ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জাসিন্তা আরেং

চাই নিরাপদ ফুটপাথ

প্রকাশিত: ০৯:২০, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯

চাই নিরাপদ ফুটপাথ

ব্যস্ততম শহরে ফুটপাথই পথচারীদের জন্য নিরাপদ এক উপায়। যার পথ ধরেই চলে সকল শিশু থেকে শুরু করে সকল শ্রেণী-পেশার লোক। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো সেই ফুটপাথই এখন অরক্ষিত এবং ঝুঁকিপূর্ণ। শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে গেলেই চোখে পড়ে বেদখল হয়ে যাওয়া ফুটপাথ। ঢাকা মহানগরীতেই জিপিও, পল্টন, দৈনিক বাংলা, গুলিস্তান, সদরঘাট, ফার্মগেট ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ ও জনবহুল এলাকায় ফুটপাথের চিহ্নটুকুও খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। কেননা এসব এলাকার ফুটপাথগুলো দখল করে আছে ব্যবসায়ী এবং হকারদের বিরাট গোষ্ঠী। শহরবাসী কিছুটা বাধ্য হয়েই ফুটপাথ ছেড়ে ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও মূলসড়কে যাতায়াত করছে। মূলসড়কে চলাচলকারীদের মনে সর্বদা জীবন ঝুঁকির আতঙ্ক বিরাজ করে যা মোটেই প্রত্যাশিত নয়। তাছাড়া কিছু-কিছু এলাকায় ফুটপাথের নিচে নর্দমা নিষ্কাশন, পরিষ্কার এবং মেরামতের কাজ দীর্ঘসময় ধরে চলতে থাকায় পথচারীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়। বর্তমানে কারওয়ান বাজার এলাকায় মেট্রোরেল এবং ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের ফলে জনসাধারণের চলাচলের একমাত্র যাতায়াত মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে ফুটপাথ। কিন্তু ফুটপাথের নিচে নর্দমা নিষ্কাশনের জন্য উপরের অংশ খোলা থাকায় যাতায়াত ব্যবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে বিদ্যালয় পড়–য়া ছাত্রছাত্রীদের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক। যেকোন সময় যে কেউ অসাবধানতার কারণে ছোট-বড় দুঘর্টনার শিকার হতে পারে। তাছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ এবং নর্দমার ঢাকনা খোলা স্থানগুলোতে সতর্কীকরণের কোন চিহ্ন বা বার্তা প্রদানের ব্যবস্থা করারও প্রয়োজন মনে করছে না কর্তৃপক্ষ। যা নগরবাসীর জন্য অত্যন্ত হতাশাব্যঞ্জক। এমতাবস্থায় ফুটপাথে সন্তানদের অনিরাপদ চলাচল নিয়েও অভিভাবকদের ভাবতে হচ্ছে। অন্যদিকে, এই ফুটপাথই হলো বাস্তুহারা মানুষদের মাথা গোজার এবং প্রশান্তিতে রাত যাপনের একমাত্র স্থান। কিন্তু এ আশ্রয়স্থলেই কিছু মানুষের জন্য অপ্রত্যাশিত মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেননা বেপরোয়া গাড়ি চালক এবং তাদের অসচেতনতা প্রায়শই কেড়ে নিচ্ছে ফুটপাথে নিদ্রিত এবং পথচারীদের জীবন। দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার ফলে অনেকেই গুরুতর আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করছে এবং হারাচ্ছে স্বাভাবিক জীবন যাপনের ক্ষমতা। এমন দুর্ঘটনা সেসব মানুষের কাছ থেকে শুধু তার কর্মক্ষমতাই কেড়ে নিচ্ছে না, বিকলাঙ্গ করছে মানুষটির ওপর নির্ভরশীল পরিবার-পরিজনদের। প্রায় প্রতিবছরই ফুটপাথে এমন দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন চলাচলকারীরা। ফুটপাথের মতো স্থানেও যদি পথচারীদের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে হয় তাহলে ফুটপাথ নির্মাণের কার্যকারিতা এবং উপকারিতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েই যায়। মূলসড়কে চলাচলে জীবন ঝুঁকি এড়াতে এবং স্বস্তিতে চলাচলের জন্যই ফুটপাথের নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে ফুটপাথ বেদখল এবং রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে জনসাধারণ রীতিমতো চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে এবং স্বস্তির চেয়ে অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নগরীতে ফুটপাথ বেদখলমুক্ত করতে সরকার, পৌরসভা ও সড়ক সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা লক্ষণীয়। যার ফলে প্রতিনিয়ত ব্যবসায়ীরা ফুটপাথজুড়ে অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলার সাহস পাচ্ছে। পুলিশের নিয়মিত উচ্ছেদ অভিযান চালানো সত্ত্বেও পুনরায় স্থাপনা গড়ে তোলার পিছনে কম-বেশি কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাই দায়ী। কেননা এসব নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ এবং ফুটপাথ বেদখলমুক্ত করে সর্বসাধারণের সুরক্ষা এবং নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করা নগর ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষেরই দায়িত্ব। তাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাবার আগে ফুটপাথ দখলমুক্ত করতে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষকেই যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রয়োজনে আইন প্রয়োগ করতে হবে যেন পুনরায় অবৈধ স্থাপনা গড়ে তুলতে না পারে। কেননা নিরাপদে ফুটপাথে চলাচল শুধু সকল নাগরিকের অধিকারই নয় বরং বর্তমান সময়ের জোরালো দাবি। জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয় থেকে
×