ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

যুব সমাজ আরও কর্মদীপ্ত হোক

প্রকাশিত: ০৮:৫০, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৯

যুব সমাজ আরও কর্মদীপ্ত হোক

দেশের উন্নয়ন যখন সম্মুখের দিকে তখন কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নানাবিধ সামাজিক উন্নয়ন কর্মকা- গ্রহণ করেছেন। তবে সমস্যা হলো, এক শ্রেণীর লোক দুর্নীতি করছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সব সময়েই দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোরতা প্রদর্শন করে আসছেন। এ ক্ষেত্রে তার দৃষ্টিভঙ্গি ইতিবাচক। তবে কিছু সুবিধাবাদী গোষ্ঠী যারা চানক্য নীতিতে বিশ্বাস করে, গিরগিটির মতো রং পাল্টায় তারা সব সময়ই কোন না কোন সুযোগ পেলে আত্মবিধ্বংসী পথে নিমজ্জিত হয়। উদ্যোক্তা তৈরির জন্য বর্তমান যুগে শর্ট-কাট কোন পন্থা নেই। কোন পান দোকানদার কিংবা বুটওয়ালাকেও প্রতিযোগিতামূলক বাজার ব্যবস্থায় চলতে ফিরতে সব সময়ে অগ্র-পশ্চাৎ বিবেচনা করতে হয়। উদ্যোক্তা কেবল একটি বিশেষ গোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। কেননা বিশ্বায়নের এ যুগে যদিও টেকনো এন্টারপ্রিউনিয়র শিপের মূল্য বেশি পাশাপাশি সামাজিক উদ্যোক্তাও প্রয়োজন। এক্ষণে সামাজিক উদ্যোক্তা তৈরির মাধ্যমে আয়বর্ধক প্রকল্পের আওতায় গ্রামীণ অঞ্চলে নারীদের ক্ষমতায়ন হচ্ছে। নারীর এ ক্ষমতায়ন অবশ্যই ইতিবাচক দিক। এটি হচ্ছে এনজিও সেক্টরের মাধ্যমে। তবে এই এনজিও সেক্টরের কর্মকা- পরিচালিত হয়ে থাকে অপ্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোয়। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে বিভিন্ন আয়বর্ধক প্রকল্পের কাজ পরিদর্শন করতে গিয়ে দেখেছি দুটো শ্রেণী তৈরি হচ্ছে। যারা বুদ্ধিমতী তারা একাধারে গবাদি পশু, মৎস্য চাষ, হাস-মুরগি, টার্কি ও তিতির, কবুতর পালন ও সবজি চাষ করছে। কোন কোন ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর আওতায় না থাকায়, এরা মাসে এক থেকে পাঁচ লাখ টাকা আয় রোজগার করলেও কর ব্যবস্থার আওতায় আসছে না। অন্যদিকে ব্যাংকগুলো নতুন উদ্যোক্তা তৈরিতে তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছে না, বিশেষত গ্রামীণ অর্থনীতিতে। আজকে বাংলাদেশ যে গ্রামীণ উন্নয়নের স্থির চিত্রের কারণে বিশ্বব্যাপী রোল মডেল হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে তা মূলত অপ্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোয় নেত্রীর দেখানো পথকে কেন্দ্র করে। এদিকে নতুন যে ধনবান শ্রেণীটি গ্রামীণ অঞ্চলে তৈরি হচ্ছে- সেখানে কিন্তু আরেকটি শ্রেণীও তৈরি হচ্ছে যারা ধনবান শ্রেণীর দ্বারা শোষিত হচ্ছে। এরা দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে কাজ করে থাকে, এদের সামাজিক উদ্ভাবনী শক্তি অত্যন্ত স্বল্প। ফলে এ অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর আওতায় ব্যাংকগুলোর শাখাসমূহকে কাজ করতে হবে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, ব্যাংকগুলো দায়সারা গোছের নীতি দ্বারা তরুণ ও নারী উদ্যোক্তা তৈরির কথা বলে। কিন্তু বাস্তবে তরুণ ও নারী উদ্যোক্তা তৈরি করতে গেলে ওয়ান স্টপ সার্ভিসের আওতায় ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। লাইসেন্স করতে গেলে কিংবা কোন চেম্বারের সদস্য হতে গেলে অথবা ভূমি কার্যক্রম করতে গেলে এমনকি ব্যাংকে বন্ধক রাখতে গেলে এত বেশি স্তরে লেনদেন, নিয়মের কঠোর বেড়াজাল অথবা হিডেন কস্ট একজন উদ্যোক্তা প্রার্থী নিরুৎসাহিত করে থাকে। অথচ ব্যাংকসমূহ তরুণ ও নারী উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ শর্তে সুস্পষ্ট নীতিমালায় আওতায় একটি স্থান থেকে সার্ভিস দিতে পারে। অনিয়মকে কখনও নিয়মে আনা ঠিক নয়। অথচ ব্যাংকাররা অনিয়ম করতে করতে দেশে আজ ঋণ খেলাপীর হার বৃদ্ধি করে চলেছে। ব্যাংকারদের কেউ কেউ ধরা পড়লেও ঋণ খেলাপীরা বহাল তবিয়তে বিদ্যমান। আর তাই তো হলমার্ক কেলেঙ্কারির নয় বছর পর কোন ধরনের ঋণের অর্থ-পরিশোধ না করে বরং আবার ঋণ চাচ্ছে। এ তো দেখি দুষ্টু লোকদের কর্মকা-। এদিকে সামাজিক উদ্যোক্তারা সবাই যে মুনাফাবিহীন হবেন তা কিন্তু নয়। বরং ড. মুহম্মদ ইউনূস মিথ্যে বলেছেন। তার প্রতিষ্ঠানের দইতেও তারা মুনাফা করে যদিও বলে থাকে মুনাফা নাকি তারা মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে ব্যয় করে- যা অর্ধ সত্য। তার অনেক অনুসারী দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কেউ কেউ ক্ষমতাতন্ত্রের কাছাকাছি থাকায় দশ টাকার হিসাব খুলে এক ধরনের প্রহেলিকা করেছিল বলে বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহোদয়রা বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ করেছেন- যা বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। যুব সমাজকে কাজে লাগাতে হলে প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক উভয় কাঠামোতে নীতির বাস্তবায়ন দরকার। যে কোন ঋণ দেয়ার আগে সুস্পষ্ট নীতিমালা থাকা দরকার। ঋণ যেমন সহজলভ্য হয় তেমনি সহজেই ঋণের কিস্তি আদায় করা যায়। সরকার ব্যবসা সহজীকরণ নিয়মনীতি করতে চাচ্ছে। এক্ষেত্রে যে সূচকগুলো আছে তা সহজতর করার কোন ধরনের বিকল্প নেই। কিন্তু দীর্ঘদিনের যে দুর্নীতি, তা রাতারাতি কমানো সম্ভব নয়। বরং অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, গ্রেশামস ল’-এর কথা-ভাল টাকা কালো টাকা দ্বারা বিতাড়িত হয়। ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় কতটুকু অদক্ষ হলে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রায় পঁচিশ দিন সাইবার ক্রাইমের ঘটনা চাপা দিতে পারে। এ জন্য আসলে দেশের দুর্ভাগ্য বলাই বাহুল্য। এদিকে টেকনো এন্ট্রিপ্রিউনিয়র তৈরির জন্য সরকার আইসিটি মন্ত্রণালয়ের আওতায় স্টার্ট আপভেঞ্চার শুরু করছে। এটি ভাল কাজ। সুষ্ঠু নিয়মনীতির মাধ্যমে উদ্যোক্তা তৈরি করা এবং বিতরণকৃত ঋণের টাকা আদায় করার সহজ পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। এক্ষেত্রে দক্ষ জনশক্তি দরকার। কেবল শর্ট কোর্স দিয়ে কখনও উদ্যোক্তা হয় না। সবাই বিল গেটস নয়। আর তাই দীর্ঘ মেয়াদী শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে উদ্যোক্তা বিশেষত বিজ্ঞানমনস্ক উদ্যোক্তা তৈরি করতে হবে। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য নিয়ে মানবিক কল্যাণ ও প্রযুক্তির ব্যবহারে মেলবন্ধন ঘটাতে চেষ্টা করছে। তার এ উদ্যোগ দেশ ও জাতির কল্যাণে এক নবতর দিগন্তের সূচনা করছে। তবে ভূঁইফোড় গোষ্ঠী যেন ব্যক্তিগত লোভ-লালসায় তার সদিচ্ছাকে ভুলপথে পরিচালিত না করতে পারে সে জন্য সজাগ থাকতে হবে। আজ প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে কর্মোদ্যমী পুরুষ-নারী দেশের বিভিন্ন প্রান্তরে তৈরি করা এবং যোগাযোগের মেলবন্ধনে অবাধ তথ্যপ্রবাহ কাজ করে থাকে। এ যাত্রা পথে সরকারের সদিচ্ছার বাস্তবায়নযোগ্য। আসুন, আমরা সুন্দরের সাধনা করি, অহমিকাবোধ ভেঙ্গে সত্যের জয়গান করি, প্রগতির পথে এগিয়ে চলুক দেশ যুব সমাজ কর্মদীপ্ত হওয়ার সুযোগ পাক! দেশের উন্নয়নে যুব সমাজের মেধা কাজে লাগুক। লেখক : শিক্ষাবিদ ও অর্থনীতিবিদ [email protected]
×