ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ডিএমপিতে ভাল ও মন্দ পুলিশের তালিকা হচ্ছে, আতঙ্ক

প্রকাশিত: ১০:৫৩, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯

ডিএমপিতে ভাল ও মন্দ পুলিশের তালিকা হচ্ছে, আতঙ্ক

শংকর কুমার দে ॥ রাজধানী ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ৫০ থানার অফিসার ইনচার্জের (ওসি) মধ্যে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। ঢাকা মহানগর পুলিশে (ডিএমপি) কর্মরত প্রায় ২৭ হাজার পুলিশ কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্যদের মধ্যে যারা দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোর, মাদক বাণিজ্যসহ নানা ধরনের অপরাধে জড়িত তাদের শুরু হয়েছে হৃদকম্পন। ডিএমপির ভাল পুলিশ ও মন্দ পুলিশের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। নতুন পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হিসেবে যোগদান করার পর পাল্টে যেতে শুরু করেছে ডিএমপির থানা পুলিশের কার্যক্রম। রাজধানীর ৫০ থানার ওসিসহ পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রতি হয়রানিমূলক কার্যক্রমের পরিবর্তে গণমুখী, জনবান্ধব ও সেবাধর্মী কার্যক্রমের নির্দেশ দিয়েছেন নতুন ডিএমপি কমিশনার। ডিএমপি সদর দফতর সূত্রে এ খবর জানা গেছে। ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, ডিএমপি’র ৫০ থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) ও ডিসিগণের প্রতি পুলিশকে গণমুখী, জনবান্ধব ও সেবাধর্মী করার নির্দেশ দিয়েছেন নতুন পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম। কোন পুলিশ কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে নিরপরাধ মানুষ হয়রানি, চাঁদাবাজির শিকার বা পুলিশের সেবা পেতে কোন আর্থিক লেনদেন হওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেলে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে নির্দেশনায়। পুলিশ সম্পর্কে সাধারণ মানুষ যেন পুলিশ ভীতি থেকে বের হয়ে যাতে আসতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে জঙ্গীবাদ, মাদক অপরাধের বিরুদ্ধে সরকার ঘোষিত জিরো টলারেন্স দেখানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ও সৎ-সজ্জন বলে পরিচিত নতুন পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম গত ১৪ সেপ্টেম্বর ডিএমপি কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পরের দিন ১৫ সেপ্টেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, প্রয়োজনে ওসির চেয়ারে বসে ওসিগিরি করব। নতুন পুলিশ কমিশনারের দায়িত্ব নিয়ে জনগণ কাক্সিক্ষত সেবা ও ভাল আচরণ নিশ্চিত করার এমন সুস্পষ্ট হুঁশিয়ারির পর রাজধানীর ৫০ থানার ওসি ও সংশ্লিষ্ট জোন ডিসিগণের প্রতি নির্দেশনা দেন নতুন পুলিশ কমিশনার। নতুর পুলিশ কমিশনারের কঠোর হুঁশিয়ারির পর পাল্টে যেতে শুরু করেছে। রাজধানীর ৫০ থানার চালচিত্র ॥ ডিএমপি সুত্রে জানা গেছে, রাজধানীর ৫০ থানা পুলিশের ওসি, ডিসিসহ সকল পুলিশের মধ্যে কারা ভাল আর কারা মন্দ পুলিশ তার একটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। ভাল পুলিশ কর্মকর্তারা পদোন্নতি, প্রাইস পোস্টিংসহ পুরস্কৃত হবেন। আর মন্দ পুলিশ কর্মকর্তরা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণসহ তিরস্কৃত হবেন। রাজধানীর ৫০ থানার ওসি’র মধ্যে কে কতদিন ডিএমপিতে ওসির দায়িত্ব পালন করছেন, কে কতটি থানার ওসি হিসেবে ইতোমধ্যে দায়িত্ব পালন করেছেন, থানায় আসা মানুষের সঙ্গে কে ভাল আচরণ করেছেন আর কে খারাপ আচরণ করেছেন তাও খতিয়ে দেখা হবে। সেবাপ্রত্যাশী মানুষের সঙ্গে হয়রানি করেন কিনা, কারও বিরুদ্ধে আর্থিক লেনদেনের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে কিনা, থানার সার্বিক দায়িত্ব পালনে কোন গাফিলতি