ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রিক্সাওয়ালাকে রিফাতের শেষ কথা-

প্রকাশিত: ১২:৫৯, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯

রিক্সাওয়ালাকে রিফাতের শেষ কথা-

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ বরগুনার আলোচিত হত্যাকাণ্ডের শিকার রিফাত শরীফকে হাসপাতালে নিয়ে যান ব্যাটারিচালিত রিক্সাচালক দুলাল। দুলালের সঙ্গেই রিফাতের শেষ কথা হয়। দুলালের বাড়ি বরগুনা সদর উপজেলার সদর ইউনিয়নের ফরাজীরপুল এলাকায়। তিনি জানান, ‘একটা ছেলে গায়ে রক্তমাখা, রক্ত ঝইর‌্যা পড়তেছিল। সে হাঁইটা আইসা আমার রিক্সায় উঠেই কইল, চাচা আমারে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়া যান।’ খবর বিডিনিউজের। সোমবার রিফাতকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে আসার পর বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসে। রিফাতের বাবা অভিযোগ করেছিলেন, মিন্নি তার স্বামী রিফাতকে নিয়ে হাসপাতালে যাননি, রিফাত একাই হাসাপতালে গিয়েছিলেন। কিন্তু হাসপাতালের সামনের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায় মিন্নিই রিফাতকে হাসপাতালে নিয়েছিলেন। মঙ্গলবার দুপুরে দুলালের বাড়ি গিয়ে জানা যায় তিনি ধান মাড়াইয়ের কাজে গিয়েছেন। বাড়ি থেকে একটু দূরেই ফরাজী বাড়ির সামনে রিক্সা চালক দুলালকে পাওয়া যায়। তিনি এ সময় ধান মাড়াইয়ের কাজে ব্যস্ত ছিলেন। পরিচয় জানার পর প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হন দুলাল। ঘটনার বিবরণে দুলাল বলেন, ‘ওইদিন কলেজ সড়কে খ্যাপ নিয়ে গিয়েছিলাম। মানুষের ভিড়ের কারণে আর সামনের দিক যাইতে পারি না। শুনলাম সামনে কারা যেন কারে মারতেছে। প্যাসেঞ্জারকে নামিয়ে দিয়ে আমি রিক্সা ঘুরাইয়া কেবল দাঁড়াইছি, এ সময় একটা ছেলে রক্তাক্ত অবস্থায় হাঁইট্টা আইসা আমার রিক্সায় উইঠাই কয়- চাচা আমারে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়া যান।’ দুলাল বলেন, ‘আমি দেখলাম গলা ও বুকের বামপাশ কোপে কাইট্টা রক্ত বাইর হইতেছে। হের জামাডা টাইন্না আমি গলা ও বুকে চাইপ্পা ধইরা হেরে কইলাম আপনে চাইপ্পা ধরেন, আমি চালাই। আমি হাসপাতালে যাওনের জন্য কেবল সিটে বসছি, চালামু ঠিক সেই মুহূর্তে একটা মেয়ে দৌড়ে রিক্সায় উইঠা ওই পোলাডারে ধইর‌্যা বসে। আমি তাড়াতাড়ি রিক্সা চালাইয়া হাসপাতালের দিকে যাই।’ দুলাল বলেন, রিফাত এক মিনিটের মতো ঘাড় সোজা করে বসেছিলেন, কিন্তু এরপর সেই মেয়েটির কাঁধে ঢলে পড়ে যান। আর ঘাড় সোজা করতে পারেননি। তাদের রিক্সার পাশাপাশি একটা লাল পালসার মোটরসাইকেলে দুজন ছেলে যাচ্ছিল। মিন্নি চিৎকার করে তাদের কাছে রক্ত থামানোর সাহায্য চাইছিলেন, কিন্তু ওরা সাড়া দেয়নি বলে দুলাল জানান। ‘আমার কাছে মিন্নি ফোন চায় তার বাড়িতে কল করে জানানোর জন্য, কিন্তু আমার ফোন নাই।’ দুলাল বলেন, পরে ওই মোটরসাইকেলের ছেলেদের কাছেও মিন্নি ফোন চান তার বাবার কাছে ফোন করার জন্য। কিন্তু তারা তাদের কাছে ফোন নেই বলে জানায়। দুলাল বলেন, ‘ওই ছেলেগুলো বলে-আমাদের কাছে ফোন নাই, তুমি হাসাপাতালে যাইতেছ যাও।’ দুলাল বলেন, ‘হাসপাতালের গেট থেকে ঢোকার সময় মিন্নি একজন লোককে ডাক দেন। রিক্সা থামানের সঙ্গে সঙ্গে ওই লোক দৌড়ে এসে রিফাতের অবস্থা দেখেই আমায় নিয়ে স্ট্রেচার আনতে যায়। আমি আর সেই লোক স্ট্রেচার নিয়ে এসে রিফাতকে রিক্সা থেকে নামিয়ে স্ট্রেচারে তুলে অপারেশন থিয়েটারে দিয়ে আসি।’এরপর রিফাতকে এ্যাম্বুলেন্স করে বরিশাল নিয়ে যাওয়ার পর পুলিশ এসে তার রিক্সার ছবি তুলে নেয় ও কাগজপত্র নিয়ে যায়। তার কাগজপত্র এখন পুলিশের কাছেই আছে বলে দুলাল জানান। মিন্নির ডাকে ছুটে এসেছিলেন যিনি ॥ হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজে ও রিক্সাওয়ালা দুলালের বর্ণনামতে রিক্সা থামতেই সাদা গেঞ্জি পরা একজন লোক দৌড়ে এসে স্ট্রেচার এনে রিফাতকে দ্রুত ওটিতে নিয়ে যান। তিনি আমিনুল ইসলাম মামুন। বরগুনা জেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি একই সঙ্গে এ্যাম্বুলেন্স ব্যবসায়ী। মামুনের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। মামুন বলেন, ‘মিন্নির ডাক শুনেই দ্রুত আমি ছুটে আসি। রিফাতের অবস্থা দেখে আমি দ্রুত রিক্সাচালক ভাইকে নিয়ে হাসপতালের জরুরী বিভাগ থেকে স্ট্রেচার নিয়ে আসি। এসময় রিফাত রিক্সায় মিন্নির কাঁধে ভর করে বসেছিল। আমি, রিক্সাচালক আর মিন্নি তিনজনে মিলে রিফাতকে ধরে স্ট্রেচারে তুলি। দ্রুত তাকে ওটিতে নিয়ে যাই। এ সময় ডাক্তারের লিখে দেয়া স্লিপ নিয়ে আমি তিনবার ফার্মেসি থেকে এক হাজার চারশ টাকার ওষুধ কিনে আনি। রিফাতের শরীর থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। কিছুতেই রক্তক্ষরণ বন্ধ করা যাচ্ছিল না।’ চিকিৎসক কোপের ক্ষতস্থানে গজ ও তুলা দিয়ে ব্যান্ডেজ বেঁধে দ্রুত বরিশাল নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন বলে জানান মামুন। তিনি বলেন, ‘আমি এ্যাম্বুলেন্স ঠিক করে গেটে নিয়ে আসি। এর মধ্যেই রিফাতের বন্ধু জনসহ অন্যরা সেখানে আসেন। মিন্নির চাচা সালেহ ও পরে মিন্নির বাবা কিশোরও চলে আসেন।’ পরে রিফাতকে এ্যাম্বুলেন্সে করে বরিশাল নিয়ে যাওয়া হয়। মিন্নি বারবার যাওয়ার জন্য চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তার চাচা সালেহ ও বাবা কিশোর যেতে দেননি বলে মামুন জানান।
×