ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শিশু-কিশোর নাট্য ও সাংস্কৃতিক উৎসব শুরু কাল

প্রকাশিত: ১১:১৫, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯

শিশু-কিশোর নাট্য ও সাংস্কৃতিক উৎসব শুরু কাল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ‘চতুর্দশ জাতীয় শিশু-কিশোর নাট্য ও সাংস্কৃতিক উৎসব ২০১৯’ শুরু হচ্ছে আগামীকাল শুক্রবার। শিশুদের অংশগ্রহণে বৃহৎ এ উৎসবের আয়োজন করেছে যৌথভাবে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ও পিপলস থিয়েটার এ্যাসোসিয়েশন। নয় দিনব্যাপী এ উৎসবে দেশের ৬৪ জেলার সাংস্কৃতিক দল ও ৯৫টি শিশু নাট্য সংগঠনের দশ হাজারেরও বেশি শিশু অংশগ্রহণ করবে। রাজধানীর সেগুনবাগিচার শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা, চিত্রশালা, সঙ্গীত ও নৃত্যকলা কেন্দ্র মিলনায়তন ও একাডেমি প্রাঙ্গণসহ প্রতিদিন ৮টি ভেন্যুতে ৯টি জেলার ৮৫টি পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হবে। শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে আগামীকাল বিকেল ৪টায় উৎসব উদ্বোধন করবেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার, আইটিআই বিশ্বকেন্দ্রের সাম্মানিক সভাপতি রামেন্দু মজুমদার ও বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানের সেক্রেটারি জেনারেল কামাল বায়েজীদ। সভাপতিত্ব করবেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক ও পিপলস থিয়েটার এ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা লিয়াকত আলী লাকী। উদ্বোধনী দিন থাকবে আনন্দ র‌্যালি, আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। উৎসব উপলক্ষে একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার সেমিনার কক্ষে এ সংবাদ সম্মেলন হয় বুধবার বিকেলে। এতে উৎসবের বিস্তারিত তুলে ধরেন উৎসব আহ্বায়ক লিয়াকত আলী লাকী। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে উৎসব সঙ্গীত ‘আমরা সবাই মঞ্চকুঁড়ি নটনন্দনে ফুটব’ গানটি পরিবেশন করেন একাডেমির শিশু সঙ্গীত দল। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন একাডেমির সচিব বদরুল আনম ভুঁইয়া ও প্রশিক্ষণ বিভাগের পরিচালক সুশান্ত কামার’সহ একাডেমির কর্মকর্তা কর্মচারী এবং পিপলস থিয়েটার এ্যাসোসিয়েশনের সদস্যবৃন্দ। লিয়াকত আলী লাকী বলেন, শিশুদের নিয়ে প্রায় ৩২ বছর যাবত কাজ করছি। আমি থেমে থাকিনি। আমাদের লক্ষ শিশুদের মানসিক বিকাশ ঘটানো। আমি মনেকরি শিশুদের বিকশিত না করে দেশ এগুতে পারে না। সংস্কৃতি আমাদের বাহন। আমরা সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মধ্যদিয়ে চাইব শিশু নির্যাতন যেন নির্মূল হয়। দেশে একটি শিশুবান্ধব সমাজ যেন প্রতিষ্ঠা হয় এটাই আমাদের কাম্য। আমরা চাই প্রত্যেক শিশুকে নিয়ে তাদের মা-বাবা উৎসবে আসুক। উৎসবের বিস্তারিত তুলে ধরে লিয়াকত আলী লাকী বলেন, সারাদেশ থেকে আগত শিশু-কিশোররা পরিবেশন করবে