ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আমানত কমেছে ৯৫০ কোটি টাকা

প্রকাশিত: ১১:৩৩, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯

আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আমানত কমেছে ৯৫০ কোটি টাকা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ কমে যাচ্ছে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আমানতের পরিমাণ। সম্প্রতি প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সর্বমোট আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৮ হাজার ৩৩০ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বরে যা ছিল ৪৮ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে আমানতের পরিমাণ ছিল ৪৯ হাজার ২৮০ কোটি টাকা। অর্থাৎ ছয় মাসে আমানত কমেছে ৯৫০ কোটি টাকা। উল্লেখ্য, প্রতি তিন মাস পরপর ‘ফাইন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি এ্যাসেসমেন্ট রিপোর্ট’ শীর্ষক প্রতি প্রতিবেদন প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, আমানত কমে যাওয়ায় দেনা বাড়ছে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর। গত বছরের সেপ্টেম্বরে বিভিন্ন ব্যাংক ও অন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নেয়া ঋণের পরিমাণ ছিল ১৮ হাজার ১৮০ কোটি টাকা। মার্চে বেড়ে হয়েছে ১৯ হাজার ৬০ কোটি টাকা। ছয় মাসে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দায় বেড়েছে ৮৮০ কোটি টাকা। এ ছাড়া মাত্র তিন মাসে মূলধন কমেছে ২ হাজার ৩১০ কোটি। মার্চে মূলধন দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ১৬০ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বরে যা ছিল ১১ হাজার ৪৭০ কোটি টাকা। আর সেপ্টেম্বরে মূলধন ছিল ১০ হাজার ৮৯০ কোটি টাকা। জানা গেছে, দেশে বর্তমানে ৩৪টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান কার্যক্রমে আছে। বিভিন্ন সময় রাজনৈতিকভাবে প্রভাব খাটিয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স নিয়েছেন প্রভাবশালীরা। তারাই পরিচালনার দায়িত্বে থেকে জনগণের জমানো টাকা ঋণের নামে আত্মসাত করেছেন। অন্তত ১৩টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যাদের বিভিন্ন সঙ্কট রয়েছে। তীব্র সঙ্কট অর্থাৎ বন্ধের উপক্রম হয়েছে পিপলস লিজিং, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং এ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি), এফএএস ফিন্যান্স এ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ও ফার্স্ট লিজ ফাইন্যান্স এ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট। এসব প্রতিষ্ঠানের আমানতকারী নিজেদের অর্থ ফেরত পেতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন কিন্তু ফেরত পাচ্ছেন না। এমন অবস্থায় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে। মানুষ টাকা উত্তোলন করে ব্যাংক বা অন্য কোন উৎসে বিনিয়োগ করছে। গ্রাহক আকৃষ্ট করতে তারা ১২ শতাংশ সুদে আমানত সংগ্রহ করেছেন, যখন ব্যাংকে টাকা জমানোয় সুদহার ছিল ৬ শতাংশেরও কম। ই-মেইল, মোবাইলে এসএমএস ও কল এবং সরাসরি দেখা করে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা গ্রাহকদের প্রলুব্ধ করে আমানত সংগ্রহ করেছেন। যেসব প্রতিষ্ঠান এ প্রক্রিয়ায় উচ্চ সুদে আমানত সংগ্রহ করেছে, সেসব প্রতিষ্ঠানই এখন অর্থ ফেরত দিতে পারছে না। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় এ ধরনের অরাজকতা শুরুর পর গত বছর সার্কুলার জারি করে মোবাইলে এসএমএস ও কল দেয়া নিষিদ্ধ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। জনগণের অর্থ ফেরত দিতে ব্যর্থ হওয়ায় কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে পিপলস লিজিং নামে একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। ১৯৯৭ সালে কার্যক্রম শুরু করে পিপলস লিজিং। প্রতিষ্ঠানটির ১ হাজার ১৩১ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে খেলাপী ৭৪৮ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৬৬ দশমিক ১৪ শতাংশ। এ প্রতিষ্ঠানে আমানতকারীদের ২ হাজার ৩৬ কোটি টাকা জমা রয়েছে। গত মাসে প্রতিষ্ঠানটি অবসায়নের উদ্যোগ নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আদালতের আদেশে অবসায়ক নিয়োগ দেয়া হয়েছে, যিনি বন্ধের কাজটি চূড়ান্ত করবেন। মূলত পিপলস লিজিং বন্ধের খবরে গ্রাহকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ব্যক্তি গ্রাহক থেকে শুরু করে ব্যাংক-বীমাসহ অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে আমানত তুলে নিতে শুরু করেন। বাধ্য হয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এমডিরা পৃথকভাবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ফজলে কবিরের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ আস্থাহীনতা দূর করতে তারা সরকারের সহযোগিতা চান। আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এমডিদের সংগঠন বাংলাদেশ লিজিং এ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানিজ এ্যাসোসিয়েশনের (বিএলএফসিএ) চেয়ারম্যান ও ন্যাশনাল হাউজিং ফাইন্যান্স এ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ খলিলুর রহমান বলেন, কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্কটের কারণে পুরো খাতে সমস্যা হচ্ছে। এক ধরনের প্যানিক সৃষ্টি হয়েছে। মানুষ অর্থ তুলে নিচ্ছেন। ব্যাংকগুলোও অর্থ ফেরত নিচ্ছে। এ জন্য সঙ্কট তৈরি হয়েছে। আশা করছি, খুব দ্রুত আমরা সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে পারব।
×