ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

হাবিপ্রবিতে ছাত্রীর যৌন নির্যাতনকারী শিক্ষকের বহিস্কারসহ দাবিতে মানববন্ধন

প্রকাশিত: ০৭:৩৫, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯

হাবিপ্রবিতে ছাত্রীর যৌন নির্যাতনকারী শিক্ষকের বহিস্কারসহ দাবিতে মানববন্ধন

স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর ॥ দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি)’র শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রীকে যৌন নির্যাতনকারী শিক্ষক রমজান আলীর স্থায়ী বহিস্কারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। এ সময় ওই শিক্ষককে বাঁচানোর প্রচেষ্ঠাকারীদের বিচারেরও দাবি জানান তারা। বুধবার দুপুর ১২ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় গেটের সামনে দিনাজপুর রংপুর মহাসড়কে এই মানববন্ধনের আয়োজন করে হাবিপ্রবি প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরাম। এছাড়াও ব্যানার ও ফেস্টুন হাতে মানববন্ধনে অংশগ্রহন করে দিনাজপুর মহিলা পরিষদ, দিনাজপুর সামাজিক অনাচার প্রতিরোধ কমিটিসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। এ সময় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরামের সভাপতি ড. বলরাম রায়, সাধারন সম্পাদক হারুন-উর রশিদ, নাগরিক উদ্যোগের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ, সামাজিক অনাচার প্রতিরোধ কমিটির আহ্বায়ক শিক্ষক সফিকুল ইসলাম, নাট্যকার হারুন-উর রশিদ প্রমুখ। বক্তারা বলেন, ছাত্রীকে যৌন হয়রানী ও গৃহকর্মীর সাথে যৌন সম্পক স্থাপনের ঘটনায় উচ্চ আদালতের নির্দেশে গঠিত কমিটি ঘটনার সত্যত্বা পেয়েছে এবং তাকে চাকুরী থেকে স্থায়ীভাবে বহিস্কারের সুপারিশ করেছে। এরপরও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষক রমজান আলীকে বাচানোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাই এই ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষকের বহিস্কার ও তাকে বাচানোর প্রচেষ্টাকারীদের বিচার করার দাবি জানান বক্তারা। মানববন্ধন চলাকালীন সময়ে ২টি দাবি উপস্থাপন করে প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরাম। দাবিগুলো হলো- অতিদ্রুত যে কোন প্রকার অপকৌশলের প্রক্রিয়া গ্রহণ না করে রিজেন্ট বোর্ডের সভা/জরুরী সভা করে তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী শিক্ষক রমজান আলীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ী বহিস্কার ও একজন নীতি বিবর্জিত অস্থায়ী শিক্ষককে বাচানোর অপকৌশলে লিপ্ত প্রশাসনের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এ জন্য তারা শিক্ষামন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান। আর তা না হলে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারসহ সমগ্র দিনাজপুরবাসীকে সাথে নিয়ে হাবিপ্রবি প্রশাসনের বহিস্কারের দাবিতে কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়কে কলঙ্কমুক্ত করা হবে। ২০১৭ সালের ১৮ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রমজান আলীর বিরুদ্ধে পরীক্ষায় পাশের জন্য বাহিরের হোটেলে থাকার জন্য চাপ, স্ত্রীর অনুপস্থিতিতে বাড়িতে যাবার জন্য চাপ দেবার অভিযোগ করেন। এসব অনুরোধ না রাখলে পরীক্ষায় ফেল করার হুমকিও দেন রমজান আলী। লিখিত অভিযোগের সাথে রমজান আলীর সাথে মুঠোফোনে কথোপোকথনের রেকর্ড জমা দেন ওই ছাত্রী। ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাছে রমজান আলীর বিরুদ্ধে ওই ছাত্রীকে যৌন হয়রানীর অভিযোগ করেন তাঁর স্ত্রী। ছাত্রী ও রমজান আলীর স্ত্রীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের গঠিত যৌন নির্যাতন অভিযোগ গ্রহনকারী কমিটিকে তদন্তভার দেওয়া হয়। সাত সদস্যের কমিটি রমজান আলীর বিরুদ্ধে ছাত্রীকে যৌন হয়রানী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অবাসস্থলে গৃহকর্মীর সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের প্রমাণও পায় তদন্ত কমিটি। এরই প্রেক্ষিতে কমিটি রমজান আলীর বিরুদ্ধে চাকুরি থেকে বহিষ্কার করা এবং যতদিন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শাস্তির বিধান নিশ্চিত না করছে ততদিন সাময়িক বহিষ্কারের সুপারিশ করে। রিজেন্ট বোর্ডের সভায় ওই শিক্ষককে বহিস্কারের সিদ্ধান্ত গ্রহনের কথা থাকলেও গত এক বছরে ৫ টি রিজেন্ট বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু রমজান আলীর বিরুদ্ধে স্থায়ী বহিস্কার করা হয়নি। এরই মধ্যে ওই শিক্ষকের বহিস্কারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষকরা মানববন্ধন, অনশনসহ বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করেছে। শুধু তাই নয়, দিনাজপুরের বিভিন্ন সংগঠনও স্মারকলিপি প্রদান, মানববন্ধন কর্মসূচী, সংবাদ সম্মেলনসহ নানান ধরনের কর্মসূচী পালন করেছে। এসব কর্মসূচীতে অংশগ্রহণকারীরা রমজান আলীকে বহিস্কার না করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের গাফিলাতি ও মদদের অভিযোগ করেছেন। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিষ্ট্রার প্রফেসর ডা. ফজলুল হক বলেন, শিক্ষক রমজান আলীকে স্থায়ীভাবে বহিস্কারের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কোন ধরনের গাফিলাতি ছিল না। অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে তার স্ত্রী আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছিলেন। আর সেই মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত অভিযুক্ত শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত অব্যাহত থাকবে এবং মামলাটি নিষ্পত্তি হওয়া সাপেক্ষে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে এমন সিদ্ধান্ত হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম রিজেন্ট বোর্ডের সবায়। ইতিমধ্যেই অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে তার স্ত্রীর দায়ের করা মামলাটি মিমাংসা হয়েছে। তাই আগামী রিজেন্ট বোর্ডের সভায় বিষয়টি চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য উপস্থাপন করা হবে।
×