নাটক, একক অভিনয়, স্কুল থিয়েটার, সঙ্গীত, নৃত্য, আবৃত্তি, চিত্রাঙ্কন এবং ৭ মার্চের ভাষণ। আগত শিশুদের জন্য থাকবে এ্যাক্রোবেটিক, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী ও কর্মশালা, নাট্য কর্মশালা, পাপেট থিয়েটার, ঐতিহ্যবাহী পুতুলনাট্য, পাপেট নির্মাণ কর্মশালা, জাদু প্রদর্শনী, বঙ্গবন্ধু পুষ্পকানন নির্মাণ, মঞ্চকুঁড়ি পদক, তনয় শিশু নাট্য পদক, শিশু আনন্দমেলা এবং বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের পরিবেশনা। শিশুদের নিয়ে শিল্পকলা একাডেমির কর্মকা- তুলে ধরে লিয়াকত আলী লাকী বলেন, শিশুরাই জাতির আশা ও ভবিষ্যত। শিক্ষা অর্জনের পাশাপাশি শুদ্ধ সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে শিশুরা পরিপূর্ণ মানুষরূপে গড়ে উঠতে পারে। আজকের শিশুরাই ২০৪১’র উন্নত বাংলাদেশ গড়তে ভূমিকা পালন করবে। এই উৎসবের মাধ্যমে শিশু নেতৃত্ব গড়ে উঠবে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি শিল্প সংস্কৃতি ঋদ্ধ সৃজনশীল মানবিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষে নিয়মিত কাজ করে চলেছে। বর্তমানে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির কর্মকাণ্ড ৬৪ জেলা থেকে ৪৯৩ উপজেলা পর্যন্ত সম্প্রসারিত। পিপলস থিয়েটার এ্যাসোসিয়েশন দীর্ঘদিন শিশুদের মননশীলতার বিকাশে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছে। সংগঠনটি ইতোপূর্বে সারাদেশে শিশুনাট্য কর্মশালা, জাতীয় শিশুনাট্য উৎসব ও ৭টি বিভাগে বিভাগীয় শিশুনাট্য উৎসব আয়োজন করেছে। ‘বিকশিত শিশু, আলোকিত আগামী’ এ প্রত্যয় নিয়ে পিপলস থিয়েটার এ্যাসোসিয়েশন জন্মলগ্ন থেকেই সারাদেশে শিশুনাট্য আন্দোলন পরিচালনা করে আসছে। পিপলস থিয়েটার এ্যাসোসিয়েশন ও এর সহযোগী প্রায় ২৫০টি শিশু নাট্যদল সারাদেশে নাটক মঞ্চায়নসহ নিয়মিতভাবে নাট্যচর্চা করে আসছে। শুধু দেশে নয় আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের শিশু নাটক এখন প্রায় সুপ্রতিষ্ঠিত। এক্ষেত্রে সংগঠনটি এককভাবে ২৮ বছর ধরে নিরলসভাবে কাজ করে আসছে। এই সংগঠন ১৯৯৫ থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত ১৩টি ‘জাতীয় শিশু-কিশোর নাট্য উৎসব’, ১টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী শিশু-কিশোর নাট্যোৎসব’ ও ১টি ‘আন্তর্জাতিক শিশু-কিশোর নাট্যোৎসব’ আয়োজন করেছে। বিভিন্ন জেলায় পরিচালনা করেছে আঞ্চলিক শিশু নাট্য কর্মশালা এবং বিভাগীয় শিশু-কিশোর নাট্যোৎসব। এ যাবত প্রায় ৭০টি আন্তর্জাতিক শিশু নাট্যোৎসবে অংশগ্রহণ করেছে পিপলস থিয়েটার এ্যাসোসিয়েশনভুক্ত বিভিন্ন শিশু নাট্যদল। শিশুনাট্য কর্মকাণ্ডে উল্লেখযোগ্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘শিশু নাট্য পদক’ ছাড়াও পিপলস থিয়েটার এ্যাসোসিয়েশন মেধাবী শিশু-কিশোরদের জন্য ‘মঞ্চকুঁড়ি’, ‘মঞ্চমুকুল’ ও ‘মঞ্চসেনা’ পদক প্রদান করছে। অধুনা সারাদেশে চলছে স্কুল পর্যায়ে শিশুনাট্য কর্মসূচী।
×