ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মৌলভীবাজারের শেরপুরে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল

প্রকাশিত: ১১:৩৫, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯

মৌলভীবাজারের শেরপুরে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল

সংবাদদাতা, শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) থেকে ॥ শিল্পায়ন ও দেশী-বিদেশী বিনিয়োগের অফার সম্ভাবনা নিয়ে মৌলভীবাজারের শেরপুর স্থাপিত হচ্ছে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল। সিলেট বিভাগের মিলনস্থল মৌলভীবাজার সদর উপজেলার শেরপুরে ৩৫২.১২ একর জায়গার ওপর শ্রীহট্ট ইকোনমিক জোনের উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনের পর থেকেই ইকোনমিক জোন নিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও এ জেলার শিক্ষিত বেকাররা আশান্বিত হন। এখানে স্থাপিত কারখানার উৎপাদিত পণ্য প্রায় শতভাগই বিদেশে রফতানি করা হবে। এখানকার পণ্য রফতানি করে দেশের প্রতিবছর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হবে ৩৫২ কোটি ৬৯ লাখ ডলার, বাংলাদেশী মুদ্রায় যা প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। কারখানাগুলোয় সব মিলিয়ে প্রায় ৪৪ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) ও বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। বেজা জানায়, সিলেট, হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ জেলা বেষ্টিত মৌলভীবাজারের সদর উপজেলার শেরপুর গ্রামে ৩৫২ একর জমিতে শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শিল্পের বিকেন্দ্রীকরণের এ উদ্যোগটি বাস্তবায়নের কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে। এখানে শিল্প স্থাপনের জন্য ৬টি শিল্পগ্রুপকে জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ওই গ্রুপগুলো ২৫টি কারখানা করতে সর্বমোট বিনিয়োগ করবে ১৪০ কোটি ডলার (প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা)। তাদের দেয়া হয়েছে ২৩১ একর জমি। অঞ্চলের বাকি জমিতে করা হবে শিল্পের অন্যান্য অবকাঠামো ও বনায়ন। এছাড়া তৈরি করা হবে দৃষ্টিনন্দন একটি পর্যটনকেন্দ্রও। এখানে ডিবিএল গ্রুপের ফ্লামিঙ্গো ফ্যাশন ২০টি কারখানা করার জন্য ১৭০ একর জমি পেয়েছে। এ গ্রুপটি বিনিয়োগ করবে ১১৮ কোটি ডলার। ৩৮ হাজার ৪০০ জনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে এ গ্রুপের কারখানাগুলোয়। এখানে উৎপাদিত পণ্য পুরোটাই বিদেশে বিক্রি করা হবে। গ্রুপটির বার্ষিক রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৩৩ কোটি মার্কিন ডলার। ৫ কোটি ৪৮ লাখ ডলার বিনিয়োগের জন্য ৭ একর জমি পেয়েছে আয়েশা ক্লথিং কোম্পানি। তাদের একটি কারখানায় কাজ করবে ২১০০ মানুষ। উৎপাদিত পণ্য বিদেশে বিক্রি করে ৯ কোটি ৭০ লাখ ডলার বছরে আয় করবে প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া এখানে আসওয়াদ কম্পোজিট মিল ৭ একর, গ্রেটওয়ালস সিরামিক ২৫ একর, ডাবল গ্লেজিং ৩ একর এবং আবদুল মোনেম সিরামিক্স ২১ একর জমি বরাদ্দ পেয়েছে। প্রস্তাবনা অনুযায়ী শুধু গ্রেটওয়ালই দেশে পণ্য বিক্রি করবে। অন্যরা রফতানি করবে। বেজা কর্মকর্তারা জানান, পরিকল্পনানুযায়ী চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে শিল্প স্থাপনের কাজ শুরু হবে। আগামী বছরের জুন নাগাদ এখানকার কারখানা থেকে উৎপাদন শুরু হবে। বেজার চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী বলেন, প্রায় শতভাগ রফতানিমুখী শিল্প হবে শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল। এখানে ইতোমধ্যে ১৪০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব পাওয়া গেছে। বিদ্যুত, গ্যাস সংযোগের কাজ চলছে। অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে। আশা করছি, যথাসময়ে এটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। জানা যায়, এ অঞ্চলের কারখানাগুলো চালু হওয়ার পর স্থানীয়দের বেকারত্ব অনেকটা কমে আসবে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এখানে অনেকের কর্মসংস্থান হওয়ার সুযোগ রয়েছে। গ্যাস সংযোগ দিতে জালালাবাদ গ্যাস কাজ শুরু করেছে। গ্যাসভিত্তিক শিল্পের জন্য শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল হবে সবচেয়ে উৎকৃষ্ট স্থান। বিদ্যুতায়নের কাজও চলছে। এ বিষয়ে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এমএ রহিম শহিদ (সিআইপি) বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে সিলেটে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে আসছিলাম। অঞ্চল প্রতিষ্ঠা হলে সিলেট বিভাগে শিল্পের প্রসার ও প্রবাসীদের বিনিয়োগে আকর্ষণ বাড়বে বলে জানান তিনি। মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক জানান, মাটি ভরাটের কাজ চলছে। বেজার মাধ্যমে অধিগ্রহণ করা জায়গা ইতোমধ্যে লিজ দেয়া হয়েছে। এখানে এলাকার কয়েক হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। বিদেশীরা বিনিয়োগ করবেন, পাশাপাশি দেশী বিনিয়োগ বাড়বে। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের যে কয়টি রাজ্য সিলেটের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে, তারা যদি বিনিয়োগ করতে চায়, তা হলে আমরা একটি বড় মার্কেট পেতে পারি। সব কিছুই প্রায় শেষদিকে। সব কিছুই আমরা গুছিয়ে নিচ্ছি।
×