রয়েছে কিনা নানা বিষয় পর্যালোচনা ও মনিটরিং করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকার ৫০ থানার ওসিদের মধ্যে যারা তদ্বির, তোয়াজ করে ঘুরে ফিরে ডিএমপির এক থানা থেকে আরেক থানায় দায়িত্ব পালন করছেন তাদের মধ্যে বেশি আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এসব ওসিসহ উর্ধতন ও অধঃস্তন পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে অনেকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, ঘুষ, মাদক, অসামাজিক কার্যকলাপসহ নানা ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার মতো অভিযোগ আছে। যেসব পুলিশ কর্মকর্তা-সদস্যের বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযোগ আছে তাদের মধ্যে রীতিমতো হৃদকম্পন শুরু হয়ে গেছে। উদাহরণ হিসেবে, রাজধানীর নবাবপুরে টাকার বিনিময়ে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের তিনতলা বাড়ি দখলে সহায়তা করার অপরাধে কিছুদিন আগে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ওয়ারী বিভাগের ডিসি মোহাম্মদ ইব্রাহিম খান। অথচ একই ধরনের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে তদন্তনাধীন থাকা অবস্থায়ই ডিএমপির বংশাল থানার ওসি শাহিদুর রহমান প্রাইস পোস্টিং পেয়েছেন কোতোয়ালি থানায়। এই ধরনের ঘটনাগুলোর ফাইল আবার নতুন করে আসছে নতুন পুলিশ কমিশনারের টেবিলে। ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, প্রায় দুই কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত মেগাসিটি পরিচিত রাজধানী ঢাকা মহানগরীতে (ডিএমপি) ৫০টি থানার অধীনে প্রায় ২৭ হাজার পুলিশ কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্য কর্মরত থেকে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে জানমালের নিরাপত্তায় নিয়োজিত। ডিএমপিতে ৫০টি থানা ছাড়াও গোয়েন্দা ও অপরাধ বিভাগ, অপরাধ ও অপরাশেন বিভাগ, ট্রাফিক বিভাগ, সুরক্ষা ও প্রটোকল বিভাগ, পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট ও সদর বিভাগসহ বিভিন্ন ডিভিশনে কর্মরত পুলিশ কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। এ ছাড়াও ডিএমপির সহযোগিতায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), বাংলাদেশ আনসার, পুলিশের বিশেষ শাখা, র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র‌্যাব) নিরাপত্তা সংস্থা, বিশেষ নারী পুলিশ বাহিনী আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে কর্মরতদের সঙ্গে যোগাযোগ, সমন্বয় সাধনসহ নানা বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন ডিএমপি কমিশনার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, সরকারের সর্বোচ্চ মহলে সততা, নিষ্ঠাবান, কর্মঠ, বিশ্বস্ত, আস্থাভাজনসহ নানাদিক বিবেচনায় নিয়ে নিয়োগ দেন ডিএমপি পুলিশ কমিশনারের পদে। কারণ একটি দেশের রাজধানী হচ্ছে সুশাসন, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের প্রাণকেন্দ্র। রাজধানীর পুলিশ কমিশনারের দক্ষতা, অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভর করে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সরকারের গণমুখী, জনবান্ধব সম্পর্কিত ভাবমূর্তির বিষয়টিও। ডিএমপির নতুন পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম অত্যন্ত সৎ, সজ্জন, কর্মঠ, নিষ্ঠাবান হিসেবে জঙ্গীবাদ, মাদক, দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে জেলা প্রধান থেকে বিভিন্ন ইউনিট প্রধানের দায়িত্ব পালনের সুদীর্ঘকালের রেকর্ড আছে। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়েই সরকারের সর্বোচ্চ মহলের নির্দেশে মোহাম্মদ শফিকুল ইসলামের ওপর ডিএমপির নতুন পুলিশ কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্মকর্তার দাবি।
×