ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

আসামি পক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক শুরু

প্রকাশিত: ১১:১১, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯

আসামি পক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক শুরু

নিজস্ব সংবাদদাতা, ফেনী, ১৭ সেপ্টেম্বর ॥ সোনাগাজীর মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত হত্যা মামলায় মঙ্গলবার আসামি পক্ষের আইনজীবী আদালতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করেন। যুক্তিতর্ক শেষ করতে আরও ২/৩ কার্যদিবস সময় লাগতে পারে বলে জানান আসামি পক্ষের আইনজীবীরা। বুধবার বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত আদালত মুলতবি করেন বিচারক। আসামি পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষ হলে রায় ঘোষণার দিন ঘোষণা করবে আদালত। মঙ্গলবার আদালতে মামলার কর্যক্রম শুরু হলে ঢাকা থেকে আসা আসামি পক্ষের আইনজীবী এ্যাডভোকেট ফারুখ আহমেদ যুক্তিতর্কের শুরুতে বলেন, এই আদালতে ৪/১ ও ৩০ ধারায় আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করা হয়েছে। সে হিসাবে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে এ মামলা চলতে পারে না। কারণ ২০০৭ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন আইন বলবৎ রয়েছে। আদালত সিআরপিসি ২২৭ ধারায় এটা অল্টার করতে পারেন। এরপর চার্জশীটসহ আসামিদের বিরুদ্ধে দেয়া সাক্ষ্য, জেরা ও আসামিদের দেয়া ১৬৪ ধারায় রেকর্ড করা জবানবন্দীর ওপর যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। আদালতে চার্জশীট দালিলিক সাক্ষ্য হিসাবে গ্রহণ করা হযেছে। যা আইনে কাভার করে না। তিনি উল্লেখ করেন যে ৬৩ ডিএলআর ২০৪ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, পুলিশ রিপোর্ট এক্সজিভিট হয় না। অর্থাৎ দালিলিক সাক্ষ্য হিসাবে আদালত গ্রহণ করে না। এ সময় এ্যাডভোকেট গিয়াস উদ্দিন নান্নু বলেন, তার ৪০ বছর এ পেশায় কোথাও কোন মামলায় চার্জশীট এক্সজিভিট হতে দেখেননি। এ্যাডভোকেট ফারুখ আদালতে বলেন-তদন্তকারী কর্মকর্তা ১৯ পৃষ্ঠার চার্জশীট দেখে দেখে ৪ দিন যাবত আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন, যা সাক্ষ্য আইনের পরিপন্থী। সে সময়ে বিষয়টি আদালতের নজরে আনা হয়েছে। একই ভাবে জেরার সময় নথি দেখে দেখে জেরার জবাব দিয়েছেন, তাও সাক্ষ্য আইনের পরিপন্থী। এ বিষয়টিও সে সময় আদালতের নজরে আনা হয়েছে। পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদারের নির্দেশে ফরমায়েশী চার্জশীট প্রদান করেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। এর প্রমাণ হচ্ছে আদালতে চার্জশীট জমা দেয়ার আগের দিন পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার ঢাকা পিবিআই সদর দফতরে সংবাদ সম্মেলন করে নুসরাত হত্যাকা-ে আসামিদের কার কি ভূমিকা তা ব্যাখ্যা করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে বনজ বাবুর বডি ল্যংগুইজে প্রকাশ করে চার্জশীটের বিষয় তার প্রভাব ছিল। যা দেশবাসী টেলিভিশনে দেখেছে। এ ভিডিওটি আদালতে উপস্থাপন করা হবে। কারাগার থেকে নুসরাত হত্যার নির্দেশ দিয়েছে এ অভিযোগ খ-ন করে তিনি বলেন- কারাগারের জেল সুপারসহ ৫ জন কারাগারের কর্মকর্তা, কারারক্ষীর সাক্ষী ও জেরা হয়েছে। তাদের কেউ করাগারে বৈঠক করে ষড়যন্ত্র করেছে তা বলেনি। কারারক্ষী ছবি রঞ্জন ত্রিপুরা এমন কোন কথা আদালতে বলেনি যে দর্শনার্থী যারা কারাগারে সিরাজউদদৌলার সঙ্গে দেখা করেছে তাকে বা তাদের টিআই প্যারেড বা আদালতের কাঠগড়ার থাকা আসামিদের চিনতে পারবেন। এছাড়া কারাগারের দর্শনার্থী রেজিস্টারের একটা জায়গায় নামের পাশে লাল কালির চিহ্ন দেয়া আছে। এতে কার নির্দেশনা ছিল এটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এটাতে প্রমাণ হয় যে মূল রেজিস্টার আদালতে জমা না দিয়ে নতুনভাবে রেজিস্টার বানিয়ে আদালতে জমা দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে বেনিফিট আব ডাউটের সুবিধা পাবেন আসামিরা। যে ধারায় মামলা চলছে তাতে হুকুমের আসামি দেয়ার বিধান নেই। ২৭ মার্চ নুসরাতের শ্লীলতাহানির যে মামলা হয়েছে তার এখনও বিচার হয়নি। সিরাজউদদৌলাকে দোষী হিসাবে আদালত সাব্যস্ত করেনি। যদি ওই মামলায় সিরাজউদদৌলার সাজা হতো তা হলে ক্ষোভের কারণে নুসরাতকে হত্যার পরিকল্পনা করতে পারত। এটা ভাবার কোন কারণ নেই। তিনি বলেন, মামলার তদন্ত চলাকালে আলামত উদ্ধার হলে তা আদালতকে জানানো আইনে বাধ্যবাধকতা বা উচ্চ আদালতের ডিসিশন আছে। এ মামলায় তা করা হয়নি। উদ্ধার করা সব আলামত চার্জশীট গ্রহণের সময় আদালতকে জানানো হয়েছে। এটাও আইনের পরিপন্থী। ১৬৪ ধারায় আসামিদের জবানবন্দীতে অন্য কারও নাম আসলে সে প্রসঙ্গে তিনি আদালতকে জানান, উচ্চ আদালতের ডিসিশন আছে ১৬৪ ধারায় কারও নাম আসলে হবে না। তা ক্রসম্যাচিং করে দেখতে হবে। বুধবার আবার আদালতে আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক শুরু হবে। বিচার শুরুর ৪৭ কার্য দিবসে ৮৭ জন সাক্ষী সশরীরে আদালতে এসে সাক্ষ্য প্রদান করেন। মামলার অভিযোগপত্রে ৯২ জন সাক্ষীর নাম দিয়েছে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই। বহুল আলোচিত ফেনীর সোনাগাজী মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলার ধার্য তারিখ মঙ্গলবার সকালে ফেনী করাগার থেকে ১৫ জন আসামিকে আদালতে আনা হয়েছে। কমরুন নাহার মনি ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা বিধায় যুক্তিতর্ক চলাকালীন আদালতে হাজির থাকা থেকে অব্যাহতির আদেশ দেয় আদালত।
×