ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

সিন্ডিকেটের কবলে পেঁয়াজ

প্রকাশিত: ০৯:১৭, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯

সিন্ডিকেটের কবলে পেঁয়াজ

সবকিছুই চলছিল ঠিকঠাক। এমনকি ঈদ-উল-ফিতর এবং ঈদ-উল-আজহায় পেঁয়াজের সর্বোচ্চ চাহিদা থাকা সত্ত্বেও সামাল দেয়া গেছে পরিস্থিতি। তবে বর্তমানে হঠাৎ করে বিশেষ করে নিত্যপণ্যের মধ্যে পেঁয়াজের দামে দেখা যাচ্ছে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রবণতা। মূল্যবৃদ্ধির এই প্রবণতার পেছনে অবশ্য কারণও আছে। প্রতিবেশী দেশ ভারত অতি বৃষ্টি ও বন্যার অজুহাতে একেবারে কয়েক ধাপ বাড়িয়ে দিয়েছে পেঁয়াজের রফতানি মূল্য- প্রতি টন ৮৫০ ডলার। দুদিন আগেও যা ছিল ২৫০-৩০০ ডলার প্রতি টন। দাম বাড়ানোর কারণ হিসাবে সে দেশের সরকার বলছে অভ্যন্তরীণ বাজারের চাহিদা সামলানো। তবে এর জন্য সমূহ বিপাকে পড়েছে বাংলাদেশ। এক সঙ্গে পেঁয়াজের দাম প্রতি কেজিতে বেড়ে গেছে ২০-২৫ টাকা। বর্তমানে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭৫ টাকা। জরুরী পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার টিসিবির মাধ্যমে ট্রাকসেলে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করেছে। জরুরীভিত্তিতে পেঁয়াজ আমদানির চেষ্টা চলছে মিয়ানমার, চীন, মিসর ও তুরস্ক থেকে। অসাধু ব্যবসায়ী ও মজুদদারদের কারসাজিতে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না কিছুতেই। দেশে প্রতি মাসে পেঁয়াজের গড় চাহিদা এক লাখ ২০ হাজার টন। শীত মৌসুমে চাহিদা কিছু বেশি থাকে। রমজান ও কোরবানিতে পেঁয়াজের চাহিদা সর্বোচ্চ বেড়ে দাঁড়ায় আরও দেড়-দুই লাখ টন। এর ৬০ শতাংশ মেটানো যায় স্থানীয় উৎপাদন থেকে। বাকি ৪০ শতাংশ পেঁয়াজের চাহিদা মেটানো হয় প্রধানত ভারত থেকে আমদানি করে। দেশে প্রতিবছর পেঁয়াজের চাহিদা কম-বেশি ২৪ লাখ টন। উৎপন্ন হয় ১৮ লাখ টন। অতিরিক্ত চাহিদা মেটাতে হয় প্রধানত ভারত এবং আংশিক মিয়ানমার থেকে আমদানি করে। তবে বাস্তবতা হলো, ব্যবসায়ী মহল যদি আন্তরিক হন এবং সদিচ্ছা পোষণ করেন তাহলে আপাতত অভ্যন্তরীণ মজুদ ছেড়ে দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে পারেন। কেননা, এই পেঁয়াজ তারা আমদানি করেছেন আগের দামে। ভারতের বাড়তি দামের পেঁয়াজ এখনও দেশে এসে পৌঁছায়নি। আন্তর্জাতিক বাজারে চাল, গম, ভোজ্যতেল, চিনি, ডাল, গুঁড়াদুধ, ছোলা, লবণ ইত্যাদির দাম কমলেও দেশে বাড়ছে এসব নিত্যপণ্যের দাম। এর একটি আপাত কারণ হতে পারে অতিবর্ষণ ও বন্যা। তবে এবার তা তেমন হয়নি। এ নিয়ে নানা কারসাজি ব্যবসায়ীরা করে থাকে প্রতিবছরই। প্রভাব পড়েছে শাক-সবজি-তরকারির বাজারেও। এ থেকে যা বোধগম্য তা হলো, অতিবৃষ্টি ও বন্যাকে পুঁজি করে সুযোগ নিতে চাইছে ভোগ্যপণ্য আমদানিকারকসহ পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা। আর জনগণ এই ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের সামনে অনেকটা অসহায়, প্রায় জিম্মি হয়ে পড়েছে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির নানা কারণের মধ্যে অন্যতম হলো দুর্বল বাজার মনিটরিং, অসাধু আমদানিকারক, উৎপাদক, পরিবেশক, সরবরাহকারী, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী, অকার্যকর টিসিবি, সর্বোপরি ট্যারিফ কমিশন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রাজস্ব বোর্ডের মধ্যে আদৌ কোন সমন্বয় না থাকা। যে কারণে ভোক্তা ও ক্রেতাস্বার্থ অধিকার এবং সংরক্ষণ বরাবরই উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। সিন্ডিকেট তথা মুুষ্টিমেয় ব্যবসায়ী চক্রের বাজার একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ ও মুনাফা লুটে নেয়ার কথা প্রায়ই উচ্চারিত হয়। এফবিসিসিআই, ঢাকা চেম্বার, মেট্রো চেম্বারসহ ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো খুবই শক্তিশালী এবং সরকারের ওপর তাদের প্রভাব-প্রতিপত্তিও অস্বীকার করা যায় না। জাতীয় সংসদেও ব্যবসায়ীরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। ফলে ভোক্তা ও ক্রেতাস্বার্থ এক রকম উপেক্ষিত ও অনালোচিত থাকছে। ব্যবসা-বাণিজ্যে লাভ-ক্ষতি-মুনাফা ইত্যাদি থাকবেই। তবে এসব হতে হবে নীতি-নৈতিকতা, সততা ও নিয়মকানুনের আওতায়, যে ক্ষেত্রে আমাদের ঘাটতি রয়েছে বহুলাংশে। সরকার তথা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে এক্ষেত্রে কঠোর মনোভাব নিয়ে অগ্রসর হতে হবে বাজার মনিটরিং ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে।
×