিনা- নির্ভর করে নেত্রীর ওপর, তিনি নতুন কিছু ভাবতে পারেন, নতুন মুখ চাইতে পারেন। আমাকে যদি বলেন যে ‘অন্য দায়িত্ব পালন কর’, আমার কোন অসুবিধা নেই। তিনি যদি বলেন ‘থাকো’, আমি থাকব। তিনি যদি বলেন দায়িত্বে পরিবর্তন হবে, নতুন কোন মুখ এলে স্বাগতম। বলেন, পারসোনালি আমি কোন প্রকার প্রার্থিতা ঘোষণা করব না। দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালনে আপনি সফল কিনা, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সরকারের মন্ত্রী হিসেবে সফলতা থাকলে ব্যর্থতাও রয়েছে। একজন মানুষ সবদিক থেকে শতভাগ পারফেক্ট হন না। তিনি বলেন, ‘মানুষের জীবনে সবকিছু পূর্ণ হয় না। আমার আন্তরিকতার ঘাটতি ছিল না। অসুস্থতার পরেও দল এবং সরকারের দায়িত্ব পালন করেছি, সময় দিয়েছি।’ ফখরুলকে আয়না দেখার পরামর্শ ॥ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত রবিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, চাঁদাবাজির অভিযোগে শোভন-রাব্বানীকে ছাত্রলীগের নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া ক্ষমতাসীনদের দুর্নীতিরই স্বীকৃতি। এর প্রতিক্রিয়ায় ওবায়দুল কাদের বলেন, মির্জা ফখরুল প্রতিদিনই দুর্নীতি দুর্নীতি বলে চিৎকার করছেন। এটুকু বলতে চাই, এ সরকারের আমলে হাওয়া ভবনের মতো লুটপাট দুর্নীতি হয়নি, আমাদের কোন লুটপাটের হাওয়া ভবন নেই। কাদের বলেন, ‘দুর্নীতিতে পাঁচবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন একটা দল যখন এরকম বলে হাস্যকর! হাসবো কি কাঁদবো ভেবে পাই না। দুর্নীতি লুটপাটের জন্য তাদের নেতাদের কি অবস্থা হয়েছে তা কি তারা চিন্তা করে না? আয়নায় নিজেদের চেহারাটা ভাল করে দেখে দুর্নীতির অভিযোগ আনুক। নিজেরা কি করে সেটা আগে দেখুন। তার প্রতি এ অনুরোধই করব। ফারজানার দুর্নীতি প্রমাণ হলে ব্যবস্থা ॥ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে প্রমাণ হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। কমিশন বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠা জাবি উপাচার্যের পদত্যাগের দাবির বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ প্রমাণ হলে, নৈতিক স্খলনজনিত অভিযোগ এলে, সেটা যদি তদন্ত করে প্রমাণ হয় তিনিও কোন আইনের উর্ধে নন। তিনি যদি কোন অন্যায় করে থাকেন, এখানে যদি তার কোন অপকর্মের সংশ্লিষ্টতা থাকে, তবে অবশ্যই তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘চীনের সহযোগিতা নেয়া মানে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কহানি নয়। ভারত আমাদের প্রতিবেশী দেশ। তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় আছে, থাকবে। অসমের বিষয়ে ভারত সরকার বাংলাদেশকে উদ্বিগ্ন না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।
×